ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সাকিবের জাদুতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:১৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৮, ২০২১

সাকিবের জাদুতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

হারারেতে ৩ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নির্ধারিত ৫০ ওভারের ৫ বল হাতে রেখে তিন উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। এতে ২-০ তে সিরিজ জয় নিশ্চিত হলো টাইগারদের। নিশ্চিত পরাজয়ের ম্যাচে সাকিব আল হাসানের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করল টাইগাররা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় খেলায় ৩ উইকেটে জয় পায় বাংলাদেশ দল। এই জয়ে ১০৯ বলে অপরাজিত ৯৬ রান করেন সাকিব। ম্যাচসেরা সাকিব বোলিংয়ে ১০ ওভারে ৪২ রানে নেন ২ উইকেট। এ ম্যাচে দীর্ঘ এক যুগ পর জিম্বাবুয়েতে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল টাইগাররা। সঙ্গে ওয়ানডে সুপার লিগের মূল্যবান আরও ১০ পয়েন্ট পেয়ে গেল বাংলাদেশ। যার সবই আসলো সাকিবের হাত ধরে।

রোববার টস জিতে শুরুতে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৪০ রান তুলেছে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। জবাবে ৭ উইকেট হারিয়ে সাকিব বীরত্বে জিম্বাবুয়েকে হারায় বাংলাদেশ।

২৪১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই সাবধানী খেলেছেন লিটন-তামিম। আগের ম্যাচে শূণ্য রানে আউট হওয়া তামিম ইকবাল সাবলীলভাবেই ব্যাট করছিলেন। কিন্তু দশম ওভারে সিকান্দার রাজার চমৎকার ক্যাচে ফিরলেন তামিম। অধিনায়কের বিদায়ে ভাঙে ৩৯ রানের জুটি। ৩৪ বলে চারটি চারে ২০ রান করেন তামিম। তামিম ইকবালের পর সাজঘরে ফিরলেন লিটন দাস। রিচার্ড নাগারাবার শর্ট বল পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন লিটন। প্রথম ওয়ানডেতে ১০২ রান করা লিটন এবার করলেন ৩৩ বলে ২১ রান।

তৃতীয় উইকেটে সাকিবকে সঙ্গ দিতে ব্যাট হাতে নেমে আবারো ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। মাত্রে ২ রান করেই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলেন তিনি। লুক জংওয়ের অফস্টাম্পের বাইরের বল চালাতে গিয়ে পয়েন্টে মাধবেরের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন মিঠুন। মিঠুনের বিদায়ে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন টাইগার এই ব্যাটসম্যান। নিজের শেষ ৩ ওয়ানডেতে যথাক্রমে ৬,০,১৯ রান করেছেন তিনি।

দলীয় ৭৫ রানে বাংলাদেশ হারালো চতুর্থ উইকেট। রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরলো মোসাদ্দেক। চার উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দল যখন খাদের কিনারায়, তখন দলকে উদ্ধার করে এগিয়ে নিচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ কিন্তু মুজারাবানির বলে চাকাভার তালুবন্দী হয়ে ফিরলেন টাইগারদের এই ভরসার প্রতীক। ব্যক্তিগত ২৬ রান করে সাকিবের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি।

এরপর সিকান্দার রাজার বলে বাউন্ডারি মেরে ৪৭ রান থেকে সাকিব পৌঁছে গেলেন ফিফটিতে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের যা তার ৪৯তম ফিফটি। ৬টি বাউন্ডারিতে ৫৯ বলে ফিফটি পেয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ১৭৪ দিন পর সাকিবের ব্যাট থেকে আসলো এই ফিফটি।

সাকিবের ফিফটির পর বিপদে ফেলে ফিরলেন মিরাজও (৬)। মাধভেরের বল সুইপ করে ডিয়োন মেয়ার্সের তালুবন্দী হন তিনি। ৬ উইকেট হারানোর পর সাকিব-মিরাজে ভালো কিছুর আশা দেখলেও খামখেয়ালিতে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলেন আফিফ হোসেন। সিকান্দার রাজার বলে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পের শিকার হলেন তিনি। ২৩ বলে ১৫ রান করেন আফিফ।

এরপর একাই খেলে যান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। সাইফউদ্দিনকে নিয়ে দলকে দেখান জয়ের স্বপ্ন। শেষ পর্যন্ত অষ্টম উইকেট জুটিতে সাইফউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে ৬৯ রানের অপ্রতিরোধ্য পার্টনারশিপ গড়ে দলকে জয় এনে দেন সাকিব। ব্যাট হাতে ১০৯ বলে ৮ চারে ৯৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। এদিকে সাইফউদ্দিন অপরাজিত থাকেন ২৮ রানে।

জিম্বাবুয়ের হয়ে দুটি উইকেট নেন লুক জঙ্গুয়ে, একটি করে উইকেট শিকার করেন মুজারাবানি, এনগারাভা, মাধেভেরে ও সিকান্দার রাজা।

এর আগে তরুণ পেসার শরিফুল ইসলামের বিধ্বংসী বোলিং সত্ত্বেও বাংলাদেশের সামনে ৯ উইকেটে ২৪০ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করিয়েছে জিম্বাবুয়ে।

জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৬ রান করেছেন ওয়েসলি মাধভিরে। বাংলাদেশের হয়ে পেসার শরিফুল ইসলাম সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন। সাকিব আল হাসান নিয়েছেন ২ উইকেট।

টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় জিম্বাবুয়ে। আগে ফিল্ডিং করতে নেমে প্রথম ওভারেই দলকে উল্লাসে মাতিয়েছেন ডান হাতি পেসার তাসকিন আহমেদ। তার করা প্রথম ওভারের শেষ বলে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে দাঁড়ানো আফিফ হোসেন ধ্রুবর হাতে ধড়া পড়েছেন ডানহাতি ওপেনার তিনাশে কামুনহুকামুই।

টিমসেন মারুমার ইনজুরির কারণে এই ম্যাচের মূল একাদশে জায়গা পেয়েছেন কামুনহুকামুই। কিন্তু সুযোগটি কাজে লাগাতে পারলেন না তিনি। আউট হওয়ার আগে ৫ বল খেলে করতে পেরেছেন মাত্র ১ রান। সেই রানটিও এসেছিল আউটসাইড এজ থেকে।

সাইফউদ্দিনের করা চতুর্থ ওভারে জোড়া বাউন্ডারিতে ১০ রান তুলে ড্রেসিংরুমে ইতিবাচক বার্তা দেন আগের ম্যাচে দলের পক্ষে একমাত্র হাফসেঞ্চুরিয়ার চাকাভা। তাসকিনের করা পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে মিড অনে মাহমুদউল্লাহ ও ডিপ থার্ড ম্যানে মারুমানির ক্যাচ ছেড়ে দেন সাইফউদ্দিন।

অবশ্য জোড়া জীবন পেয়েও কিছুই করতে পারেননি মারুমানি। ষষ্ঠ ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে আসেন মিরাজ। প্রথম চার বল খেলেন চাকাভা। পঞ্চম বলে স্ট্রাইক পেয়েই বড় শটের চেষ্টা করেন মারুমানি। কিন্তু বল তার ব্যাট ও পা হয়ে আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। ফলে সমাপ্তি ঘটে ১৮ বলে ১৩ রানের ইনিংসের।

মাত্র ৩৩ রানে জোড়া উইকেট পতনের পর উইকেটে আসেন টেলর। শুরু থেকেই খেলতে থাকেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে। বিশেষ করে সাকিবের ওভারে ইনসাইড আউট শটে বাউন্ডারি কিংবা শরিফুল ইসলামের ওভারে ফ্লিক শটে ছক্কা মেরে নিজের কর্তৃত্বেরই জানান দেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক।

টেলরের আধিপত্য বিস্তার করা ব্যাটিংয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিটি এগুচ্ছিল পঞ্চাশ রানের দিকে। তবে ইনিংসের ১৬তম ওভারে নিজের চতুর্থ ওভার করতে এসে সরাসরি বোল্ড করে আগের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের একমাত্র হাফসেঞ্চুরিয়ান চাকাভাকে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন সাকিব। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলিয়ে বল স্ট্যাম্পে আঘাত করান তিনি। আউট হওয়ার আগে ৩২ বলে ২ চারের মারে ২৬ রান করেছেন চাকাভা।

এরপরই প্রতিরোধ গড়ে দাঁড়িয়ে যান ব্রেন্ডন টেলর এবং ডিওন মায়ার্স। টেলর ৪৬ রান করার পর দুর্ভাগ্যজনক হিটআউট হন। বোলার ছিলেন শরিফুল ইসলাম। ডিওন মায়ার্সও বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন। ৫৯ বলে ৩৪ রান করে মায়ার্স আউট হন সাকিব আল হাসানের বলে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ তুলে দেন মায়ার্স।

এরপর হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন মাধভিরে। শরিফুল ইসলামের বলে তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ৫৬ করে। সিকান্দার রাজা কিন্তু মাধভিরের সঙ্গে ভালো একটা জুটি গড়েন। ৪৪ বলে তিনি করেন ৩০ রান। লুক জংউই ৮ রান করে আউট হন। তেন্দাই চাতারা ৪ এবং রিচার্ড এনগারাভা অপরাজিত থাকেন ৭ রান করে।

১০ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে ক্যারিয়ারসেরা ৪ উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। ২ উইকেট নেন সাকিব আল হাসান, ১টি করে উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এবেং তাসকিন আহমেদ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

জিম্বাবুয়ে: ৫০ ওভারে ২৪০/৯ (কামুনহুকামউই ১, মারুমানি ১৩, চাকাভা ২৬, টেইলর ৪৬, মায়ার্স ৩৪, মাধেভেরে ৫৬, রাজা ৩০, জঙ্গুয়ে ৮, মুজারাবানি ০, চাতারা ৪*, এনগারভা ৭*; তাসকিন ১০-০-৩৮-১, সাইফ ১০-০-৫৪-১, মিরাজ ৭.২-০-৩৪-১, শরিফুল ১০-০-৪৬-৪, সাকিব ১০-০-৪২-২, মোসাদ্দেক ১.৪-০-৭-০, আফিফ ১-০-১১-০)

বাংলাদেশ: ৪৯.১ ওভারে ২৪২/৭ (তামিম ২০, লিটন ২১, সাকিব ৯৬*, মিঠুন ২, মোসাদ্দেক ৫, মাহমুদউল্লাহ ২৬, মিরাজ ৬, আফিফ ১৫, সাইফ ২৮*; মুজারাবানি ৯.১-১-৩১-১, চাতারা ৭-১-৫২-০, জঙ্গুয়ে ৮-০-৪৬-২, এনগারাভা ৯-১-৩৩-১, মাধেভেরে ১০-০-৩৯-১, রাজা ৬-০-৩৩-১)

জয়ী: বাংলাদেশ

সিরিজ: ২-০

ম্যাচসেরা: সাকিব আল হাসান

 
Electronic Paper