তারকাঠাসা ঢাকা প্লাটুন
ক্রীড়া ডেস্ক
🕐 ৩:৩৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ ‘বিপিএল’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। গেল বুধবার শুরু হয়েছে রোমাঞ্চকর এই আসর। ব্যাট-বলের যুদ্ধে অংশ নেওয়া দলগুলোকে নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনে আজ সপ্তম ও শেষ পর্বে থাকছে ঢাকা প্লাটুন। তাদের লক্ষ্য, সাফল্য, ব্যর্থতা, ইতিহাস তথা সার্বিক বিষয়াদি নিয়ে দল পর্যালোচনা করা হলো।
বিপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজি। একমাত্র এই দলটাই কখনো রবিন লিগ রাউন্ডে বাদ পড়েনি। টুর্নামেন্টের ছয় আসরের তিনবারই ট্রফি জিতেছে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স ও ঢাকা ডায়নামাইটস নামে। দল হিসেবে যেমনি ঢাকার সাফল্য সবচেয়ে বেশি তেমনি অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনটি আলাদা ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে মোট চারটি ট্রফি জয়ের রেকর্ড আছে তার।
বিশেষ টুর্নামেন্টে বিপিএলের সেরা অধিনায়ক ফিরেছেন টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল দলে। স্বভাবতই ঢাকা প্লাটুনের আকাশে উড়ছে প্রত্যাশার ঘুড়ি। ভক্ত-অনুসারীদের প্রতিদান দিতে ঢাকাও শিরোপা প্রত্যাশী দল গঠন করেছে। কিন্তু তারকাঠাসা ঢাকার বঙ্গবন্ধু বিপিএলের শুরুটা ভালো হয়নি। প্রথম ম্যাচেই আন্দ্রে রাসেলদের কাছে উড়ে গেছে ঢাকা; হেরেছে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।
বাংলাদেশের রাজধানী ও ঢাকা বিভাগের একমাত্র প্রতিনিধি ঢাকা প্লাটুন। বরাবরের মতো এবারও শক্তিশালী দল গঠন করেছে তারা। তর্কসাপেক্ষে এই দলটাই বঙ্গবন্ধু বিপিএলের সেরা। প্লেয়ার ড্রাফট থেকে দশজন স্থানীয় ও ছয়জন বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে দল সাজিয়েছে তারা। বিদেশিদের প্রত্যেকেই নিজের দিনে একাই নির্ধারণ করে দিতে পারেন ম্যাচের ভাগ্য। তাদের মধ্যে একজন ছক্কার রাজা শহিদ আফ্রিদি।
আছে বিপিএলের পরিচিত মুখ লঙ্কান অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা। ওয়াহাব রিয়াজ ও আসিল আলি অন্য দুই পাকিস্তানি। এ ছাড়া লরি ইভানস, লুইস রিসেকে নিয়ে ঢাকার বিদেশি রিক্রুট দারুণ হয়েছে বলা যায়। দেশি রিক্রুটও তারকা সমৃদ্ধ। বিপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি তো আছেনই, ঢাকায় এবার তার সঙ্গী হয়েছেন জাতীয় দলের সতীর্থ তামিম ইকবাল। গত বিপিএলের ফাইনালের তামিমের ১৪১ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংসই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের দ্বিতীয় শিরোপা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কুমিল্লার ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রথমবার চ্যাম্পিয়নশিপের স্বাদ পেয়েছিল অধিনায়ক মাশরাফির দুর্দান্ত নেতৃত্বে। দুজনই এবার খেলবেন ঢাকার হয়ে। ঢাকার এত ইতিবাচক খবরের মধ্যে অস্বস্তির কথা হচ্ছে দুজনই অনেকদিন পর ক্রিকেটে ফিরেছেন।
পারফরম্যান্সেও সেটার প্রভাব পড়েছে। মাশরাফি তো বল হাতে সুবিধাই করতে পারেননি। ব্যাট হাতে শেষ দিকে কিছুটা ঝড় তুলেছিলেন। তামিম তাও পারেননি। ৫ রানেই আউট। তবে এনিয়ে হতাশ নন মাশরাফি। কারণ তামিমকে বহু বছর ধরে দেখে আসছেন তিনি। বাজে শুরু হলেও দেশ সেরা ওপেনারের বিপিএলের গত মৌসুমের কথা মনে করিয়ে দিলেন অধিনায়ক। দেশিদের মধ্যে ঢাকায় আছেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। আছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার এনামুল হক বিজয়, শুভাগত হোম ও জাকের আলি। প্রথম দুজনেরই বিপিএলে ঢের অভিজ্ঞতা হয়েছে। শেষজন এবারের আসর রাঙানোর বার্তা দিয়েছেন প্রথম ম্যাচেই। ঝড়ো এক হাফঞ্চেুরির দিকে হাঁটছিলেন জাকের। কিন্তু রান আউটের কারণে থেমে যেতে হয়েছে তাকে।
শুধু জাকের নয়, প্রথম ম্যাচে ঢাকার আরো দুজন রান আউটের ফাঁদে পড়েছেন। যেটাকে হারের কারণ হিসেবে সামনে দাঁড় করিয়েছেন মাশরাফি। অধিনায়ক মাশরাফির বিশ্বাস পরের ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়াবে ঢাকা প্লাটুন। তাই বঙ্গবন্ধু বিপিএলে রাজত্ব উদ্ধারের মিশন তারা শুরু করবে দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে।
বিপিএলে বরাবরই স্থানীয় কোচ সংকট থাকে। এ বছরও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। অংশ নেওয়া ৭ দলের মধ্যে মাত্র একজন দেশি কোচ। তিনি মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। সবশেষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে শিরোপা স্বাদ দিয়েছেন এই কোচ। তার অধীনে এবার খেলবে ঢাকা প্লাটুন। সালাউদ্দিনের জন্য পুরনো চ্যালেঞ্জ ফিরেছে নতুন করে। হারাতে হবে নামি-দামী ছয় বিদেশি কোচকে। কাজটা কঠিন।
সেটাকে কঠিনতর করে তুলেছে ঢাকার শেষ দুই আসরের ইতিহাস ও এবারের বাজে শুরু। গেল দুবারই তীরে এসে তরি ডুবেছে ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজির। হারতে হয়েছে ফাইনালে। গতবার তো এই সালাউদ্দিন-তামিমের দল কুমিল্লা ট্রফি জিততে দেয়নি ঢাকাকে। তার আগেরবার মাশরাফির রংপুর রাইডার্ডের কাছে ফাইনালে হার। এবার মাশরাফি, সালাউদ্দিন, তামিম তিনজনই এসেছেন ঢাকা প্লাটুনে। এবার তো চক্র ভাঙা যাবে!
বিসিবিরি প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকা প্লাটুনের পরিচালনায় থাকছেন গাজী গোলাম দস্তগীর। যে কোম্পানিটি দলের পৃষ্ঠপোষণা করেছে সেই যমুনা ব্যাংকের একজন স্বত্বাধিকারী তিনি। শিরোপা জয়ের লক্ষ্য সম্ভাব্য সেরা দলটাই গঠনের চেষ্টা করেছেন গোলাম দস্তগীর। ৬ আসরের সবকটিতে অন্তত প্লে-অফ খেলা ঢাকা এবার স্বপ্ন দেখছে চতুর্থ শিরোপার।
ঢাকা প্লাটুন
দেশী : মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, মুমিনুল হক, রাকিবুল হাসান, মেহেদী হাসান, শুভাগত হোম, আরিফুল হক, থিসারা পেরেরা, এনামুল হক, জাকের আলী।
বিদেশি খেলোয়াড় : শহিদ আফ্রিদি, আসিফ আলি, লরি ইভানস, থিসারা পেরেরা, লুইস রিসে ও ওয়াহাব রিয়াজ।