ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফিল্ডিংয়ে পতন রহস্য জানা নেই কারো

বদরুল আলম চৌধুরী
🕐 ৯:৫৪ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২২

ফিল্ডিংয়ে পতন রহস্য জানা নেই কারো

বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচের টিভি রাইটসে আগ্রহ কমে গেছে প্রতিষ্ঠানগুলোর। আগ্রহ কমে গেছে মূলত টাইগারদের খেলার ধরণে। টেস্টে ক্রিকেটারদের হতাশা জনক পারফরম্যান্সের কারণেই দিনকে দিন স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলো পিছু হটছে। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে মিলেছে তার নিদর্শন। আরেকটি কঠিন, ভয়াবহ ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরেছেন টাইগাররা। বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার প্রথম টেস্ট ম্যাচটি টিভিতে দেখার সুযোগ থাকলে হয়ত সমর্থকদের অতীত কষ্টটা আরও গভীরে রুপ নিতো।

অ্যান্টিয়াগোতে টস হেরে বাংলাদেশ প্রথমেই ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে নিজেদের তথা কথিত ব্যর্থতা দেখিয়ে যান। প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়ে ১০৩ রানে অল আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংস ব্যাটিংরত বাংলাদেশ। এই রিপোর্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ গতকাল তৃতীয় দিনের ব্যাটিং করছেন।
মাঝখানে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঠিকই রানের চাকা ঘুরিয়েছেন। সব কয়টি উইকেটে ২৬৫ রান সংগ্রহ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

একই মাঠে দুই দলের ব্যবধানটা শুধুই ব্যাটিংয়েই নয়,ছিলো ফিল্ডিংয়ে টাইগারদের মিস ফিল্ডিংয়ের ব্যর্থতাও। এই একটি জায়গা এগিয়ে থেকে অ্যান্টিয়াগো টেস্টের ড্রাইভিং সিটে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ম্যাচের দ্বিতীয় দিনেই অল আউটের পর সাকিব বাহিনীর ক্রমাগত মিস ফিল্ডিং স্বাগতিকদের আড়াইশতাধিক রানে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। এই একটি জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। কেন আসতে পারছেন না, তা জানা নেই ক্রিকেটারদের! গত এক বছরের টেস্টে ৬৯টি ক্যাচের মধ্যে ২৪টিই মিস করেন টাইগাররা। অ্যান্টিয়াগো টেস্টের দ্বিতীয় দিনে মিলেছে ক্যাচ মিসের চিরায়িত দৃশ্য। সকালের সেশনেই তিনটি ক্যাচ মিস করেন সাকিব বাহিনী।

ফিল্ডারদের ক্যাচ মিসের কারণেই বোলারদের সাফল্য মাটি হয়ে যায়। যদিও শেষ বিকালে মেহেদী হাসান মিরাজ ও লিটন কুমার দাস বেশ কিছু ভালো ক্যাচ ধরেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে ক্যারিবীয়রা ১৬২ রানের লীড তুলে নেয়। ক্যাচ মিস না হলে হয়ত ম্যাচের দৃশ্যটি এমন হতো না। সারাদিনে বাংলাদেশ পাঁচটি ক্যাচ ড্রপ করে।

শুধু তাই নয় ডিআরএস এর সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও ব্যর্থতা দেখিয়েছেন টাইগাররা। বিশেষ করে জারমেইন ব্লাক উড ৩৯ রানে এলবিডব্লি আউট হয়ে যেতেন, যদি তারা ডিআরএস নিতেন। কিন্তু তারা তা করেন নি। সুযোগ পেয়ে জারমেইন ব্লক উড শেষ নিজের ইনিংসকে নিয়ে যান ৬৩ রানে। এছাড়া ক্রেইগ ব্যথওয়েট। যিনি গত এগার বছর বাংলাদেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করছেন। তিনিও এদিন ও তিনবার লাইফ পেয়ে দল এবং নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেন। ৯৪ রান করতে গিয়ে তিনি ০, ১৬ এবং ৬৩ রানে জীবন ফিরে পান। এদিকে বোনার্ড মাত্র ৩৩ রান করলেও তিনি তৃতীয় উইকেটে ব্রাথওয়েটের সঙ্গে জুটিতে ৬২ রান যোগ করেন।

চলতি বছরটাই যেন টাইগারদের ক্যাচ মিসের বছর চলছে। টি-টুয়েন্টিতেও তারা চরম ক্যাচ মিসের মহড়া দেখিয়েছেন। এই ভার্সনে ৮৪ ক্যাচের মধ্যে ৩৯টিই মিস করেন টাইগাররা। এ থেকে বেরিয়ে আসার যেন কোন কারণই খোঁজা হচ্ছে না। ক্রিকেট বিজ্ঞদের মতে, এ থেকে বেরিয়ে আসতে দরকার প্রত্যেক ফিল্ডারের সচেতনতা।

বাংলাদেশের শান্ত, ইয়াছির আলী(বর্তমানে ইঞ্জুরি), লিটন (কিপিং করছেন না) স্লিপে ফিল্ডিং করছেন। কিন্তু শান্ত পাঁচটি ক্যাচ মিস করেছেন গত তিন বছরের ফিল্ডিংয়ে। বর্তমানে এমন একজন খেলোয়াড়ের সমালোচনা চলছে যিনি তার শেষ সতের টেস্ট ইনিংসে মাত্র একটি ফিফটি করেছেন।
এটাই তাদের সত্যিকারের সমস্যা। কিন্তু বিষয়টি যখনি উঠে আসে তখনি বিসিবি এবং টিম ম্যানেজমেন্ট রক্ষণাত্মক হয়ে যায়। তবে একজন ফিল্ডিং কোচ জানেন সম্ভবত কি ঘটেছে। কিন্তু জন সম্মুক্ষে ব্যাখ্যার জন্য তাকে খুব কমই রাখা হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ বেশ কয়েকজন বিশেজ্ঞদের কাছে ঘুরেছে। ব্রায়ান কুক এসেছেন এবং গিয়েছেন। রাজিন সালেহকে সাময়িকভাবে একটি সিরিজের জন্য রাখা হয়েছিলো। সে দায়িত্বে আছেন এখন ম্যাকডারমেট। কিন্তু তাতেও কোন ফল আসছে না।

প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো এ বছর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফিল্ডারদের গুরুতর সমালোচনা করেন। যারা পাঁচটি সাদা বলের লড়াইয়ে নয়টি ক্যাচ মিস করেন। ডমিঙ্গো স্বীকার করছেন যে কেন এমনটি ঘটেছে তা তার জানা নেই। বলেছিলেন, ‘সত্যি এটি অবিশাস্য যখন আপনি এটি চিন্তা করবেন। সমস্যা সম্পর্কে যদি আমরা জানতাম, আমরা সম্ভবত এটি করতাম না।’ যদিও নির্বাচক হাবিবুল বাশার টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় বলেছিলেন, ফিল্ডারদের উপর চাপ থাকার কারণে এমনি হয়েছে।

তিনি বলেছিলেন, ‘ আপনার ব্যাটিং বা বোলিংয়ে ভালো দিন বা খারাপ দিন যেতে পারে তবে ফিল্ডিংয়ে আরও ধারাবাহিক হতে হবে। মিস ফিল্ডিং দলের গতি নষ্ট করে। আমরা একটি ভালো ফিল্ডিং দল। কিন্তু এই এলাকায় আমি আরও উন্নতি দেখতে চাই।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ফিল্ডিংয়ে আমাদের প্রচুর অনুশীলন করা দরকার। যখন আমরা ঘরের মাঠে কিংবা বড় কোন টুর্নামেন্ট খেলি, তখন আমাদের মনস্তাত্বিক দিক সামলানো দরকার। কিন্তু আমরা সেটা করতে পারছিনা। আমাদের কিছু সেরা ফিল্ডাররা ক্যাচ মিস করছেন। এদিকটায় আমাদের দ্রুত সেরে উঠা উচিত।’

অন্যান্য অনেক টেস্ট দলের মতো বাংলাদেশও ডিআরএস নিয়ে লড়াই করছেন। আগের টেস্ট অধিনায়ক মমিনুল হক কেন তার এতোগুলো রিভিউ খারাপ হয়েছে সেগুলোর উত্তর সঠিক দিতে পারেন নি। এবার সাকিব আল হাসানের পালা।

বোলিং লাইন আপ নিয়ে তেমন কোন প্রশ্ন নেই। কিন্তু ফিল্ডিং ইউনিট নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করা জরুরী হয়ে উঠেছে। কারণ একটি ক্যাচের জন্য পুরো দলকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।

 

 
Electronic Paper