বাশারে বিশ্বাস টেস্টেও
ক্রীড়া প্রতিবেদক
🕐 ১:৪৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
তিন সংস্করণের মধ্যে বাংলাদেশের ক্রিকেট সব থেকে পিছিয়ে লংগার ভার্সনে। গত ২০ বছরে মেলেনি তেমন কোনো সাফল্য। পরাজয়ের দিকটা একেবারে হতাশার। সবার মনে একটাই প্রশ্ন লঙ্গার ভার্সনে হতাশার মেঘ কবে কাটবে? কাটবেই বা কি করে, এখনো পর্যন্ত এই ভার্সনের ক্রিকেট নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনাও নেই। ভারতীয় অঞ্চল ভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে যদি লঙ্গার ভার্সনে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করা যেত তা হলে হয়তো আলোর মুখ দেখা যেত। কিন্তু তেমন কোনো পরিকল্পনাই তো দেখা মিলছে না।
আর তাই টেস্ট খেলতে নেমলেই বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা খেই হারিয়ে ফেলেন। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে আগে ঘরের মাঠে নবাগত আফগানিস্তানের বিপক্ষে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। তাহলে টেস্টে কবে মিলবে আলোর মুখে? এমন প্রশ্ন সবার। যদিও এ নিয়ে নির্বাচক কমিটির সদস্য হাবিবুল বাশার দেখালেন স্বপ্ন। তার মতে একদিন টেস্টেও বদলে যাবে বাংলাদেশ। তাহলে সেই মন্ত্রটা কি?
তাহলে শুনুন তার মুখেই, ‘আমাদের সো-ফার টেস্ট ক্রিকেট যারা খেলছিলেন তারাই কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় ছিলেন। তখন টেস্ট এত খেলতাম না। এখন অনেক অনেক টেস্ট খেলছি। আগে তিনটা ফরম্যাটে এত খেলা হতো না। মূলত টেস্ট আর ওয়ানডে হতো। এখন টি-টোয়েন্টি যোগ হয়েছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘তিনটা ফরম্যাট কিন্তু শরীর অনেক কিছু নিয়ে নেয়। তিনটা ফরম্যাটে সবাই মিলে নিয়মিত খেলা খুবই কঠিন। যার জন্য বাকি দেশগুলো কিন্তু তাই করছে। সবাই তিনটা ফরম্যাটে খেলে না। অনেক কিছু ডিমান্ড করে, শারীরিক, মানসিক অনেক কিছু। যার জন্য আপনার টেস্টর জন্য আদর্শ কিছু প্লেয়ার থাকে, টি-টোয়েন্টির জন্য আলাদা কিছু প্লেয়ার থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অবশ্যই চার-পাঁচজন প্লেয়ার থাকবে যারা সব ফরম্যাট খেলবে। একই সময় এগারোজন ক্রিকেটার সব ফরম্যাট খেলবে এমনটা কঠিন হয়ে যায় খেলোয়াড়দের জন্য। যার জন্যই কিন্তু এ মুহূর্তে কিছু স্পেশালিস্ট খেলোয়াড় বেশি দরকার হচ্ছে। এখন আমরা তিনটা ফরম্যাটে নিয়মিত খেলছি।’
টেস্টে বোলারদের ভূমিকা অনেক বড়। আর তাই বাশার মনে করেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানরা আপনাকে ড্র করাবে, বোলাররা আপনাকে জেতাবে। আপনি যদি চার-পাঁচজন বোলার নিয়ে টেস্ট খেলান, এই চার-পাঁচজনের মধ্য থেকে কিন্তু কমপক্ষে দুজন কিংবা তিনজন বোলারকে নিয়মিতভাবে পাঁচ উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। আপনি যে বোলারদের খেলাচ্ছেন তারা যেন পাঁচ উইকেট নিতে পারে। যখন এটা সম্ভব হবে তখনই আপনি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারেন, যেটা আমরা এখনো তৈরি করতে পারিনি। নিয়মিত পাঁচ উইকেট নেবে বা ম্যাচে দশ উইকেট নেবে এমন বোলার আমাদের নেই। দেশের মাটিতে পাচ্ছি কিন্তু বিদেশের মাটিতে এরকম বোলার দরকার যারা আমাদের টেস্ট ম্যাচ জেতাতে পারবে।’
তবে বোলারদের কাজটা সহজ করার ভূমিকাটা দিলেন তিনি ব্যাটসম্যানদের কাঁধে, ‘আমাদের কিন্তু ব্যাটসম্যানও দরকার যারা বড় ইনিংস খেলতে পারবে, লম্বা ইনিংস খেলতে পারবে। একশ প্লাস, একশ পঞ্চাশ প্লাস ইনিংস নিয়মিতভাবে খেলতে পারবে। এই সংখ্যাটা আমাদের বাড়াতে হবে। টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। আজ থেকে দশ বছর পর আমি দেখতে চাই, আমাদের দলে কমপক্ষে দুই-তিনজন বোলার থাকে যারা নিয়মিতভাবে পাঁচ উইকেট করে নেবে, নিজের ওই জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করা, ফাস্ট বোলার চাই আরও বেশি। স্পিনার দিয়ে আপনি জিতবেন কিন্তু একই সময় যদি ফাস্ট বোলার ভালো থাকে সেটা স্পিনারদের সহায়তা করে। অবশ্যই ব্যাটসম্যান দরকার টপ-অর্ডার এবং মিডেল-অর্ডার, যেখানে যারা বড় রান করতে পারে লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করতে পারে। যাদের সামর্থ্য আছে একদিন বা দেড়দিন ব্যাটিং করার এরকম ব্যাটম্যানের সংখ্যাটা বাড়াতে হবে।’
লম্বা সময় ধরে টেস্ট খেললেও কেন বদলাচ্ছে না দেশের টেস্ট ক্রিকেট? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘পরিবর্তন একদিনে হবে না এই বাস্তবতাও বুঝতে হবে। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, পরিবর্তনটা শুরু হয়েছে। ঢাকার বাইরে কিন্তু অনেকেই কম যায়। ঢাকার বাইরের উইকেট কিন্তু আগের চেয়ে অনেক উন্নত করা হয়েছে। এবারে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উইকেট শিকারের তালিকায় ফাস্ট বোলারদের সংখ্যা বেশি স্পিনারদের চেয়ে। যেটা দেখা যায় না সচরাচর। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে উইকেট এখন স্পোর্টিং হচ্ছে। পরিবর্তনটা শুরু হয়েছে, পুরোপুরি হতে সময় লাগবে। কারণ আমাদের কন্ডিশনটা একটু আলাদা। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো, পরিবর্তনটা শুরু হয়েছে। সময় লাগতে পারে এক বছর বা দুবছর আরও লাগতে পারে।’