ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফাইনালে উঠতে ইংল্যান্ডের চাই ২২৪ রান

খেলা ডেস্ক
🕐 ৭:২৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০১৯

একাই লড়াই গেলেন স্টিভেন স্মিথ। এক প্রান্তে যখন একের পর এক উইকেট পড়ছিল, অন্যপ্রান্তে একাই অবিচল ছিলেন তিনি। ইংলিশ বোলারদের গতির আগুন কিংবা মায়াবী ঘূণি জাদু- কোনো কিছুই কাবু করতে পারেনি তাকে। স্মিথের কল্যাণেই ১৪ রানে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও ইংল্যান্ডের সামনে ২২৪ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দাঁড় করাতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া।

বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ইংলিশ বোলারদের তোপের মুখে পড়ে ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ক্রিস ওকস কিংবা জোফরা আর্চার- এই দুই পেসারের গতির আগুনে পুড়ে শুরুতেই ফিঞ্চ, ওয়ার্নার কিংবা পিটার হ্যান্ডসকম্বকে হারিয়ে দারুণ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে যায় অসিরা।

সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়াকে টেনে তুলেন স্টিভেন স্মিথ আর অ্যালেক্স ক্যারে। এই দুই ব্যাটসম্যানের ১০৩ রানের জুটিই ইংল্যান্ডের সামনে অস্ট্রেলিয়ার লড়াকু ইনিংস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মূল ভুমিকা পালন করেন। যদিও স্মিথ শেষ পর্যন্ত রানআউটের শিকার হয়ে যান এবং আউট হওয়ার আগে ১১৯ বলে করেছিলেন ৮৫ রান। ক্যারে আউট হন ৪৬ রান করে।

যদিও তাদের দু’জনের ব্যাটে ১০৩ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়ে ওঠার যখন বড় স্কোরের পথে হাঁটছিল অস্ট্রেলিয়া, তখন হঠাৎই ঝড় তোলেন আদিল রশিদ। তার মায়াবী ঘূর্ণিতে একই ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ব্যাটিং। বড় স্কোর গড়া তো দুরে থাক, শেষ পর্যন্ত ৪৯ ওভারে ২২৩ রানেই অলআউট হয়ে গেলো অস্ট্রেলিয়া।

এজবাস্টনে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। ব্যাট করতে নামার পর যে অবস্থা হয়েছিল তাদের, তাতে মনে হচ্ছিল বুঝি এজবাস্টনে যেন ফিরে এলো ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। পুরোপুরি ভারতের মতই অবস্থা দাঁড়িয়েছিলো অস্ট্রেলিয়ানদের। শুরুতেই ইংলিশ বোলারদের তোপের মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ১০ রানে ২টি এবং ১৪ রানে হারিয়ে বসে ৩টি উইকেট।

প্রথম ওভার কোনোভাবে কাটিয়ে দিতে পারলেও দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই জোফরা আরচারকে ঠিক মত খেলতে পারেননি ফিঞ্চ। এলবিডব্লিউর আবেদন উঠতেই আম্পায়ার আঙ্গুল তুলে দিলেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত পছন্দ হয়নি ফিঞ্চের। তিনি রিভিউ চাইলেন। দেখা গেলো সত্যি সত্যিই এলবিডব্লিউ ছিলেন তিনি। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই বহাল থাকলো। কোনো রান না করেই ফিরে গেলেন ফিঞ্চ।

এরপর আরও একটি উইকেট পড়তে পারতো। জোফরা আরচারের বলে স্মিথ পরাস্ত হলে আউটের আবেদন করে ইংল্যান্ড। কিন্তু আম্পায়ার তাতে আউট না দিলেও রিভিউ নেয় ইংলিশরা। কিন্তু আম্পায়ার্স কলই রেখে দেন টিভি আম্পায়ার ক্রিস গ্যাফানি।

স্মিথ আর হ্যান্ডসকম্ব মিলে চেষ্টা করেন একটা জুটি গড়ে বিপর্যয়কে সামাল দেয়ার। কিন্তু হলো মাত্র ৪ রানের জুটি। ইনিংসের সপ্তম ওভারের প্রথম বলেই ক্রিস ওকসের আঘাত। এবার তাকে খেলতে গিয়ে ব্যাটের ভেতরের কানায় লাগিয়ে বল ভেতরে টেনে আনেন হ্যান্ডসকম্ব এবং বোল্ড হয়ে যান। ১২ বলে ৪ রান করে আউট হলেন তিনি।

১৪ রানে যেখানে ৩ উইকেট নেই, সেখানে অস্ট্রেলিয়ার শেষটাই দেখে ফেলেছিল সবাই। ম্যাচ শেষে পরিস্থিতি কি দাঁড়ায়, সেটা এখনই বলা না গেলেও, অস্ট্রেলিয়া যে এমনি এমনিই ম্যাচটা ছেড়ে দেবে না, তা বুঝিয়ে দেন স্মিথ-ক্যারে। দু’জনের ব্যাটে গড়ে ওঠে ১০৩ রানের জুটি। ১৪ রান থেকে দু’জন অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে যান ১১৭ রান পর্যন্ত।

কিন্তু ২৮তম ওভারে বোলিং করতে এসেই ইংলিশ লেগ স্পিনার আদিল রশিদের মায়াবী ঘূর্ণি ফাঁদে পড়ে পরিবর্তিত ফিল্ডার জেমস ভিন্সের হাতে ক্যাচ দেন উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া অ্যালেক্স ক্যারে। ৭০ বল খেলে ৪৬ রান করে আউট হন তিনি। তার আগে জোফরা আরচারের বলে থুতনিতে মারাত্মক আঘাত পেয়েছিলেন ক্যারে। চামড়া কেটে ড়িয়ে গলগলিয়ে রক্তও পড়েছিল। দু’দফা ব্যান্ডেজ করার পরও দিব্যি দলকে বাঁচাতে তিনি ব্যাট করে যান।

ক্যারে আউট হওয়ার পর একই ওভারের শেষ বলে আউট হন মার্কাস স্টইনিজ। আদিল রশিদের বলটা ঠিকমত বুঝতে পারেননি মার্কাস স্টইনিজ। তার বল পায়ে লাগার পরই জোরালো আবেদন করেন আদিল রশিদ। আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা অনেক্ষণ সময় নিয়ে এরপর ধীরে ধীরে আঙ্গুল তোলেন। তার আউট দেয়ার স্টাইল দেখেই মনে হচ্ছিল যেন, ইচ্ছার বিরুদ্ধে আউটটা দিয়েছেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার দুর্ভাগ্য, রিভিউ বাকি ছিল না, তাই রিভিউর আবেদনও করতে পারেনি তারা। ১১৮ রানে পড়ে পঞ্চম উইকেট।

স্টইনিজ আউট হওয়ার পর স্মিথের সঙ্গে জুটি বাধেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ৩৯ রানের জুটি গড়ে তোলেন তারা। কিন্তু এ সময় আর্চারের বলে ভুলটা করে বসেন ম্যাক্সওয়েল। একটি শট খেলতে গিয়ে ভোগেন সিদ্ধান্তহীনতাই। এটাই কাল হয়ে দাঁড়াল তার জন্য। বলটা না খেললেন শট, না খেললেন ডিফেন্স। বল উঠে গেলো শর্ট কভারে। ওখানে মরগ্যান ক্যাচটি ধরেন তার।

প্যাট কামিন্স মাঠে নেমে বেশিক্ষণ ছিলেন না। ১০ বল খেলে ৬ রান করে বিদায় নেন তিনি আদিল রশিদের বলে জো রুটের হাতে ক্যাচ দিয়ে। এর কিছুক্ষণ পরই দ্রুত রান নিতে গিয়ে রানআউটের শিকার হন স্টিভেন স্মিথ।

মিচেল স্টার্ক রীতিমত একজন ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠেন। ৩৬ বল খেলেন তিনি। করেন ২৯ রান। একটি করে বাউন্ডারি এবং ছক্কাও মারেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার পুরো ইনিংসে ছক্কা এলো মাত্র ২টি। একটি ম্যাক্সওয়েল এবং অন্যটি স্টার্কের ব্যাট থেকে।

শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ৪৯তম ওভারের শেষ বলে আউট হন জেসন বেহরেনডর্ফ। ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন নাথান লায়ন। ইংলিশ বোলারদের মধ্যে ক্রিস ওকস এবং আদিল রশিদ নেন ৩টি করে উইকেট। জোফরা আর্চার নেন ২ উইকেট। ১টি নেন মার্ক উড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস : অস্ট্রেলিয়া এবং ব্যাট করার সিদ্ধান্ত
অস্ট্রেলিয়া : ২২৩/১০, ৪৯ ওভার (স্টিভেন স্মিথ ৮৫, অ্যালেক্স ক্যারে ৪৬, স্টার্ক ২৯, ম্যাক্সওয়েল ২২, ওয়ার্নার ৯; ক্রিস ওকস ৩/২০, আদিল রশিদ ৩/৫৪, আরচার ২/৩২, মার্ক উড ১/৪৫)।

 
Electronic Paper