গৌরবের সঙ্গে আক্ষেপের মিশেল
ক্রীড়া ডেস্ক
🕐 ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৭, ২০১৯
ক্যারিয়ার বিপর্যয়ের শঙ্কায় ছিলেন মোহাম্মদ সাদ উদ্দিন। বছর খানেক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে মারাত্মক চোট পেয়েছিলেন। সাদ ফুটবল পায়ে আর ফিরতে পারবেন কিনা তানিয়েই জেগেছিল সংশয়। ম্যাচের পর ম্যাচ দর্শক সারিতে বসেই দেখেছে মধ্যমাঠের এই সারথী। তার ফেরাটাও হলো রাজসিক। পরশু তার দুর্দান্ত গোলের পর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ দেখেছিল ভারত জয়ের স্বপ্ন। শেষ মুহূর্তের সর্বনাশা গোলেই বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের ম্যাচে জয়বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ।
কলকাতার ঐতিহ্যবাহী যুবভারতী স্টেডিয়ামে জিততে জিততে ড্র করেছে জেমি ডের দল। ভারতের সঙ্গে করতে হয়েছে পয়েন্ট ভাগাভাগি। এই ড্র বাংলাদেশের কাছে জয়তুল্য। ভারতের দুর্গে সিংহের মতো গর্জন দিয়ে পয়েন্ট নিয়ে আসার গৌরবটা কম কীসে! ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৮৩ ধাপ পিছিয়ে থাকা ভারতকে যেভাবে জামাল-সাদরা কাঁপিয়ে দিয়েছেন সেটার বিশেষণ এক কথা হতে পারে অসাধারণ। শুধু র্যাঙ্কিংই নয়, সম্ভাব্য সবকিছুতেই ভারতীয়দের চেয়ে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তাই বলে আত্মবিশ্বাসের কোনো ঘাটতি ছিল না।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে ভরা গ্যালারি স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন সাদ। তিল ধারণের ঠাঁই না থাকা স্টেডিয়ামে গুটি কয়েক বাংলাদেশি সমর্থকরাই যা উচ্ছ্বাস করছিলেন। সেই উচ্ছ্বাস আছড়ে পড়েছে পুরো দেশেই। প্রত্যাশার পারদ চূড়ায় উঠে গিয়েছিল সাদের ওই গোলেই। সাদউদ্দিনকে নিয়ে শুরু হলো আবেগের প্রবল সুনামি। ভারতের জাল কাঁপিয়ে এই তরুণ হয়ে গেলেন দেশের জাতীয় নায়ক। দেশজুড়ে চলছে সাদ-বন্দনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তো আছেই, দেশের সর্বত্রই সুর বাজছে জাতীয় ফুটবল দলের প্রত্যাবর্তন।
এই তো কদিন আগে, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ার পরাশক্তি কাতারের অগ্নিপরীক্ষা নিয়ে ছেড়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচের অন্তিম প্রহরেও এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের জয় নিশ্চিত হয়নি। জেমির দল লড়ে গেছে শেষ পর্যন্ত। ভারতের প্রধান কোচ ইগর স্টিম্যাচের ভেতরে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের দুর্দান্ত ওই পারফরম্যান্স। ভারতের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলো ছেত্রিদের একচেটিয়া পারফরম্যান্সের পূর্বাভাস দিয়েছিল প্রতিবেদনে। তখন হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন ক্রোয়েশিয়ান কোচ, ‘বাংলাদেশকে খর্ব করে দেখো না। কাতারের বিরুদ্ধে ওরা যেভাবে খেলেছে ম্যাচটা হয়তো জিততেও পারত।’
জিততে পারত ভারত ম্যাচেও। ম্যাচের শেষলগ্নে ভারতকে নিশ্চিত হারের মুখ থেকে বের করে এনেছেন আদিল। বলে মাথা ছুঁয়ে স্বাগতিকদের সমতায়। তাতে অন্তত কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে ভারতীয়রা। এবার ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে স্টিম্যাচ পিঠ চাপড়ে দিলেন জামাল-সাদদের, ‘বাংলাদেশকে অভিনন্দন। তারা দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে। খুবই রোমাঞ্চকর একটি ম্যাচ ছিল। এটাই ফুটবলের সৌন্দর্য। আমি অতীতে ম্যাচে মাঠে ছিলাম। এই ম্যাচটা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
শুধু ক্রোট কোচই নন, বারুদ ছড়ানো ম্যাচটা মনে রাখবে বাংলাদেশের মানুষও। ভারতকে তাদেরই মাঠে যেভাবে নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন জামালরা তাতে ভীষণ খুশি হয়েছেন বাংলাদেশ কোচ জেমি। তার কাছে এই ড্র জয়ের সমতুল্য। তবে জয় হাতছাড়া হওয়ায় কিছুটা আক্ষেপও ঝড়েছে তার কণ্ঠে, ‘আমরা তিন পয়েন্ট পেতে পারতাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এক পয়েন্ট পেয়েছি। শেষ মুহূর্তে গোল হজম করায় আমি হতাশ। তবে ছেলেদের নিয়ে আমি গর্বিত। ওরা ভারতের মাটিতে অনেক দর্শকের সামনে যে ফুটবল খেলেছে; এক কথায় অসাধারণ। ভারতের সবাই ভেবেছিল যে তারা ম্যাচটি জিতবে।’
যার গোল স্বপ্ন দেখিয়েছে সেই সাদ এখন রোমাঞ্চিত। কাল টিম হোটেলে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই দেখা মিলেছে তার। এই ম্যাচ আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে তাকে। ঢাকায় ফিরতে লেগের ম্যাচে সাদ জয়ের আশা করতেই পারেন, ‘ওদের নিজেদের মাঠেই তো হারিয়ে দিয়েছিলাম প্রায়। শেষের দিকে গোল খাওয়া দুর্ভাগ্য। তবে বাংলাদেশের ম্যাচে ঠিকই হারিয়ে দিতে পারব। এখন আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে।’ আগামী বছরের ৪ জুন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দ্বিতীয়বার ভারতের মুখোমুখি হবেন জামালরা।
তবে প্রথম লেগের সাদের কাছে স্বপ্নের মতো, ‘স্বপ্নের মতো একটি ম্যাচ খেললাম। জাতীয় দলে প্রথম গোল। তাও আবার ভারতের বিপক্ষে। ভারতের শক্তিশালী দলের বিপক্ষে গোলের আনন্দও বেশি। তবে জিততে পারলে বেশি ভালো লাগত।’