ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

স্বপ্ন ৩০০ উইকেট

ক্রীড়া প্রতিবেদক
🕐 ১:২৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ২১, ২০২০

তাইজুল ইসলাম। বাঁ-হাতি স্পিনার। যার দখলে রয়েছে একদিনের ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক উইকেট লাভ করার কৃতিত্ব। ২০১৫ অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে মাত্র একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে। এরপর লম্বা সময় সুযোগ মেলেনি জাতীয় দলে। ২০১৯ বিশ্বকাপও খেলা হয়নি তার। সাকিব আল হাসান এক বছরের জন্য আইসিসি কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়ায় জাতীয় দলের ফেরার সুযোগটা পুনরায় মিলে তার।

ভারত, পাকিস্তান অতঃপর হোমে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলে ছিলেন। খেলেছেনও দারুণ। অথচ এর আগে তার ফেরা নিয়ে ছিল রাজ্যের শঙ্কা। পারবেন তো তাইজুল? কারণ ওই হ্যাটট্রিক ছাড়া গত ছয় বছরের ক্যারিয়ারে একদিনের ক্রিকেট খেলেছেন মাত্র নয় ম্যাচ। তবে বল হাতে হতাশ করেননি। আর তাই তো তাইজুলকে এবার লাল বলের পাশাপাশি সাদা বলেও চুক্তিবদ্ধ করল বিসিবি। হঠাৎ তাকে ঘিরে বিসিবির এমন ভাবনা নিয়ে তিনি নিজেও কিছুটা অবাক।

নিশ্চয় পারফর্ম করেছেন বলেই নির্বাচকরা তার দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন। তার এই ফর্মে ফেরার রহস্যটাও জানালেন তাইজুল। বল করতে গিয়ে যে ভেরিয়েশনের দরকার হয় সেটা আগে তার ছিল না। আর তাই তাকে ব্যাটসম্যানরা সহজেই ধরে ফেলতে পারতেন। কিন্তু এবার আর সেটা হচ্ছে না। বিসিবির স্পেশাল কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টরির ছোঁয়াতে বদলে গেছে তার সব কিছু।

আর সেটি তিনি শোনালেন, ‘আগে আমার বোলিংয়ের গতি ছিল একইরকম। ওয়ানডেতে একই গতি থাকলে ভালো করা কঠিন। আমার বোলিংয়ে কাজও ছিল কম। ভেট্টরি আসার পর আমি এ দিকটায় কাজ করা শুরু করেছি। সুনিল যোশি যখন ছিলেন (স্পিন বোলিং কোচ), আমি তার সঙ্গে মূলত টেস্ট বোলিং নিয়েই কাজ করেছি। ভাবনা ওদিকেই ছিল শুধু। ভেট্টরি আসার পর আমার বোলিং দেখে বললেন, তুমি এই বোলিং দিয়েই সব ফরম্যাটে খেলতে পারবে, শুধু কিছু ফাইন টিউন করতে হবে। তার কথা থেকেই মূলত আমার ভাবনায় বদল এলো। যদি মূল বোলিং একই রেখে সব ফরম্যাট খেলা যায়, তাহলে কেন চেষ্টা করব না! তার সঙ্গে কিছু কাজ করেছি আমি, বিশেষ করে পেস ভেরিয়েশন নিয়ে। সেগুলো খুব সাহায্য করেছে। এখন আমার পেস ভেরিয়েশন ও অন্য কিছু জিনিস ভালো হচ্ছে আগের চেয়ে।’

তাইজুল বোলিংয়ের ভেরিয়েশনের মূল ব্যাখ্যাটাও তুলে ধরলেন এই ভাবে, ‘দেখুন বোলিংবৈচিত্রে টুকটাক অনেক কিছুই আছে। যেমন অ্যাকশন একই রকম রেখে পেস ভেরিয়েশন করার জন্য বডি পজিশন কেমন হবে, বডির অ্যাঙ্গেল, হাত কোথায় থাকবে, মাথার পজিশন, বলের গ্রিপ, বল রিলিজ করার পজিশন, এসব নিয়েই কাজ হয়েছে। এখনো চলছে কাজ।’

তবে এখন আর আগের মতো ফ্লাইট বল দেন না। তার ফ্লাইট বলে ব্যাটসম্যানকে ছক্কা মারতে বেশ সহায়তা করে। এবার ফ্লাইট করলেও বোলিংয়ের ভেরিয়েশনের কারনে ব্যাটসম্যানরা এখন আর আগের মতো সুযোগ পায় না। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে তো একই পেসে বল করতাম। জায়গা ও ফ্লাইট হয়তো ঠিকই থাকত, কিন্তু গতিটা সহজে অনুমান করা যেত। ব্যাটসম্যান মারতে চাইলে তখন তার জন্য সহজ হতো। টেস্টে ব্যাপারটি অন্যরকম। কিন্তু ওয়ানডেতে চলবে না ওই বোলিং দিয়ে। ব্যাটসম্যান দ্রুত ধরে ফেলত, সেভাবেই খেলত। এখন ব্যাপার আলাদা। বোলিংয়ে বৈচিত্র্য বেড়েছে, ব্যাটসম্যান তাই একটু ভাববে এখন শট খেলতে গেলে। একটা পর্যায়ে আসতে পেরেছি আমার মনে হয়। টেস্টেও পেস ভেরিয়েশন বেড়েছে। গত ভারত সফর থেকে শুরু করে, এই জিম্বাবুয়ে সিরিজেও, ৭৮-৭৯ থেকে ৯২ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করেছি। আগে গতির পার্থক্য এত বেশি থাকত না। এই জায়গাগুলোতে আমি উন্নতি করার চেষ্টা করেছি।’

তাইজুলের লক্ষ্য ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলা এবং টেস্টে ৩০০ উইকেট লাভ করা, ‘স্বপ্ন তো অনেক থাকে। সব ক্রিকেটারের থাকে। আপাতত চাই, ক্যারিয়ার যত লম্বা করা যায়। ক্রিকেট আমার ভালোবাসার খেলা, আরও অনেক দিন খেলতে চাই। তবে যেদিন দেখব শরীর আর পেরে উঠছে না, নিজেই ছেড়ে দেব। ক্রিকেট ছাড়ার পর, এখন যা মনে হয়, সুযোগ থাকলে কোচিং করাব। পরে ভাবনা অন্যরকমও হতে পারে। উইকেটের কথা যদি বলেন, ৩০০ টেস্ট উইকেট পাওয়ার স্বপ্ন দেখি। আমাদের দেশে এটা খুবই কঠিন। টেস্ট ম্যাচই তো বেশি পাই না। অনেক কঠিন হবে। তারপরও স্বপ্ন দেখি।’

তবে দেশের হয়ে এখনো টেস্টে তাইজুলের উইকেট স্বীকার বেশি। তিনি ২৯ টেস্টে ১১৪ উইকেট লাভ করেন। ২২ টেস্টে মেহেদী হাসান মিরাজের উইকেট ৯০টি, সাকিব আল হাসানের ৮৮টি। এ সবই সম্ভব হয়েছে নিজের লক্ষ্য স্থির করায়। তিনি বলেন, আমি যখন খেলতে নামি, তখন আমার লক্ষ্যই হচ্ছে উইকেট লাভ করা। সে কাজটি হয়ত সব সময় পারি না। তবে চেষ্টা থাকে উইকেট নিয়েই যেন মাঠ ছাড়তে পারি।

 
Electronic Paper