ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ, মে ১৮, ২০১৯

বৃষ্টির কঠিন রসিকতাকে মোকাবেলা করে ‘লাকি সেভেনে’ এসেই মিলল সোনালী সাফল্যের দেখা। ২০০০ সালে টেস্ট আঙ্গিনায় প্রবেশের পর এই প্রথম কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা ঘরে তুলতে পারল বাংলাদেশ। ২৪ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে বীরদর্পে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে টাইগাররা। বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৪ ওভারে ১ উইকেটে ১৫২ রান করে। যার প্রেক্ষিতে ডি/এল মেথডের জটিল হিসেবে বাংলাদেশের জন্য লক্ষ্য স্থির হয় ২১০ রান। জবাবে ২২.৫ ওভারে ৫ উইকেটে ২১৩ রান করে জয় তুলে নেয় টাইগাররা।

 

ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি মিলিয়ে এর আগের ছয়টি ফাইনালে শিরোপা-শূন্য ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু নিজেদের সপ্তম ফাইনালকে ‘লাকি ম্যাচ’ বানিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম শিরোপা জয়ের আনন্দ উপহার দিল টাইগাররা। বিশ্বকাপের আগে এমন অর্জন নিঃসন্দেহে বাড়তি প্রেরণা যোগাবে মাশরাফি বাহিনীকে।

প্রায় অসম্ভব রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা আশানুরূপই হয়েছিল বাংলাদেশের। কিন্তু দলীয় ৫৯ ও ৬০ রানে দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় তারা। তমিম ইকবাল আউট হন ব্যক্তিগত ১৮ রানে। আর সাব্বির রহমান রানের খাতা খোলার আগেই এলবিডাব্লুর ফাঁদে পড়ে মাঠ ছাড়েন।

এরপর মুশফিকুর রহীমকে নিয়ে দারুণ মারমুখী খেলছিলেন সৌম্য সরকার। রানরেটের সাথে পাল্লা দিয়েই ব্যাট চলছিল তার। ৩টি ছয় ও ৯টি চারে ৬৬ রান তুলে ফেলেছিলেন মাত্র ৪০ বলে। কিন্তু ৪১তম বলটি তুলে মারতে গিয়ে রেইমন রেইফারের তালুবন্দী হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।

সৌম্যর বিদায়ের পরও মারমুখী ছিলে মুশফিক। কিন্তু ব্যক্তিগত ৩৬ রানে (২২ বলে) তিনি ফাঁদে পড়েন রেইফারের এলবিডাব্লুর। ১৩৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে ইতিহাস থেকে তখন বেশ দূরে বাংলাদেশ। কিছুটা হারের শঙ্কাও পেয়ে বসেছিল। সেটি আরো দানা বেধেছিল দলীয় ১৪৩ রানে যখন পঞ্চম উইকেট হিসেবে আউট হলেন মোহাম্মদ মিঠুন (১৭)।

তবে সেই শঙ্কা মুছে দিয়ে ইতিহাস গড়ার বাকি কাজটা সারলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, সঙ্গে ছিলেন অন্যতম পাণ্ডব মাহমুদউল্লাহ। দুইজনের মাত্র ৪১ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭০ রানের জুটিতে ইতিহাসের বাকি পথ পাড়ি দেয় বাংলাদেশ।

তবে বাংলাদেশের জয় আসে মোসাদ্দেকের টর্নেডো ব্যাটিংয়ে। ৫টি ছক্কা ও ২টি চারে সাজিয়ে মাত্র ২০ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা এই ব্যাটসম্যান অপরাজিত ছিলেন ৫২ রানে। অপর প্রান্তে চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করা মাহমুদউল্লাহ করেন অপরাজিত ১৯ রান।

এক পর্যায়ে ১৮ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২৭ রান। সেইখান থেকে ম্যাচটা বের করে আনেন মোসাদ্দেক। ফ্যাবিয়েন অ্যালেনের করা ২২তম ওভারে তুলে নিলেন ২৫ রান— ৬, ৬, ৪, ৬, ২, ১। ব্যাস জয়টা তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আর পরের ওভারের পঞ্চম বলে নিশ্চিত হয়ে যায় তা।

এর আগে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজও বড় রানের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। দুই ওপেনার শাই হোপ ও সুনিল আমব্রিস মিলে তুলে ফেলেছিলেন ১৩১ রান। এরপরই বৃষ্টি নামে। ক্যারিবীয়দের ইনিংসের তখন ২০.১ ওভারের খেলা চলছিল। হোপ অপরাজিত ছিলেন ৬৮* রানে। আর সুনিল ৫৯* রানে।

আবার খেলা শুরু হলে বাকি ওভারগুলো খেলে ১ উইকেটে ১৫২ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হোপ ব্যক্তিগত ৭৪ রানে আইট হন। সুনিল অপরাজিত থাকেন ৬৯* রানে। কিন্তু ডি/এল মেথডের জটিল হিসাবে বাংলাদেশের লক্ষ্য গিয়ে ঠেকে ২১০ রানের পাহাড়ে।

২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালের পর সাকিব-মুশফিকের সেই কান্নার দৃশ্য এখনও অনেকে ভুলতে পারেননি। তারও আগে, ২০০৯ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার মুরালিধরন হয়ে গিয়েছিলেন পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের স্বপ্ন থেকে গেল অধরা।

২০১৮ সালের শুরুতে শ্রীলঙ্কার নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে নিশ্চিত জয়ের ম্যাচটি বাংলাদেশের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছিলেন ভারতের দিনেশ কার্তিক। শিরোপা অধরাই থেকে গেল এবারও। এরপর এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলল বাংলাদেশ। কিন্তু শিরোপা আর হাতে আসলো না।

অবশেষে সেই অধরা স্বপ্নটা ধরা দিল বাংলাদেশের হাতের মুঠোয়। ডাবলিনের মালাহাইডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৫২ রান সত্ত্বেও বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য ২১০ রান। ওভার মাত্র ২৪টি। অসম্ভব এক লক্ষ্য। পুরোপুরি টি-টোয়েন্টি যাকে বলে। কিন্তু বুকে মনোবল আর অমিত সাহস নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলতে নেমে টাইগাররা।

 
Electronic Paper