সিরাজের আগুনে ভারতের অষ্টম শিরোপা
রাহুল রাজ
🕐 ৮:২৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩

দিনটি ছিলো শুধুই মোহাম্মদ সিরাজের! আর সিরাজ নামটি লঙ্কার ক্রিকেট টিম খুব সহজে ভুলতে পারবে না। দূরস্বপ্ন হয়ে কেড়ে নেবে রাতের ঘুম। গতকাল শ্রীলঙ্কার প্রথম সারির ছয়জন ব্যাটসম্যান সিরাজ তোপে স্রেফ ধুলোমতো উড়ে যায়। ফলে ছেলে খেলা প্রবাদের বাস্তব উদাহরণ ছিলো ১৬তম এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচ।
৫০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ইশান কৃষাণের ব্যাট থেকে যখন জয় সূচক রানটি আসে খেলার বয়স তখন মাত্র ৬.১ ওভার। ইশান ২৩ ও গিল ২৭ রানে অপারাজিত থাকনে। দুই দল মিলে ২১.৩ ওভার স্থায়ী ম্যাচটিতে শ্রীলঙ্কার জিতেছিলো শুধু টস। তার তাতেই ব্যাট করতে নামে লঙ্কানেরা। দিনের প্রথম চিৎকারটা ছিলো ভারতীয় দর্শকদের সেই চিৎকার শেষ হয়েছে ভারতের অষ্টম শিরোপা উঁচিয়ে ধরার মধ্য দিয়ে। ম্যাচের প্রথম ওভারের তৃতীয় বল। যশপ্রীত বুমরার বেরিয়ে যাওয়া সে বলে ব্যাট চালিয়েই ভুলটা করলেন কুশল পেরেরা। বল তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে জমা পড়লো ভারতীয় উইকেট কিপার লোকেশ রাহুলের গ্লাভসে।
শ্রীলঙ্কার দর্শকদের সিংহ মার্কা হলুদ-মেরুন পতাকার ওড়াউড়ি থেমে গেল ভারতীয় দর্শকদের উল্লাসে। মাঠে উৎসব বুমরাকে ঘিরে। প্রেমাদাসায় এরপর যা হয়েছে, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। টসে জিতে শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং তো নিল না, যেন মৃত্যুকূপে ঝাঁপ দিল! বৃষ্টির কারণে ৪০ মিনিট দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচে ৫.৪ ওভারে ১২ রান তুলতে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকেরা। মোহাম্মদ সিরাজ তখন পর্যন্ত ৩ ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়েই নেন ৫ উইকেট, বুমরার উইকেট ছিল ওই প্রথমটাই। ৫০ রান তুলতেই শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের লড়াই শেষ হয়ে যায়। লড়াই না বলে আত্মসমর্পণ বলাই ভালো। ১ ঘণ্টা ২৯ মিনিট এবং ১৫.২ ওভার স্থায়ী হওয়া শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ মাত্র ৫০ রানেই। শেষ পর্যন্ত ২১ রানে ৬ উইকেট নিয়ে সিরাজই ধসিয়ে দিয়েছেন স্বাগতিকদের। ২.২ ওভার বল করে মাত্র ৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়াও।
শুরুতে ভারতীয় পেসারদের গতি আর মুভমেন্ট অস্বস্তিতে ফেলেছিল শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু একটু সময় কাটালেই ব্যাটিংয়ের জন্য উইকেট হওয়ার কথা ছিল বেশ সহজ। শ্রীলঙ্কা ব্যাটসম্যানরা থাকতে পারলেন না সে সময়টুকুই! শ্রীলঙ্কার ৫ জন ফিরেছেন শূন্য রানে। মাত্র দুইজন পৌঁছাতে পেরেছে দুই অংকের ঘরে। সিরাজের ৭ ওভারের স্পেলে ছিলো ১ মেডেনসহ ২১ রানে ৬ উইকেট। শ্রীলঙ্কার এশিয়া কাপ স্বপ্ন দুমড়েমুছড়ে গেছে এমন অসাধারণ এক বোলিং স্পেলেই। মোহাম্মদ সিরাজের দুর্দান্ত এই বোলিং ফিগারের সুবাদে লঙ্কানরা গড়েছে নিজেদের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। তবে এদিন ৫০ রানে অলআউট হয়ে এশিয়া কাপেরই সর্বনিম্ন দলীয় স্কোরেও নাম উঠেছে তাদের। আর এমন লজ্জার দিনে বাংলাদেশকেও যেন কিছুটা রেহাই দিলো লঙ্কানরা।
আজকের ফাইনালের আগ পর্যন্ত এশিয়া কাপে দলীয় সর্বনিম্ন স্কোর ছিল বাংলাদেশের। ২০০০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ৮৭ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার সে রেকর্ড ভাঙলো শ্রীলঙ্কা। এশিয়া কাপের ফাইনালের ক্ষেত্রে অবশ্য আগের সর্বনিম্ন স্কোর ছিল ১৭৩ রানের। শ্রীলঙ্কা থামলো তার অনেক আগেই। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। আবার ভারতের বিপক্ষে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ডও এটি। লো স্কোরিং এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা অলআউট হয়েছে ৫০ রানে। ভারত ম্যাচ জিতেছে অনায়াসে। ১০ উইকেটের ব্যবধানে জয় পেয়েছে রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন দলটি। এশিয়া কাপের ফাইনালে উইকেটের হিসেবেও এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়। সিরাজের এই বোলিংয়ের কল্যাণে রেকর্ডবুকে এসেছে আরও বেশকিছু পরিবর্তন। বল বাই বল হিসেবে সবচেয়ে দ্রুততম ৫ উইকেটের তালিকার শীর্ষে আছেন এখন সিরাজ। এক ওভারে চার উইকেট পাওয়া চতুর্থ বোলার তিনি।
এশিয়া কাপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বোলিং ফিগারটাও এখন সিরাজেরই দখলে। ম্যাচের সেরা হয়েছেন সিরাজ। ম্যাচ জিতে ৪ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা পেয়েছেন তিনি। পুরস্কারের সেই টাকা পুরোটাই ফিরিয়ে দিয়েছেন সিরাজ। কলম্বোর মাঠকর্মীদের সেই টাকা দিয়েছেন তিনি। ভারতীয় এ বোলারের মতে, মাঠকর্মীদের জন্যই বৃষ্টির মধ্যেই খেলা সম্ভব হয়েছে। তাই নিজের পুরস্কার মূল্য তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন সিরাজ। এশিয়া কাপ শিরোপা পুনরুদ্ধার শেষে এবার ভারতের লক্ষ্য বিশ্বকাপ।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
