আশা-নিরাশায় ভারত সিরিজ
ক্রীড়া প্রতিবেদক
🕐 ১২:৫০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০১৯
দুদিন পর ভারত সফরের ক্যাম্প শুরুর কথা। এরপরই ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে যাওয়ার কথা। প্রতিবেশি দেশটিও সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক মতোই এগোচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎ উত্তাল হয়ে উঠল বাংলাদেশের ক্রিকেট। ১১ দফা দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়ে বসলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটাররা। দাবি অনাদায়ে মাঠবিমুখ থাকার ঘোষণা এসেছে তাদের কাছ থেকে। তাতে প্রবল অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গেল বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সিরিজ।
ক্রিকেটারদের এভাবে ধর্মঘটে চটেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মিডিয়া সেন্টারে কয়েকজন বোর্ড পরিচালককে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি। তাতে ভারত সফরের ভবিষ্যৎ চলে গেল কৃষ্ণ গহ্বরে। পুরো ঘটনাই পর্যবেক্ষণ করছে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)।
ভারতীয় বোর্ডের নতুন সভাপতি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। সিরিজ আয়োজনটা রাঙিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক। টেস্ট সিরিজ নিয়ে তিনি একটু বেশিই রোমাঞ্চিত- বিশেষ করে কলকাতা টেস্ট। আগামী ২২ নভেম্বর ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিতীয় তথা শেষ টেস্ট। দীর্ঘ পরিসরের এই ম্যাচটি দেখার জন্য সৌরভ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীকে।
একটি সূত্রের খবর- বিসিসিআইয়ের ভাবি সভাপতির আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। কলকাতা টেস্ট দেখতে ইডেন গার্ডেন্সে তিনিও উপস্থিত থাকবেন। সব আয়োজন ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা ক্রমেই দানা বাঁধছে। ইটের জবাবে ক্রিকেটারদের যেভাবে বিসিবি সভাপতি পাটকেল ছুড়লেন তাতে আরও বিপর্যয়ের সম্মুখিন হতে যাচ্ছে দেশের ক্রিকেট। সাকিবরা যে ধর্মঘটে এসেছেন সেটা এখনো নাজমুল হাসানের কল্পনার বাইরে।
ক্রিকেটারদের দাবিগুলোর ন্যায্যতা পাচ্ছে প্রায় সর্বমহল থেকে। কিন্তু এভাবে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করায় দেশের ক্রিকেটের যে ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে সেটাও একটা বড় ব্যাপার। এ নিয়ে গতকাল দুপুরে জরুরি বৈঠক করেছেন বোর্ড পরিচালকরা। বৈঠক শেষে বোর্ড প্রধান নাজমুল আবার বিস্ফোরক কথা বলেছেন, ‘খেললে খেলবে না খেললে কিছু করার নেই। আমার কিছু বলার নেই।’
এমন বক্তব্যের পাশাপাশি ভারত সফরের ক্যাম্প ও সিরিজ নিয়ে আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন বিসিবির প্রধানকর্তা। নাজমুল বলেছেন, ‘আমি অবশ্যই আশা করি ক্যাম্প চলবে। ভারত সিরিজ হবে। কারণ, আমার এখনো বিশ্বাস, বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই খেলতে চায়। তারা ক্রিকেটের উন্নয়ন চায়। কয়েকটা টাকা, ৫ হাজার টাকার জন্য দেশের ক্রিকেটের সর্বনাশ করে দেবে, এটা আমার বিশ্বাস হয় না। তবে সামনেই তো দেখতে পাব সব।’
কার্যত যা অবস্থা ক্রিকেটাররা ও বিসিবি দ্বিমুখি অবস্থানে। তাদের এক বিন্দুতে মিলিত না হলে ভারত সফর যে হবে না, শঙ্কাটা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। তাতে পেন্ডুলামের মতো দুলছে জাতীয় লিগের তৃতীয় রাউন্ড। এর চেয়েও বড় শঙ্কা ভারত সফরের প্রস্তুতি নিয়ে। বিসিবি সভাপতির মতে, দেশের ক্রিকেটের সর্বনাশ করার একটা ষড়যন্ত্র এটা।
তবে ভারত সফর হবে কি-না এই প্রশ্নের উত্তরে ধোঁয়াশা রাখলেন নাজমুল, ‘খেলা হবে না। আমি আগে জানতে চাই, দেখতে চাই, কে কে খেলতে যায়, কে কে খেলতে যায় না। ক্যাম্পে কেউ যাবে কি যাবে না। কে কে ভারত সফর বাতিল করার জন্য চেষ্টা করছে। এসব তো আগে জানতে হবে। আগে তো আসল সমস্যার কথা জানতে হবে, না হলে তো ক’দিন পর অন্য সমস্যা আসবে। কী হচ্ছে, সেটা তো আগে জানতে হবে।’
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি সৌরভও আশাবাদী সিরিজ যথাসময়েই হবে। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ঘর্মঘট তাদের নিজস্ব ব্যাপার বলে মত দিয়েছেন সৌরভ। বিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতির মতে, ‘এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, এটার সমাধান বিসিবিই করবে। এ নিয়ে আমরা আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে পারি না।’