ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অন্ধকারে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট

ক্রীড়া প্রতিবেদক
🕐 ২:৩৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০১৯

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সুদিন খুঁজতে বেশি দূর যেতে হবে না। দুদশক আগেও দলটি দারুন শক্তিশালী। এন্ডি ফ্লাওয়ার, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, হিথ স্ট্রিক, নিল জনসন, অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল, মারে গুডউইন...এমন আরও কিছু নাম জ্বলজ্বল করছে দেশটির ক্রিকেটের ইতিহাসে। বাংলাদেশ যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হামাগুড়ি থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তখন ক্রিকেটে এই জিম্বাবুয়েই ছিল প্রচণ্ড শক্তিশালী এক দল। অথচ আজ তাদের কোনো দলই নেই! কারণ বৈশ্বিক যে কোনো আয়োজন থেকে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলকে বহিষ্কার করেছে আইসিসি।

অবশ্য দলটির ক্রিকেটে অভ্যন্তরীণ ঝামেলা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। বিশেষ করে সদ্যসমাপ্ত ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলতে না পারাসহ নানাবিদ কারণে ক্রিকেট বোর্ডকেই বিলুপ্ত করে দিয়েছিল দেশটির সরকার। গঠন করেছিল অন্তবর্তীকালীন এক কাঠামো। যা একদমই পছন্দ করেনি আইসিসি। ক্রিকেট বোর্ড বিলুপ্ত করার পর থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল হয়তো বড় কোনো পদক্ষেপ নেবে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যার প্রতিফলন ঘটলো বিশ্বকাপ শেষে আইসিসির সভায়।

গত সপ্তাহে লন্ডনে কয়েক দফায় সভা করে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে আইসিসি। যে কারণে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আইসিসি আয়োজিত কোনো ইভেন্টে খেলতে পারবে না তারা। যার ফলে আগামী মাসে নারী দলের টি-২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব এবং অক্টোবরে পুরুষ দলের টি-২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলা শঙ্কার মুখে পড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, এ সময়ের আইসিসির কাছ থেকে কোনোরকম আর্থিক অনুদানও পাবে না দেশটি।

মূলত আইসিসির গঠনতন্ত্রের ২.৪ (গ) এবং (ঘ) এর আইন অমান্য করার কারণেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তার আগে কথা বলা হয়েছে জিম্বাবুয়ের অন্তবর্তীকালীন ক্রিকেট বোর্ড ও সরকারের সঙ্গে। ক্রিকেট বোর্ডে সরাসরি সরকার হস্তক্ষেপ একদমই মেনে নেয়নি আইসিসি।

বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে আইসিসি চেয়ারম্যান শশাঙ্ক মনোহর বলেন, ‘আমরা কোনো সদস্য দেশকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অনেকবার ভাবি। কিন্তু খেলাধুলাকে রাজনৈতিক সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতেই হবে। জিম্বাবুয়েতে যা হয়েছে তা আমাদের গঠনতন্ত্রের বিরোধী এবং আমরা এটিকে এমনিতেই ছেড়ে দিতে পারি না।’

জিম্বাবুয়ের হয়ে ১২ টেস্ট ও ৯৭ ওয়ানডে খেলা সিকান্দার রাজা মনে করেন, আইসিসি সদস্যপদ স্থগিত করায় তিনি দেশের হয়ে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই এভাবে বিদায় নিতে চাননি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ সুনাম কুড়োনো এ ব্যাটসম্যান। রাজা টুইট করেন, ‘একটা সিদ্ধান্ত কীভাবে একটা দলকে অচেনা করে দেয়। একটা সিদ্ধান্তে কীভাবে অনেকে বেকার হয়ে পড়ে। একটা সিদ্ধান্ত অনেক পরিবারের ওপর প্রভাব ফেলে। একটা সিদ্ধান্ত কীভাবে অনেক ক্যারিয়ার শেষ করে দেয়। অবশ্যই আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে এভাবে বিদায় জানাতে চাইনি।’

রাজা আরও বলেন, ‘আমরা যদি টি-২০ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে খেলতে না পারি তাহলে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজেও খেলতে পারবো না।’

রাজার শঙ্কা এই পরিস্থিতিতে ক্রিকেটাররা বিকল্প ক্যারিয়ারের কথা ভাবতে পারে-‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে আমরা কোথায় যাব আমি জানি না। শুধু ক্লাব ক্রিকেট থাকবে নাকি আমাদের জন্য ক্রিকেটই থাকবে না? আমরা কি আমাদের খেলার সামগ্রী পুড়িয়ে চাকরির জন্য আবেদন করবো? এই মুহূর্তে আমি জানি না, আমাদের কি করা উচিত।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমার এখন এতটুকুই বলার আছে, আসলে আমার বলার কিছুই নেই। আমাদের ক্রিকেট, আমাদের জীবিকার মাধ্যম কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমি এখন যাই বলি না কেন, তা অনর্থক। এটা বধিরকে গান শোনানোর মতো। আমি ভাবতাম তাদের লক্ষ্য হলো খেলাটাকে ছড়িয়ে দেয়া কিন্তু ব্যাপার পুরোটা উল্টো।’

জিম্বাবুয়ের আরেক তারকা ব্যাটসম্যান ও দলটির সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলরও আইসিসির সিদ্ধান্তকে ‘হৃদয়ভঙ্গ’ বলে মনে করছেন। রাজার টুইটটি রি-টুইট করে টেলর নিজেও একটি টুইট করেন। ‘আইসিসির জিম্বাবুয়েতে ক্রিকেট স্থগিত করার রায়ে হৃদয় ভেঙে গেল। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের জন্য নিবেদিত শত শত লোক, ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফ ও গ্রাউন্ড স্টাফ চাকরিহারা হলো...।’

 
Electronic Paper