রূপপুর যেন এক টুকরো রাশিয়া
শমিত জামান, ঈশ্বরদী (পাবনা)
🕐 ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০২১
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। মাত্র ছয় বছর আগে যে এলাকা সীমাবদ্ধ ছিল ফাঁকা মাঠ আর কাঁটাতারের বেড়ায় আটকানো দু-একটি অস্থায়ী স্থাপনায়। সেই এলাকা এখন বিপণি বিতান বিদ্যালয়, সুউচ্চ ভবন, হোটেল রেস্টুরেন্টে মুখরিত। এখানে এলে হঠাৎ দেখে বোঝার উপায় নেই বাংলাদেশ নাকি রাশিয়া, বলছিলাম বদলে যাওয়া পাবনার রূপপুরের কথা।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে ঘিরে হাজারো রুশ নাগরিক কাজ করছেন রূপপুরে। এখানকার বাজারঘাট, দোকানপাট রেস্তোরাঁয় বাংলা ভাষার পাশাপাশি চলছে রাশিয়ান ভাষার প্রচলন। সাইনবোর্ডগুলোতে বাংলা-ইংরেজির পাশাপাশি রাশিয়ান ভাষাও লেখা দেখা গেছে। বোঝার উপায় নেই এটা বাংলাদেশ নাকি রাশিয়ার কোনো নগরী। ফল ও সবজি বিক্রেতারাও রাশিয়ান ভাষা শিখেছেন। তারা রাশিয়ান ভাষায় কথা বলছেন। তাদের মতে, রাশিয়ানদের সঙ্গে মালামাল ক্রয়-বিক্রয় করতে করতে তাদের ভাষা শিখেছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ পরিবর্তনের পেছনে ভূমিকা রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের। শুধু রূপপুর নয়, পার্শ্ববর্তী পাকশী, সাহাপুর ও ঈশ্বরদী শহরেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। পাল্টে গেছে জীবনচিত্র। পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর পাশেই নদীতীরে চলছে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের সবচেয়ে মেঘা প্রকল্পের কাজ। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ শুরুর পর থেকে বদলে যেতে থাকে এলাকার চিত্র। পাল্টে যায় জীবনযাত্রার মান। রূপপুর প্রকল্পে কাজের সুযোগ পেয়েছেন কয়েক হাজার বেকার যুবক। তাদের ভাগ্য যেমন বদলে গেছে, তেমনি বদলে গেছে সামাজিক চিত্রও। বেড়েছে জমির দাম।
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্স জানান, এই প্রকল্পে কমবেশি ২০ হাজার প্রকৌশলী-শ্রমিক সর্বদা কাজ করছেন। রাশিয়া, বেলারুশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় দুই হাজার বিদেশি শ্রমিক ও কর্মকর্তারা দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। এর বাইরে চারপাশে গড়ে ওঠা হোটেল, রিসোর্ট, বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো কর্মহীন মানুষের।
তিনি বলেন, বিদেশি নাগরিকদের কেনাকাটাসহ দৈনন্দিন নানা প্রয়োজন মেটাতে পাকশী, সাহাপুর, রূপপুর ও ঈশ্বরদী শহরে গড়ে উঠেছে একাধিক বিপণিবিতান, আধুনিক শপিংমল, সুপার শপ, রিসোর্ট ৫ তারকা হোটেল। উন্নতমানের হাসপাতালও নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের কারণে উপজেলার প্রায় সব এলাকার রাস্তাঘাট নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে বড় পরিবর্তন।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী এনামুল কবীর জানান, প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই উপজেলায় ১০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মিত হয়েছে। নতুন করে ঈশ্বরদীতে ২৬ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। এই কয়েক বছরে যতটা উন্নয়ন হয়েছে বিগত ৫০ বছরেও এমন কাজ হয়নি। পশ্চিম রেল পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহিদুল ইসলাম জানান, রূপপুর প্রকল্পের ভারী যন্ত্রপাতি রেলপথে আনা-নেওয়ার জন্য ৩৩৫ কোটি টাকা খরচে ২৬ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মিত হয়েছে।