দুর্ভাগা ইমরুল ও তাসকিন
ক্রীড়া প্রতিবেদক
🕐 ১০:৩৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০১৯
বিশ্বকাপের ঘোষিত দলে অভিজ্ঞ ওপেনার ইমরুল কায়েস ও পেসার তাসকিন আহমেদের স্থান না পাওয়া নিয়ে চলছে বিস্ময়। দীর্ঘদিন ধরেই তামিমের সঙ্গে ইমরুল কায়েসের বোঝাপড়াটা তুলনামূলক বেশ ভালো। দলকে বেশ কিছু কার্যকর জুটিও উপহার দিয়েছেন এই দুইজন। কিন্তু লিটন দাস নিয়মিত হওয়াতে ছন্দপতন ঘটল এই জুটির। তারপরও ইমরুলের না থাকাটা মেনে নিতে পারছেন না সমর্থকরা।
নির্বাচক হাবিবুল বাশার ইমরুলের না থাকার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন-‘ইমরুল কায়েস নিঃসন্দেহে দুর্ভাগা, কিন্তু এখানে আমরা সেরাদেরই নিয়েছি। এই যেমন লিটন দাস বা সৌম্য সরকার-উভয়েই দ্রুত রান তুলতে পারে। বিশ্বকাপের মতো জায়গায় দ্রুত রান তোলাটা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আসলে আমাদের লক্ষ্য মেরে খেলে এমন ক্রিকেটার নেওয়া।’
মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, যিনি ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক, তিনি মূলত বামহাতি ও ডানহাতির মিশ্রণের দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। যেহেতু তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার বাঁহাতি, তাই ইমরুল কায়েস এখানে জায়গা পাননি।
ওদিকে তাসকিন আহমেদের বাদ পড়া নিয়ে আছে জল্পনা-কল্পনা। কারণ তাসকিন দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন বিপিএলে। ২২ উইকেট নিয়ে ছিলেন সেরা দুইয়ে। সেরা বোলার সাকিব ২৩ উইকেট নিয়েছিলেন তাসকিনের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টেস্ট-দুই সিরিজেই তাসকিনকে দলে রাখতে দুবার ভাবেননি নির্বাচকরা। কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে গেল নিউজিল্যান্ড সফরের পাঁচ দিন আগে পাওয়া অ্যাঙ্কেলের চোটে। চোট কাটিয়ে ফেরার পর নির্বাচকরা বলছিলেন, ম্যাচ ফিটনেস নেই তাসকিনের।
ম্যাচ ফিটনেস তার আছে, সেটি প্রমাণ করতে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে একটা ম্যাচও খেলেছিলেন। কিন্তু সেটি যথেষ্ট মনে হয়নি নির্বাচকদের কাছে। তাসকিনকে বিশ্বকাপ দল তো বটেই, রাখা হয়নি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের অতিরিক্ত তালিকাতেও। মঙ্গলবার প্রসঙ্গটা তুলতেই নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না তাসকিন, কান্নাজড়িত কণ্ঠে ‘সবাই যেটা ভালো মনে করেছে, সেটাই করেছে’ বলে চলে গেলেন একাডেমি ভবনের ভেতরে।
ধাক্কাটা সামলে তাসকিন চোখে মুছে উঠে দাঁড়ান। ধীরে ধীরে পা বাড়ান জিমনেশিয়ামের দিকে। বললেন, ‘সুপার লিগ ভালোভাবে খেলব।’ পরক্ষণে আবার আবেগ স্পর্শ করে বসে তাকে, ‘মাশরাফি ভাইয়ের স্ক্রিপ্টই কি আমি অনুসরণ করছি? ভাইয়ের যা হলো, আমারও তা-ই!’
ক্রিকেট কখনো কখনো বড় নিষ্ঠুর হয়। সেই নিষ্ঠুরতার রূপ মাশরাফির চেয়ে বেশি দেখেছেন খুব কম ক্রিকেটারই। ক্যারিয়ারে এত চোট, এত ধাক্কা; স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গ হেঁটেছে তার দুই হাত ধরে! কিন্তু এটাও তো সত্য, যাতনা-বেদনা, আফসোস-হাহাকারের বিপরীতে থাকে প্রাপ্তির আনন্দ। ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে মাশরাফি যে যন্ত্রণা পেয়েছেন, সেটির বিপরীতে অনেক কিছুই পেয়েছেন। হয়েছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে সফলতম অধিনায়ক। যিনি খেলতে পারেননি দেশের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপ, তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো খেলেছে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, খেলেছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল।
বারবার ধাক্কা খাওয়ার পর মাশরাফি যতটা পথ হেঁটেছেন, তাসকিন ততটা পারবেন কি না, সময়ই তা বলে দেবে। কিন্তু মিনহাজুল আবেদীন অন্তত চাইলে এড়াতে পারতেন এই তাসকিন-ট্র্যাজেডি। নির্বাচকদের বিবেচনায় না থেকেও শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপ দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা তার চেয়ে ভালো আছে কার! ১৯৯৯ বিশ্বকাপের ব্লেজার পরে আজ দল ঘোষণা করতে এসেছিলেন প্রধান নির্বাচক। ২০ বছর আগে এই ব্লেজারটাই গায়ে চাপাতে কম কাঠখড় পোহাতে হয়নি তাকে।