তামিমের নতুন চ্যালেঞ্জ
ক্রীড়া প্রতিবেদক
🕐 ২:২৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০১৯
তামিম পার করছেন ক্যারিয়ারের অন্যতম কঠিন সময়। ব্যাটে রান নেই, সমালোচনার বাণে বিদ্ধ হচ্ছেন প্রতিনিয়তই। এমন সময় কাঁধে চাপল দলের নেতৃত্ব। ইনজুরির কারণে নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফির ছিটকে যাওয়ার পর শ্রীলঙ্কা সিরিজে সেই দায়িত্ব বর্তেছে তামিমের ওপর। অথচ তামিম এই বিষয়টাকে এক প্রকার এড়িয়ে চলেছেন গত এক যুগ ধরে।
ব্যাটসম্যান হিসেবে কত কত রেকর্ড তার অধিকারে কিন্তু প্রসঙ্গটা যদি হয় অধিনায়কত্ব, তামিম ইকবাল পড়ে যান একটু পেছনে। তবে কি তার নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা নেই? তামিমের মধ্যে নেতৃত্বগুণ আছে ভেবেই ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পুরো এক বছরের মেয়াদে সাকিবের ডেপুটি করা হয়েছিল। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই তামিম চলে আসেন নেতৃত্বের সিঁড়িতে। কিন্তু ২০১১-এর আগস্টে জিম্বাবুয়ে সফরের পর অধিনায়ক সাকিবসহ সহ-অধিনায়ক তামিমও সেই সিঁড়ি থেকে পিছলে পড়ে যান। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সাকিব-তামিম আবারও ফেরেন বাংলাদেশ দলের লিডারশিপ গ্রুপে। সাকিব ওয়ানডে দলের সহ-অধিনায়ক, তামিম টেস্ট দলের।
সহ-অধিনায়কত্ব অবশ্য তারও আগে ফিরে পেয়েছিলেন, ২০১৪ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে। শ্রীলঙ্কা সিরিজ শুরুর চার দিন আগে মাহমুদউল্লাহর জায়গায় সহ-অধিনায়ক করা হয়েছিল তামিমকে। ওই সিরিজেই চোট পেয়ে মুশফিক ছিটকে গেলে সহ-অধিনায়ক তামিমকে দায়িত্ব না দিয়ে টি-২০ সিরিজে অধিনায়ক করা হয় মাশরাফিকে।
অভিমানী তামিম ‘ব্যাটিংয়ে মনযোগ দেওয়ার’ কারণ দেখিয়ে ছেড়ে দেন সহ-অধিনায়কত্ব। সেই তামিম আবারও হন দলের নেতৃত্ব অনুদলের অংশ। তখন ভাবনা ছিল ভবিষ্যৎ অধিনায়কের ব্যাপারটিও! কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ভাবনার বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। নিয়মিত অধিনায়ক না থাকলে সহ-অধিনায়কই হন অধিনায়ক। মুশফিকুর রহিমের বাঁ হাতের বুড়ো আঙ্গুলের চোটের সৌজন্যে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে সেই পদোন্নতিটা পেয়ে যান তামিম। এক টেস্টে নেতৃত্ব পাওয়াটা তামিমের চোখে ছিল নিজের নেতৃত্বগুণ প্রমাণের সুযোগ। পরীক্ষাটা আরও কঠিন হয়ে যায় তখন একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় চোটে পড়ায়। অনভিজ্ঞ দলটা পড়েও ‘অনভিজ্ঞ’ এক অধিনায়কের হাতে। ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট বাংলাদেশ হারে ৯ উইকেটে।
আড়াই বছর পর তামিমের কাঁধে আবারও উঠেছে নেতৃত্বের ভার। আবারও নিয়মিত অধিনায়ক চোটে পড়ায়। এবার চোটে পড়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। তামিম এমন সময়েই কঠিন দায়িত্বটা পেলেন যখন তার সময়টাও ভালো যাচ্ছে না। প্রত্যাশা অনুযায়ী বিশ্বকাপে ভালো করতে পারেননি। বাঁহাতি ওপেনার সেঞ্চুরির দেখা পান না এক বছর হয়ে গেল। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে অবশ্য ভালোই খেলছিলেন।
কিন্তু শ্রীলঙ্কা সফরে তিনি যখন চোখ রেখেছেন নিজেকে ফিরে পেতে, তখনই কঠিন দায়িত্বটা এসেছে তার কাছে। অধিনায়কত্বের চাপ নিতে চান না তামিম, ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেকবারই দেখা গেছে। গত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেই (বিপিএলে) কুমিল্লার অধিনায়কত্ব স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছেন। ২০১৬ সালের পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও অধিনায়কত্ব করতে দেখা যায়নি। অবশ্য ঘরোয়া ক্রিকেট আর জাতীয় দলের প্রেক্ষাপট এক নয়।
দলের অন্য সিনিয়র ক্রিকেটারদের মতো তিনিও বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন গত ১২ বছরেও তার পূরণ হয়নি। কথায় আছে, ‘যিনি হন সহসভাপতি, তার নেই কোনো গতি!’ ক্যারিয়ারজুড়ে শুধু সহ-অধিনায়কই হলেন, পূর্ণ অধিনায়ক তার আর হওয়া হলো না! সেই ২০১১ সাল থেকে তাকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে গড়ে তোলার যে ‘প্রকল্প’, সেটি আর শেষ হলো না! ২০১৮ সালের শুরুতে বিসিবি এ প্রকল্প থেকে তাকে বাদই দিয়ে দিল। টেস্ট কিংবা টি-২০ দুটিতেই হারালেন সহ-অধিনায়কত্ব। কাল মাশরাফি চোটে পড়লে সবাইকে চমকে দিয়ে খুব দ্রুত সময়ে বিসিবি তামিমকে আবার অধিনায়ক করল, যিনি গত দেড় বছর লিডারশিপ গ্রুপেই ছিলেন না।
ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স, গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্রিকেটার ছাড়া গড়া একটা দলকে নেতৃত্ব দেওয়া কঠিন চ্যালেঞ্জ তামিমের সামনে। বাঁহাতি ওপেনার ভালো করেই জানেন, তিনি ভালো করতে না পারলে দল বিপদে পড়ে যাবে।
গতকাল শ্রীলঙ্কায় রওনা দেওয়ার সময় অবশ্য বলে গেছেন, তিনি নেতিবাচক কিছু ভাবতে চান না। ইতিবাচক থাকতে চান। এ টোটকায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তামিম ও তার দল শ্রীলঙ্কা সফরে যদি দারুণ কিছু করতে পারে।