ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

“স্বাধীনতা দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা”

ফয়সাল আহমেদ
🕐 ১২:০১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৬, ২০২২

“স্বাধীনতা দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা”

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ২৫ মার্চ ছিল একটি নির্মম গণহত্যার দিন।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের ফলশ্রুতিতে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে নয় মাস ব্যাপী স্বাধীনতার লড়াই।

বঙ্গবন্ধু কেবল বাংলাদেশের নন, গোটা বিশ্ব ব্যবস্থায় বিবেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি উদাত্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, 'বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত- শোষক ও শোষিত। শেখ মুজিব শোষিতের পক্ষে।' তাই আজও পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে স্বাধীনতা বা স্বাধিকারের প্রশ্ন এলে একজন শেখ মুজিবের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।

এই স্বাধীনতা দিবসে তরুণদের ভাবনা ও প্রত্যাশা নিয়ে দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছেন ফয়সাল আহমেদ (ফাহিম)।

স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু:

স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তী পেরিয়ে ৫১ এ পা দিলো বাংলাদেশ। মহান স্বাধীনতার এই শুভক্ষণে দাঁড়িয়ে প্রথমেই যাঁকে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চাই তিনি আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক, বাঙ্গালী জাতির রক্ষাকবচ, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে অর্থাৎ ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনার মধ্য দিয়েই আমরা আজকের এই দিনটি পেয়েছি। স্বাধীনতার ৫১ তম বছরে দাঁড়িয়ে আমরা শেখ মুজিবের সেই সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিতে চাই। আর এই লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি প্রতিটি শিক্ষার্থীর দায়িত্ব দেশ চেতনায় নিজেকে উৎসর্গ করা। ঠুনকো রাজনীতি কিংবা সব ধরনের হিংসা-বিদ্বেষ থেকে বেরিয়ে এসে সকল মানুষের কল্যানে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে। প্রতিটি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।আর কোনো শিক্ষার্থী যেনো ধর্ষন কিংবা নির্যাতনের শিকার না হয়, রাস্তায় যেনো আমার কোনো শিক্ষার্থী ভাই-বোনের রক্তাক্ত দেহ পড়ে না থাকে। মহান এই স্বাধীনতা দিবসে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এটাই আমার প্রত্যাশা। সকলকে জানাই মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।

আফিফা নারগিস, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ,নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস:

২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস।বাঙালির শৃঙ্খল মুক্তির দিন আজ। মহান স্বাধীনতা এবং বিজয় দিবস, দিনটি বাঙালি জাতির জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্য পূর্ণ একটি দিন।ঘুমন্ত বাঙ্গালী জাতির উপর ২৫ শে মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নৃশংস হত্যাকান্ড চালায় যা অপারেশন সার্চ লাইট নামে পরিচিত।এই ভয়াল ২৫ শে মার্চের কালো রাত্রী সারি সারি লাশ আর হাজার মায়ের কান্না এবং রক্তে রাঙ্গানো সূর্য উঠার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চদিনটি।২৬ শে মার্চ রাত ১২ টার কিছুক্ষণ পর বাঙালি জাতি সূর্য সন্তান স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে বাঙ্গালীকে স্বাধীন জাতি বলে ঘোষণা করেন।তার ঘোষণার পর থেকে বাঙ্গালী জাতি নিজেদের স্বাধীন হিসেবে মনে করে এবং পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে শুরু হয় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।বাঙ্গালী জাতি মৃত্যুর ভয়কে পাশকাটিয়ে জয় বাংলা শ্লোগান নিয়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দিকে এগিয়ে যায় হাজারও ছাত্র,তরুণ যুবক, কৃষক দিনমজুর,সর্বোপরী সাধারণ মানুষ।তারা পাকিস্তানি বাহিনীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য,তাদের ভাষা রক্ষার জন্য, রক্ষার জন্য তাদের ভূখণ্ড। এই অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে শহীদ হয় ৩০ লক্ষ মানুষ এবং ৩ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয় ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটারের এক স্বাধীন ভূখণ্ড।আজকের এই দিয়ে মনে প্রাণে স্মরণ করি বাংলার সূর্য সন্তানদের। যাদের জন্য আজকে পেয়েছি আমাদের এই স্বাধীন ভূখণ্ড!

ইয়াছিন মোল্লা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।

স্বাধীনতার দাবি:

বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার করেছে। দীর্ঘ এই পথচলায় বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ নিজেদের অবস্থান বিশ্বের দরবারে ধরে রেখেছে। বিশ্ব পরাশক্তিগুলোর অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে আজ আমাদের স্বাধীনতা নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। নিজেদের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা, আইনের সু-শাসন নিশ্চিত করা, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধে নিজেদের সাংস্কৃতিক বলয় তৈরি করা, গনতন্ত্র রক্ষায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরি এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা স্বাধীনতার প্রধান দাবী । স্বাধীনতার এতো বছর পর এসেও শিক্ষার মান দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ । দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ নেই বললেই চলে। শিক্ষাহীন জাতি কখনো এগিয়ে যেতে পারে না। তাই, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীউত্তর এই সময়ে শিক্ষা এবং গবেষণার মান নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।


নাহিদুল ইসলাম, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

শহিদদের সম্মানে:

বিশ্বের বুকে এক অপরাজেয় জাতি বাঙালি । যদি আমরা পাক-বাহিনীর কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারি, তা হলে আজ কেনো আমরা দেশের অভ্যন্তরীণ দলাদলি, রাজনৈতিক অস্থিরতা,দুর্নীতি, লোটপাট,ঘুষ ও পাশবিকতাকে পরাভূত করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি না? প্রতিটা বাংলাদেশীর মতো আমিও স্বপ্ন দেখি বেকারত্ব, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশের। কিন্তু,আজকাল নাগরিক জীবনের স্বাধীনতা ক্ষুণ হচ্ছে দুর্নীতি ও অসাধুতার কারণে। যেটা আমাদের স্বাধীনতাকে অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ করে । তাই এই স্বাধীনতার মাসে সবার প্রত্যাশা হোক দুর্নীতি ও অসাধুতাকে রোধ করে স্বাধীনতার রঙে জীবনকে সাজিয়ে শহিদদের আত্মত্যাগকে সম্মান করার।

মো.ফাহাদ বিন সাঈদ, ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়:

প্রায় হাজার বছর ধরে বাঙালি এসব মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে। যে অর্থে বাংলাদেশ আজ স্বাধীন, সে অর্থে বাংলাদেশ এর পূর্বে আর কখনো স্বাধীন ছিল না। তাই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাঙালি জাতির পিতা যে মূল্যবোধের জন্য বাঙালি সহস্র বছর সংগ্রাম করেছে, সেই মূল্যবোধসমূহ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের শাসন মূলে অন্তর্ভুক্ত করার যে পরিকল্পনা নিয়ে ছিলেন, তার স্বার্থক রূপ দিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা নতুন প্রজন্মের তরুনরা বিজয় দেখিনি, কিন্তু এই বিজয়ের আত্মকথা শুনেছি এবং জেনেছি। তাই আমাদের ও উচিত জাতীয় আবেগ "মহান মুক্তিযুদ্ধ" সম্পর্কে সচেতন হওয়া। সবার মাঝে বিজয়ের আত্মকথা ছড়িয়ে দেওয়া। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তরুণকে মাদক, ঘুষ, দুর্নীতি, দারিদ্র্য, সস্ত্রাস, যৌন নিপীড়ন ও অশিক্ষার বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশের এখনো অনেক শিক্ষিত যুবক বেকারত্ব নিয়ে হতাশ। বর্তমান যুবসামাজের চাওয়া যেনো কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে চায়। তাই তরুণরা মাঝে জাগ্রত করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ। এত শত ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের মর্যাদা রক্ষা করার দায়িত্ব তরুণদের।

এম রাসেল মাহমুদ রিপন, বিএসসি বিভাগ, নর্থদান ইউনিভার্সিটি।

স্বাধীনতা দিবসের শপথ হোক দুনীর্তিমুক্ত বাংলাদেশ:

পৃথিবীর একমাত্র জাতি হিসেবে আমরা যেমনি ভাষার জন্য যুদ্ধ করেছি, তেমনি পাকিস্তানের মত হানাদার শক্তিকে মোকাবেলা করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। পৃথিবীর ইতিহাসে বাঙালী জাতি এক স্বাধীন জাতি হিসেবে যুদ্ধ জয়ের গল্প লিখেছেন। ২৫ মার্চ কালোরাত বাঙালী হৃদয়ে আজও অমর। তাজা রক্তের বন্যায় লাল হয়েছিল এই বাংলা। সেদিন নিরস্ত্র বাঙালীকে পৃথিবী থেকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বে মাত্র ৭ কোটি জনগণ ঝাপিঁয়ে পড়েছিল যুদ্ধে। সেদিন বঙ্গবন্ধু শপথ নিয়েছিলেন একটি সোনার বাংলাদেশ গড়ার। কিন্তু একবিংশ শতকে এসে সোনার এই বাংলাকে গিলে খাচ্ছে দুর্নীতি নামক ব্যাধি। এজন্য শুধু সরকার, আমলা নয়, জনগণও দায়ী। জনগণ নিরবে নিভৃতে মেনে চলছে এই অনিয়ম, দুর্নীতিগুলাে। প্রতিবাদ কিংবা প্রতিহত করছেনা কেউই। ৩০ লক্ষ শহিদের বিনিময়ে পাওয়া এই বাংলাদেশ হোক দুনীর্তিমুক্ত। আর এই হোক এবারের স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার।


এবিএস ফরহাদ, নৃবিজ্ঞান বিভাগ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

স্বাধীনতা দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্তাশা

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ২৫ মার্চ ছিল একটি নির্মম গণহত্যার দিন।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের ফলশ্রুতিতে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে নয় মাস ব্যাপী স্বাধীনতার লড়াই। বঙ্গবন্ধু কেবল বাংলাদেশের নন, গোটা বিশ্ব ব্যবস্থায় বিবেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি উদাত্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, 'বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত- শোষক ও শোষিত। শেখ মুজিব শোষিতের পক্ষে।' তাই আজও পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে স্বাধীনতা বা স্বাধিকারের প্রশ্ন এলে একজন শেখ মুজিবের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।

 
Electronic Paper