রাশিয়ার জন্মহার বাড়াবে বিশ্বকাপ!
ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১১:০৩ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০১৮
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমেই পড়তির দিকে থাকা স্বাগতিক রাশিয়ার জন্য সুখবর হতে পারে এবারের বিশ্বকাপ। একটু অবাক হলেও ঘটনা সত্য বলেই মনে করছেন জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা। অর্থাৎ ১৯৯২ সাল থেকে রাশিয়ায় নিম্নগামী জন্মহার ঊর্ধ্বমুখী করবে এই বিশাল ফুটবল আয়োজন। বিভিন্ন দেশে বিগত বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের পর এমনটাই প্রমাণিত হয়েছে।
বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জার্মান গণমাধ্যমকে ধাত্রীবিদ্যাবিশারদ রল্ফ ক্লিশ বলেন, সুখের অনুভূতি বিশেষ ধরনের হরমোন নির্গমন ঘটায় এবং গর্ভধারণে সহায়তা করে। অনেক মানুষই বিশ্বকাপের মতো ইভেন্টের সময় দারুণ উত্তেজিত থাকেন এবং এই উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ হয়ে থাকে অন্য কোনো কাজের মাধ্যমে।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, কয়েকটি গবেষণা অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়ার জনসংখ্যা ১৪.৩ কোটি থেকে ২০৫০ সালে এসে ১১.১ কোটিতে নেমে আসতে পারে। উচ্চ মৃত্যুহার, নিম্ন জন্মহার ও জীবনযাপনের নিম্নমানের জন্য জনসংখ্যায় হ্রাস ঘটছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপ।
রাশিয়ার জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ১৫ জুলাই বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরও আসর সম্পর্কে আগ্রহী থাকবেন। বিশ্বকাপ আয়োজনকারী দেশের শিশু জন্মহারে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসে কি না সেদিকে নজর রাখবেন তারা। বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে গবেষণায় দেখা গেছে, খেলাধুলায় সাফল্যের সঙ্গে জন্মহার বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে।
রাশিয়ার জন্য এটি সুখবর হতে পারে। ১৯৯২ সাল থেকে রাশিয়ার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার পড়তির দিকে। যার অর্থ বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিকতম পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাশিয়ার জন্মহার প্রতি হাজারে ১৩ জন। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশের চেয়ে তা বেশি। তবে ১৯৬০ সালের সঙ্গে তুলনা করলে এই জন্মহার প্রায় অর্ধেক। অধিকাংশ দেশেই জন্মহার পতনের মাত্রা এত বেশি ছিল না। এই সমস্যা নিয়ে ক্রেমলিনও বেশ চিন্তিত। গত বছর নভেম্বরে জন্মহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার প্রকল্প চালু করেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর মধ্যে প্রচারপত্র বিলি করা হয়; যেখানে অন্যতম প্রধান প্রস্তাব ছিল সেসব পরিবারের সদ্য জন্ম হওয়া শিশুর প্রথম ১৮ মাসের ভরণপোষণ খরচ রাষ্ট্র বহন করবে। কিন্তু ফুটবল কি সত্যিই ভূমিকা রাখতে পারবে? যুক্তরাজ্যে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছিল, ১৯৬৬ বিশ্বকাপ জয় ও আয়োজনের কারণে সেখানে জন্মহার বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে এর পক্ষে তাৎপর্যপূর্ণ প্রমাণ পাওয়া যায় ২০০৭ সালে। ২০০৬ বিশ্বকাপের নয় মাস পর জার্মানির হাসপাতালগুলো থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে জানানো হয়, জার্মানির জন্মহার ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্রাজিলের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মার্চে ব্রাজিলের শিশু জন্মহার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, আগের বছরের তুলনায় জন্মহার প্রায় ৭ ভাগ বেড়েছে। জন্মহার বৃদ্ধিতে ফুটবলের ভূমিকা পরিমাপ করতে একটি পুরো টুর্নামেন্টও প্রয়োজন হয় না। ২০১৩ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল তাদের এক গবেষণায় ‘জেনারেশন ইনিয়েস্তা’ শব্দটি ব্যবহার করে তা ব্যাখ্যা করতে। ২০০৯ এর সেই গোলের পর হাজার শিশুর ‘বাবা’ বলা হয় ইনিয়েস্তাকে। ২০০৯ এর মে মাসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের শেষদিকে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার এক গোলে চেলসিকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে বার্সেলোনা। এর ৯ মাস পর, ২০১০ এর ফেব্রুয়ারিতে কাতালোনিয়ার হাসপাতালগুলোতে ১৬% পর্যন্ত জন্মহার বৃদ্ধি পাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।
জিতেই স্টেডিয়াম পরিষ্কার
প্রিয় দলের খেলোয়াড়দের প্রাণবন্ত রাখতে সেইন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন কয়েক হাজার দর্শক। প্রতিপক্ষ পোল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ খেলে স্বদেশি দর্শকদের চাঙ্গাও রেখেছিলেন সাদিয়ো মানের সেনেগাল। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সামাজিক মাধ্যমে যে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে তা হলো গ্যালারিতে উপস্থিত সেনেগাল সমর্থকদের জয় উদযাপনের অন্যরকম কাণ্ড। মঙ্গলবার গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পোল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারায় ২১তম বিশ্বকাপে আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করা সেনেগাল। এটাই ছিল এবারের বিশ্বকাপে কোনো আফ্রিকান দলের প্রথম জয়। প্রথমার্ধেই আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যাওয়ায় গ্যালারিতে উপস্থিত সেনেগাল সমর্থকদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। হৈ-হুল্লোড় করে তারা মাতিয়ে রাখেন পুরো মাঠ। পরে দ্বিতীয় গোলে সেনেগালের জয় প্রায় নিশ্চিত হলে উচ্ছ্বাসের মাত্রা বেড়ে যায় আরো। এ সময়ই অনিচ্ছাকৃতভাবে তারা গ্যালারি অপরিচ্ছন্ন করেন।
তবে ম্যাচ শেষে বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে সেনেগালের সমর্থকরা মাঠ থেকে বের হননি। অন্য দর্শকরা বের হওয়ার সময় তারা পেছনে দাঁড়িয়ে থাকেন। এক পর্যায়ে সব দর্শক বের হয়ে গেলে সেনেগালের দর্শক-সমর্থকরা গ্যালারি পরিষ্কার করতে থাকেন। আর তাদের ‘মহানুভবতার’ এ বিষয়টির কিছু স্থিরচিত্র ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেনেগাল দর্শক-সমর্থকদের এমন বিনয়সুলভ আচরণ এরই মধ্যে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। প্রকাশ পেয়েছে তাদের মানবিকতার মানসিকতাও।
সেনেগাল ছাড়াও দিনের আরেক খেলায় ইতিহাস গড়া ম্যাচে জাপানের সমর্থকরাও গ্যালারি পরিষ্কার করে নজরে এসেছেন। বিশ্বকাপে প্রথম এশিয়ান দল হিসেবে লাতিন আমেরিকার বড় দল কলম্বিয়াকে ২-১ গোলে হারায় জাপান। ম্যাচ শেষে তাদের সমর্থকরাও একই কাজ করেন। এদিকে নাইজেরিয়ার এক সমর্থক তার টুইটার অ্যাকাউন্টে জাতীয় দলকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, সুপার ঈগলরা ম্যাচ জিতলেও এমন কাজ করবেন দর্শকরা।
বাংলাদেশি ভক্তদের জন্য মেসির প্রতিদান
বিশ্বকাপ এলে পুরো বাংলাদেশ ছেয়ে যায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকায়। দুই দলের তারকাদের নিয়ে আনন্দে মাতেন ভক্তরা। আর এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে তারকা দ্বৈরথে সবার ওপরে লিওনেল মেসি। যাকে নিয়ে ভক্তদের উন্মাদনা শুধু বিশ্বকাপে নয়, ক্লাব ফুটবলের কল্যাণে সারা বছরই থাকে। যেখানে মেসির প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে থাকেন ক্রিশ্চিয়ানো রানালদো।
তবে কখনো কখনো প্রশ্ন ওঠে, এই যে মেসি ও আর্জেন্টিনাকে নিয়ে এত উন্মাদনা বিশ্বকাপের সময় সেটি কি ওই খেলোয়াড় ও তার দেশ জানে? এ প্রশ্নই আর আসবে না মেসির কল্যাণেই। গত মঙ্গলবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন মেসি। ভক্তদের মেসি উন্মাদনার সেই ভিডিওর অনেকটা জুড়েই আছে বাংলাদেশ। এ যেন বাংলাদেশি ভক্তদের ভালোবাসার প্রতিদান, বিশ্বকাপের মতো সেরা আসরের সময় সবাইকে দেখিয়ে দিলেন মেসি। ভক্তদের কার ভালোবাসা কত এটি নিয়ে একরকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে মেসির ওয়েবসাইট। চাওয়া হয়েছে মেসিকে ও আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করে ভিডিও এবং ছবি। যেগুলো থেকে বাছাই করা ভিডিও এবং ছবির জন্য ভোট চাওয়া হয়েছে। ভোটে বিজয়ীদের জন্য থাকছে পুরস্কার। এ প্রতিযোগিতার কথা জানাতেই মেসি গত মঙ্গলবার ভিডিওটি প্রকাশ করেন। যেটিতে তিনবার উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ভিডিওর একেবারের শুরুতেই দেখা যায় বিশাল বড় একটি পতাকা নিয়ে মাঠে বসে ২৬ তরুণ। বাঁ পাশের কোনায় ভেসে উঠছে আর্জেন্টিনার পতাকা। ডান পাশের কোনায় ভেসে আছে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা। যেটি জানান দিচ্ছে ছবিটি বাংলাদেশের।
পরের বার বাংলাদেশ উঠে এসেছে রাস্তায় আর্জেন্টিনাকে নিয়ে উৎসবের ছবিতে। বড় পতাকা নিয়ে যেখানে মিছিলে নেমেছে কিশোররা। এরপর আরেকটি চিত্রে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের বাড়িতে বাড়িতে পতাকা উৎসবের বিষয়টি। যেখানে দেখা যাচ্ছে, বাড়ির ছাদে আর্জেন্টিনার পতাকা টাঙাচ্ছেন দুজন। বাংলাদেশে তাকে নিয়ে উন্মাদনার খবর শুধু শোনা নয়, নিজের চোখেই তো দেখে গেছেন মেসি। ২০১১ সালে ঢাকায় এসে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে খেলেছেন প্রীতিম্যাচ। বিমানবন্দর থেকে হোটেলে পৌঁছার সময়ই দেখেছেন কতটা পাগলপ্রায় ভক্ত তার। তারই প্রতিদান দিলেন তিনি।
কুকুরগুলো গেল কোথায়
বিশ্বকাপের জ্বর চলছে পুরো রাশিয়ায়। কফিশপ হোক আর রাস্তার ধারে গিটারে গুনগুন হোক, একটাই আলোচনা ফুটবল। আর স্বাগতিক হিসেবে দেশটির ফুটবলারদের দাপুটে খেলায় উৎসবের আবহ সবখানে। কিন্তু এ উৎসবের ভিড়েও কিছু মানুষের মন খারাপ। কারণ বিশ্বকাপ উপলক্ষে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করার জন্য চলছে কুকুর নিধন।
বিশ্বকাপের আগেই কয়েক হাজার বেওয়ারিশ কুকুর মেরে ফেলা হয়েছে রাশিয়ার ১১টি শহরে। যেটিকে বলা হচ্ছে ‘বায়োলজিক্যাল ট্রাশ’ সাফাই অভিযান।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অসংখ্য নাগরিক এসেছেন রাশিয়ায়। শহরজুড়ে উৎসবের ঢল। এরই মাঝে এতগুলো কুকুর নাকি বিশ্বকাপ দর্শনার্থীদের বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছিল, আর তাই ফুটবলের আসর জমার আগে থেকেই নাকি বিষাক্ত খাবার খাইয়ে মেরে ফেলা হয়েছে কয়েক হাজার কুকুর।
যদিও প্রশাসনের পক্ষে বলা হয়েছে, পথের কুকুরদের অস্থায়ী আশ্রয়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাস্তার কুকুরদের কারণে সমস্যা তৈরি হলেও মোটেও মেরে ফেলা হয়নি। তাদের সরানো হয়েছে অস্থায়ী আশ্রয়ে। বিশ্বকাপের শেষেই নাকি মিলবে মুক্তি।
তবে ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, কুকুর নিধনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বেসরকারি একটি সংস্থাকে। রাশিয়ার বিভিন্ন রাস্তায় কয়েক হাজার কুকুরের মৃতদেহের ছবি পোস্ট হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন কুকুরপাগল রাশানরা। ২০১৪ সালের উইন্টার অলিম্পিকের সময়ও কুকুর নিধন নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিল প্রশাসন। বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরও তার ব্যতিক্রম হলো না।
নিরাপত্তার অজুহাতে কুকুর নিধন মানতে পারছে না ফিফাও। একজন মুখপাত্র বলেন, ‘ফিফা এবং স্থানীয় সংগঠন কমিটি পশুদের সঙ্গে এমন নিষ্ঠুর আচরণ মেনে নিতে পারে না।’