ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বজরা শাহী মসজিদ

সাত পুরুষের ইমামতি

মো. ইমন
🕐 ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ০৩, ২০২১

সাত পুরুষের ইমামতি

ভারত উপমহাদেশে মুঘল আমলে স্থাপত্যশৈলীর বিকাশ ঘটে। সে সময়ের অনেক স্থাপত্য ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঠাঁই করে নিয়েছে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। মুঘল আমলের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা গ্রামেও। সেখানে রয়েছে মসজিদ। নাম বজরা শাহী মসজিদ। প্রায় ৩০০ বছর আগের মসজিদটি আজও দৃষ্টিনন্দন। সেখানে সাত পুরুষ ধরে ইমামতি করছে ছিদ্দিক পরিবার।

ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বক্কর ছিদ্দিকির (রা.) বংশধর ও মক্কা শরিফের বাসিন্দা হজরত মাওলানা শাহ্ সুফি আবু ছিদ্দিকি ১৭৪১ থেকে ১৭৯৬ সাল পর্যন্ত প্রথম ইমামের দায়িত্ব পালন করেন। ১৭৯৬ সালে তার মৃত্যুর পর ছেলে হজরত মাওলানা ইসমাইল ছিদ্দিকি ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত ইমামতি করেন। মাওলানা ইসমাইল ছিদ্দিকির পর তার ছেলে হজরত মাওলানা মির্জা আবুল খায়ের ছিদ্দিকি ১৮৯০ সাল পর্যন্ত ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মির্জা আবুল খায়ের ছিদ্দিকির পর তার ছেলে আলহাজ হজরত আলী করিম ছিদ্দিকি ১৮৯০ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত ইমাম ছিলেন। ১৯২৭ সালে আলী করিম ছিদ্দিকির মৃত্যুর পর ইমাম হিসেবে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তার ছেলে আলহাজ হজরত মাওলানা গোলাম মাওলা ছিদ্দিকি। মাওলানা গোলাম মাওলা ছিদ্দিকির মৃত্যুর পর থেকে ১৯৭২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তার ছেলে মাওলানা আব্দুল্লাহ ছিদ্দিকি। ১৯৯৫ সালে মাওলানা আব্দুল্লাহ ছিদ্দিকির মৃত্যুর পর থেকে বর্তমানে মসজিদের সপ্তম ইমাম হিসেবে দায়িত্বে আছেন তার ছেলে মাওলানা ইমাম হাসান ছিদ্দিকি।

নোয়াখালীসহ পুরো বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচারে বজরা শাহী মসজিদের ঐতিহাসিক অবদান রয়েছে। ১২তম মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহের রাজত্বকালে ১৭৪১-৪২ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন জমিদার আমান উল্লাহ। এরপর ব্রিটিশ ভারতে ১৯১১ থেকে ১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে বজরা জমিদার খান বাহাদুর আলী আহমদ ও খান বাহাদুর মুজির উদ্দিন আহমদ মসজিদটি মেরামত করেছিলেন এবং সিরামিকের মোজাইক দিয়ে সাজিয়েছিলেন।

বজরা শাহী মসজিদের ঐতিহ্য রক্ষা এবং দুর্লভ নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য ১৯৯৮ সালের শেষে যুক্ত হয় বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। মসজিদটি বর্তমানে ভালো অবস্থায় সংরক্ষিত এবং এটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সুরক্ষিত স্থানগুলোর তালিকাতেও রয়েছে। আমাদের দেশের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।

বাজরা শাহী মসজিদে প্রবেশের পথ মসজিদের মতোই মোজাইক দিয়ে সাজানো। মসজিদের পূর্ব দিকে তিনটি দরজা রয়েছে। তিনটি দরজা বরাবর কিবলা দেয়াল রয়েছে যার অভ্যন্তরে তিনটি মিহরাব রয়েছে। মাঝের মিহরাবটি অন্য দুটির থেকে অপেক্ষাকৃত বড়। এছাড়া উত্তরে ও দক্ষিণে একটি করে মোট পাঁচটি দরজা রয়েছে মসজিদে।

এ মসজিদের অভ্যন্তরে বহু-শিখরের খিলান দিয়ে তিনটি ভাগে ভাগ করা। মসজিদের অভ্যন্তরীণ দুটি কক্ষ আছে যা বহুখাঁজবিশিষ্ট আড়াআড়ি খিলান দিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত। ছাদের উপর তিনটি কন্দাকৃতির গম্বুজ আছে যা অষ্টকোনাকার। এগুলো শীর্ষ পদ্ম ও কলস চূড়া দিয়ে সাজানো। মসজিদটি আয়তাকার, উত্তর দক্ষিণে লম্বা। বাইরের চার কোণায় অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ রয়েছে। দরজা বাইরের দিকে অভিক্ষিপ্ত এবং দরজার উভয় পাশে সরু মিনার রয়েছে।

ঐতিহাসিক এ মসজিদ ঘিরে রয়েছে অনেক জনশ্রুতি। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান এই মসজিদে আসে। তারা দান ও মানত করেন।

 
Electronic Paper