ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নতুন ‘ধ্রুবতারা’ আফিফ

ক্রীড়া প্রতিবেদক
🕐 ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯

ঘোর অন্ধকারে হঠাৎই আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে আত্মপ্রকাশ করে সত্যিকারের তারকা। সবাইকে দেখায় নতুন স্বপ্ন। এমনিভাবে বৃষ্টি স্নাত রাতে আকাশফুঁড়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে তারকা হয়ে আবির্ভূত হলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। সংখ্যার হিসেবে মোটে একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতিয়েছেন সত্য, তাও আবার জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু এভাবে হিসাব করলে ভুল হবে। মাত্র ১৯ বছরের একটা তরুণ দীর্ঘ দেড় বছরের ব্যবধানে মাঠে নেমে যে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতি আয়ত্তে আনলেন, দেশকে পৌঁছে দিলেন জয়ের বন্দরে, তা আফিফের তারকা হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দেয়। ২৬ বলে ৫২ রানের দারুণ সাহসী আর আত্মবিশ্বাসী ইনিংস খেলে বিজয়ীর বেশে ফিরলেন সাজঘরে। ম্যাচ সেরার পুরস্কারটাও উঠল খুলনার এ তরুণের হাতে।

ক্রিকেট বোদ্ধাসহ আমজনতা মনে করছেন, এই ছেলেটা আগামী দিনে বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বক্রিকেট শাসন করবে। সাকিব, মাশরাফির প্রকৃত উত্তরসূরি হবে এই ছেলেটা। ভাবীকালে আফিফই হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ‘ধ্রুবতারা’।

মাত্র তিন টেস্ট খেলা আফগানিস্তানের কাছে দেশের মাঠিতে শোচনীয় হারের পর ময়নাতদন্তে টাইগারদের হাড় কঙ্কাল বেরিয়ে এসেছে। টপ অর্ডারে একের পর এক ব্যর্থতা, নির্বিষ বোলিংয়ে হতাশ আম জনতা। এরপরই আবার জিম্বাবুয়ের মতো তলানিতে থাকা দলের বিরুদ্ধে হারতে বসেছিল বাংলাদেশ। ঠিক তখনই ফিনিক্স পাখির মতো ছাইয়ের স্তূপ থেকে জেগে উঠলেন আফিফ। রীতিমতো ব্যাটিংতাণ্ডব চালিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন। তার প্রত্যেকটা শট ছিল আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ও দৃষ্টিনন্দন। এই জয়টা আগামীদিনে টনিকের মতো কাজ করবে দলের জন্য।

খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে ফোন করে জানতে চেয়েছেন, আফিফকে কেন আরও আগে নামানো হয়নি। প্রধানমন্ত্রী আফিফের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন। এই জয়টা বিশেষ হয়ে উঠছে এটির ধরনের কারণে। ১৪৫ রানের জন্য খেলতে নেমে ৬০ রানে ৬ উইকেট নেই- এই অবস্থায় ব্যাটিং করতে নেমে ছেলেটা দুর্দান্ত সব শটে ম্যাচ জেতাবেন তা বাংলাদেশের ক্রিকেটে নিয়মিত ঘটে না। এমন অবস্থায় প্রতিপক্ষ দলের কাউকে ম্যাচ বের করে নিয়ে যেতে অনেকবারই দেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু টাইগাররা এই অভাবিত আনন্দের স্বাদ পেয়েছে কমই।

কোনো কিছুকেই অসম্ভব না ভাবার দুঃসাহস শুধু তারুণ্যেরই অহংকার। আফিফের ব্যাটেও এদিন সেই দুঃসাহস। তার ভয়ডরহীন ব্যাটিং ছিল মনে রাখার মতো। বছর দেড়েক আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় বলেই শূন্য রানে আউট হন আফিফ। তারপর কেউ তাকে নিয়ে ভাবেনি। সেই ব্যর্থতাকে ‘ব্যতিক্রম’ বলে প্রমাণের প্রতিজ্ঞাই দেখা দেয় তার শরীরী ভাষায়। ২০১৬ সালে বিপিএলে অভিষেকেই তার ৫ উইকেট। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেকে ৫ উইকেট নেওয়ার সেই কীর্তি এখনো অম্লান। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেছেন, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রথম মৌসুমেই করেছেন হ্যাটট্রিক। পরে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, আফিফকে কেন এত দেরিতে এবং নিচে নামানো হলো?

এদিকে ম্যাচসেরা আফিফ বলেলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ফোন করে দলকে এবং আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এমন এক ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে পেরে ভালো লাগছে। দেশকে জিততে সহায়তা করা দারুণ এক অনুভূতি।’

৯.৩ ওভারে ৬০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়ে প্রায় হেরেই গিয়েছিল টাইগাররা। তবে সপ্তম উইকেট জুটিতে আফিফ ও মোসাদ্দেকের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে ২ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টাইগাররা।

এর আগে জিম্বাবুয়ে ১৪৫ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশকে। এই ম্যাচে আট নম্বরে নামলেও আদতে আফিফ ওপেনার। বাঁহাতি বলে ভবিষ্যতের তামিম ইকবাল বলা হচ্ছে তাকে। তবে সার্বিকভাবে সাকিব আল হাসানের সঙ্গেও তার মিল রয়েছে। তার ডাকনাম ধ্রুব।

 
Electronic Paper