টনক নড়েছে বিসিবির
ক্রীড়া প্রতিবেদক
🕐 ১:২১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০১৯
ক্ষোভটা অনেক দিনের। সেটারই বিস্ফোরণ ঘটল কাল। ১১ দফা দাবি নিয়ে ধর্মঘটের ডাক দিলেন দেশের প্রায়সব ক্রিকেটার। আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাও। মাঠের খেলা মতোই, সতীর্থদের ধর্মঘটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
ক্রিকেটারদের আন্দোলনে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গেল জাতীয় লিগের তৃতীয় রাউন্ড ও আসন্ন ভারত সফরের ক্যাম্প ও সিরিজ। এ নিয়ে উৎকণ্ঠা চলছে হোম অব ক্রিকেট খ্যাত মিরপুরে। ক্রিকেটারদের দাবির মধ্যে চলে এসেছে কোচ, আম্পায়ার, গ্রাউন্ডম্যানদের দুর্দশার কথাও। সবমিলিয়ে আচমকা এক ঝড়ো হাওয়ায় উত্তাল হয়ে উঠল দেশের ক্রিকেটাঙ্গন।
কাল ঘটা করেই সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিয়ে বসেন ক্রিকেটাররা। দুপুরে প্রচারমাধ্যমের সামনে দাবিগুলো তুলে ধরেন তারা। সাকিব যখন সব প্রতিনিধি হয়ে কথা বলছিলেন তাকে ঘিরে রেখেছেন অসংখ্য ক্রিকেটার। পরে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন আরো ৯ জন ক্রিকেটার। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারিশ্রমিক বাড়ানো, ক্রিকেটারদের প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর বিষয়গুলো উঠে এসেছে ১১ দফা দাবির মধ্যে। দাবি অনাদায়ে ক্রিকেট থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বসেছেন খেলোয়াড়রা। দাবিগুলো অনেক দিনের পুরনো। এ নিয়ে কখনো ভ্রুক্ষেপ করেনি বিসিবি। ক্রিকেটারদের এই বিদ্রোহের মুখে অবশেষে টনক নড়ল বিসিবির।
অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরি সুজন। জানলেন দ্রুতই সংকট নিরসনের চেষ্টা করবেন তারা। বোর্ডের পরবর্তী সভায় এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার আশ্বাস দেন প্রধান নির্বাহী। কাল প্রচারমাধ্যমকে নিজামউদ্দিন বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমরা জানতে পেরেছি। মিডিয়ার মাধ্যমেই আমরা জানতে পেরেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো যোগাযোগ হয়নি (ক্রিকেটারদের সঙ্গে)। অবশ্যই খেলোয়াড়রা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাদের দাবিগুলো আমরা বোর্ডকে আমরা জানাব এবং এ ব্যাপারে বোর্ডের পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
একটু-আধটু আন্দোলন আগেও করেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটাররা। সেই আন্দোলনে তীব্রতা পেয়েছে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা যোগ দেওয়ায়। তাতে একটা আভাস মিলছে যে, এই আন্দোলন ক্রিকেটারদের পূবপরিকল্পনার ফসল। এমনকিছু হতে পারে সেটা কি বিসিবি আঁচ করতে পেরেছে? প্রধান নির্বাহীর উত্তরে থাকল ধোঁয়াশা, ‘আমি আবারও বলছি খেলোয়াড়েরা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খেলোয়াড়দের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তো বিভিন্ন সময় আসে। আমাদের চেষ্টা থাকে যতটুকু সম্ভব তা পূরণ করার। তবু আজকে (সোমবার) যেহেতু বিষয়টা আমাদের নজরে এসেছে বোর্ড পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
ক্রিকেটারদের এই আন্দোলনের অংশ নন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্যরা। আসন্ন যুব বিশ্বকাপের কারণেই এসব ক্রিকেটারকে আন্দোলনের আওয়তায় আনা হয়নি। মূলত পেশাদার ক্রিকেটাররাই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। সাদা চোখে এটা আন্দোলন মনে হলেও বিসিবির বিরুদ্ধে ক্রিকেটারদের এক রকম বিদ্রোহই বলা যায়। তবে এমনটা মানতে নারাজ বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন, ‘না এ ধরনের (বিদ্রোহ) কোনো বিষয় না। খেলোয়াড়রা তো বোর্ডেরই অংশ। আর যে কোনো বিষয়- আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।’
ভারত সফরের ক্যাম্প শুরুর ঠিক ৪ দিন আগে শক্ত অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। তোলপড়া করা এই আন্দোলনে অশ্চিয়তায় পড়ে গেল জাতীয় দলের ক্যাম্প। ভারত সফরের প্রস্তুতিপর্ব ঠিক সময়ে শুরু হবে কি না এই শঙ্কার প্রসঙ্গ উঠতেই বিব্রত হলেন প্রধান নির্বাহী।
বিরক্তির সুরেই নিজামউদ্দিন বলেছেন, ‘আমি বলছি ব্যাপারটা আমরা মাত্রই জানলাম। আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। আমরা প্রচারমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখে জানতে পেরেছি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’