ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঘুরে আসুন উত্তরবঙ্গ

শাহাদৎ হোসেন মিশুক
🕐 ৯:৩৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০১৮

ইতিহাস ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দেশের উত্তরবঙ্গ। ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এ দর্শনীয় জায়গাগুলো। লেখাগুলো গ্রন্থনা করেছেন শাহাদৎ হোসেন মিশুক


রংপুরের ভিন্নজগত
বেসরকারিভাবে প্রায় ১০০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই বিনোদন কেন্দ্রটি সারাক্ষণ নানা জাতের পাখির কোলাহলে মুখরিত থাকে। এর গাছে গাছে দেখা যায় নানান প্রজাতির পাখি। সন্ধ্যা হলেই তারা তাদের নীড়ে ফিরে আসে। ভিন্নজগতে শোভা পাচ্ছে দেশি-বিদেশি হাজারও বৃক্ষ। এখানে দর্শনার্থীরা গাছের ছায়ায় সারাটা দিন ঘুরে বেড়াতে পারেন। ভিন্নজগতের প্রধান ফটক পার হলেই তিন দিকের বিশাল লেকঘেরা নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা শেষ হলেই সামনে পড়বে লোহার ১টি ব্রিজ। ব্রিজটি পার হলেই ভিন্নজগতের ভেতর যেন আরেকটি ভিন্নজগত।
এখানে রয়েছে আধুনিক বিশ্বের বিস্ময় এবং দেশের প্রথম প্লানেটোরিয়াম। রয়েছে রোবট স্ক্রিল জোন, স্পেস জার্নি, জল তরঙ্গ, সি প্যারাডাইস, আজব গুহা, নৌকা ভ্রমণ, শাপলা চত্বর, বীরশ্রেষ্ঠ এবং ভাষাসৈনিকদের ভাস্কর্য, ওয়াক ওয়ে, থ্রিডি মুভি, ফ্লাই হেলিকপ্টার, মেরি গো রাউন্ড, লেক ড্রাইভ, সুইমিং পুল স্পিনিং হেড, মাছ ধরার ব্যবস্থা। একই সঙ্গে রয়েছে অন্তত ৫০০ পৃথক দলের পিকনিক করার ব্যবস্থা। শুধু ভেতরেই রয়েছে অন্তত ৮-৯শ গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা। কটেজ রয়েছে ৭টি। রয়েছে থ্রি-স্টার মডেলের ড্রিম প্যালেস। এখানকার জলাশয়ে রয়েছে নৌভ্রমণের সুবিধা।
শিশুদের জন্য রয়েছে ক্যাঙ্গারু, হাতি, ঘোড়াসহ নানা জীবজন্তুর মূর্তি। ভিন্নজগতের জলাশয়ের চারধারজুড়ে রয়েছে পরিকল্পিতভাবে রোপিত নানা জাতের শোভাবর্ধনকারী গাছ। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন, বাস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, রিকশা, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে প্রচুর মানুষ বেড়াতে আসেন এখানে। ভিন্নজগতে থাকা-খাওয়াসহ সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। ভিন্নজগতে রয়েছে নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা। এখানে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় বেশকিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত আছেন। ভিন্নজগতের প্রবেশমূল্য ২০ টাকা। এ ছাড়া ভেতরের প্রতিটি রাইডের জন্য আলাদা করে ৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়া মসজিদ
ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে উত্তর দিকে পঞ্চগড় মহাসড়ক ধরে ১০ কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই ভুল্লিবাজার। বাজার থেকে ডান দিকে তিন কিলোমিটার দূরে বালিয়া গ্রাম। সরু পাকা রাস্তা দুই পাশে ঘন গাছপালা যেন সবুজ রাজ্যের প্রবেশদ্বার। আর একটু সামনে তাকালেই মনে হবে যেন মোগল স্থাপত্যের নিদর্শনসমৃদ্ধ কোনো এলাকায়। গাছগাছালিঘেরা লালচে স্থাপনা। উঁচু গম্বুজ উঁকি দিচ্ছে। ছায়ামাখা শান্ত পরিবেশ। সদর দরজা, খোলা চত্বর আর মূল দালান তথা নামাজঘর এই তিন অংশ নিয়েই মসজিদ কমপ্লেক্স। ঢাকার বিভিন্ন মোগল স্থাপনাগুলোর সঙ্গে বেশ মিল।
মসজিদে কোনো পিলার নেই। একটি প্ল্যাটফর্মের ওপর ৪২ ইঞ্চি প্রশস্ত দেয়ালের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এটি। মসজিদের ভিত্তি পর্যন্ত এই প্রশস্ততা বেড়েছে। প্ল্যাটফর্মের দেয়াল একেবারে নিচের দিকে ৭৪ ইঞ্চি চওড়া। মাটির নিচে সেটি আরও বেশি। আয়তাকার এই মসজিদ উত্তর-দক্ষিণে ৬৯ ফুট ২ ইঞ্চি আর পূর্ব-পশ্চিমে ৬২ ফুট ৬ ইঞ্চি দীর্ঘ। মূল ভবনটি পূর্ব-পশ্চিমে ২৫ ফুট ১১ ইঞ্চি প্রশস্ত। প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাদের উচ্চতা ১৭ ফুট। মসজিদটিতে হাতে তৈরি ইটের সঙ্গে চুন-সুরকি ব্যবহার করা হয়েছে। লালচে ইট কেটে তৈরি করা হয়েছে নানা রকমের নকশা। অলংকৃত নকশাগুলো ঘণ্টা, আমলকি, কলস-বাটি ও পদ্ম আকৃতির। যা অত্যন্ত সুনিপুণভাবে বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা। দেয়ালে কোনো রকমের আস্তরণ নেই। সেই পুরনো অবয়বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ওপরে তৈরি করা হয়েছে তিনটি সুউচ্চ গম্বুজ। মসজিদের প্রধান ফটকের দৈর্ঘ্য ২১ ফুট, প্রস্থ ৯ ফুট। বিশাল আকৃতির সদর দরজাটিই এ মসজিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এরকম ফটকওয়ালা মসজিদ এ অঞ্চলে চোখে পড়ে না। ইতিহাস থেকে জানা যায়, পাইগুড়ি অঞ্চলের মহারাজ নৃপেন্দ্র নারায়ণের অধীনস্থ শালবাড়ী পরগণার স্থানীয় বালিয়ার জমিদারকন্যা গুলমতি চৌধুরানীই মূলত, এই মসজিদের নির্মাতা বলে জানা যায়। তবে সব কর্মকাণ্ড তদারকি করতেন তার স্বামী মেহের বক্স চৌধুরী। তার পূর্বপুরুষ মোগলদের সঙ্গে এই এলাকায় আসেন বলে জানা যায়। স্বামীর আগ্রহেই ১৮৬০ সালের দিকে মসজিদ তৈরির কাজ শুরু করেন গুলমতি চৌধুরানী।

কুড়িগ্রাম পর্যটন ও ঐতিহ্য
কুড়িগ্রাম জেলার পর্যটন শিল্পে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এ জেলার চিলমারী নৌবন্দরটি স্বাধীনতার পূর্বকালে এ অঞ্চলে একটি বৃহত্তর নৌবন্দর ছিল। সম্প্রতি এ বন্দরটির পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সরকার এটিকে নৌবন্দর হিসেবে ঘোষণা করেছে। কুড়িগ্রামে রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ও প্রাচীন নিদর্শন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নয়ারহাটে (রাজারহাট) মুঘল আমলে মসজিদের ধ্বংসাবশেষ (১১৭৬ হিজরি), ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাটেশ্বরী বাজারের কাছে একটি পুরনো মসজিদের ধ্বংসাবশেষ (মুঘল আমল), মজিদেরপাড় গ্রামের ৩ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ (মোগল আমল) আরবি ভাষায় খোদিত মসজিদের শিলালিপি, জয়মনির জমিদারবাড়ি, বিডিআর গেটে রক্ষিত পাংগা রাজ্যের ২টি কামান, নাওডাংগা (ফুলবাড়ী) পরিত্যক্ত জমিদারবাড়ি ও মন্দির, রাজারহাটের পাঙ্গেশ্বরী মন্দির ও পাংগারাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ, দাসেরহাটের (কুড়িগ্রাম সদর) বিশালাকার কালী মূর্তি, ভিতরবন্দের জমিদারবাড়ির সামনে মঙ্গলচণ্ডী, কামাখ্যাদেবী লক্ষ্মী ও সত্যনারায়ণের বিগ্রহ এবং উলিপুরের কালী সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। কুড়িগ্রামে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ও বধ্যভূমি।
এগুলোর অবস্থান হলো- কুড়িগ্রাম ফুড অফিস, জজ কোর্ট, এসপি বাংলোর সামনে, জেলগেট, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনের পেছনে, ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালের পেছনে, উলিপুর বাংলো, হাতিয়া দাগার কুঠি, ধরনীবাড়ী মধুপুর (উলিপুর, তিনটি স্থানেই স্মারকস্তম্ভ রয়েছে); এবং ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের বাগভাণ্ডার গ্রামে আলতাফউদ্দিন কমপাউন্ডারের বাড়ির পেছনে। স্মৃতিস্তম্ভ; কুড়িগ্রাম কলেজ মোড়, চণ্ডিরুকুর (নাগেশ্বরী), শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলক ঘোষপাড়া, কুড়িগ্রাম, উলিপুর মুক্তিযোদ্ধা অফিসের সামনে ১৮ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নামফলক।

গাইবান্ধার বালাসী ঘাট
গাইবান্ধা জেলার দর্শনীয় স্থান বালাসী ঘাট। গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান।
এখানে প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী উপজেলা, জেলার পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক বালাসী ঘাটের প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখার জন্য আসেন। বালাসী ঘাট প্রাকৃতিক দৃশ্যমণ্ডিত একটি দর্শনীয় স্থান। যমুনা নদীর পারে এই ঘাট অবস্থিত। এখানে রেলওয়ের ঘাট লোড-আনলোড স্টেশন অবস্থিত। নদীভাঙনজনিত কারণে ও পলি মাটির দ্বারা নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় বালাসী ঘাটে ঘাট বা নৌবন্দরটি ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়ার বালাসী নামক ঘাট বা নৌবন্দরটি স্থানান্তর করা হয়। তখন থেকে এটি বালাসী ঘাট বা নৌবন্দর নামে পরিচিত। এই ঘাট বা নৌবন্দরের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে এমনকি বিদেশেও মালামাল পরিবহন করা হয়। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুবই সুন্দর ও মনোরম। আগে ফুলছড়ি ঘাটে ভিড়ত বড় বড় জাহাজ, লঞ্চ, স্টিমার। ইংরেজ লর্ডরা গাইবান্ধার নাম না জানলেও চিনত ফুলছড়ি ঘাট। কীভাবে যাওয়া যায় : গাইবান্ধা জেলা বাসস্ট্যান্ড হতে অটোরিকশা, রিকশা ও সিএনজিযোগে যাওয়া যায়।

লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারেজ
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী নামক স্থানে তিস্তা নদীর ওপর তিস্তা ব্যারেজ অবস্থিত। তিস্তা নদীতে ব্যারেজ নির্মাণপূর্বক ওই অঞ্চলে গ্রাভিটি পদ্ধতিতে একটি সেচ প্রকল্পের প্রযোজনীয়তা ব্রিটিশ আমল হতেই অনুভূত হয়। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন সরকার তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। মূল পরিকল্পনা গৃহীত হয় ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীরা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি এবং জনবল দ্বারা নতুন জরিপ ও বিস্তারিত পরিকল্পনা ও ডিজাইন প্রণয়ন করে মডেল স্টাডির ভিত্তিতে তিস্তা ব্যারেজের বর্তমান স্থান নির্ধারণ করেন। তিস্তা ব্যারেজের অতুলনীয় সৌন্দর্য এবং ইহার চতুর্দিকের সবুজ বেষ্টনী, ফুল,বাগান, নদীর পুরাতন গতিপথ, সিল্ট ট্রাপ ইত্যাদি পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসু মানুষকে আকৃষ্ট করে থাকে। ব্যারেজের সম্মুখের বিশাল জলরাশি সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চল হতে আগত অতিথি পাখিদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রের সৃষ্টি করেছে।  এখান থেকেই শরৎ হেমন্তে বরফাচ্ছন্ন কাঞ্চনজংঘার পর্বতশৃঙ্গ দৃশ্যমান হয। দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারেজ পরিদর্শনসহ প্রকৃতির এহেন সৌন্দর্য উপভোগের জন্য প্রতিদিন এখানে অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে।

পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট
হিমালয়ের কোলঘেঁষে বাংলাদেশের সর্বোত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়া। এই উপজেলার ১নং বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে অবস্থিত বাংলাদেশ মানচিত্রের সর্বোত্তরের স্থান বাংলাবান্ধা জিরো (০) পয়েন্ট ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এই স্থানে মহানন্দা নদীতীর ও ভারতের সীমান্তসংলগ্ন প্রায় ১০ একর জমিতে ১৯৯৭ সালে নির্মিত হয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের পণ্য বিনিময়ও সম্পাদিত হয় বাংলাবান্ধা জিরো (০) পয়েন্টে। সম্প্রতি এ বন্দরের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও এ বন্দরের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র স্থলবন্দর যার মাধ্যমে তিনটি দেশের সঙ্গে সুদৃঢ় যোগাযোগ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এখানে খুব শীঘ্রই ভারতের সঙ্গে ইমিগ্রেশন চালু হতে যাচ্ছে। এটি চালু হলে পঞ্চগড় জেলা পর্যটকদের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হবে।

কীভাবে যাওয়া যায় : পঞ্চগড় থেকে লোকাল বাস, প্রাইভেট বা মাইক্রো ভাড়া করে ৫৫ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে বাংলাবান্ধা যাওয়ার পর এই জিরো পয়েন্টটি দর্শন করা যাবে।

নীলফামারীর নীলসাগর
নীলফামারী জেলা শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে ১৪.৫ কিলোমিটার দূরে গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোপাডাঙ্গা মৌজায় অবস্থিত ৫৩.৯ একর আয়তনবিশিষ্ট এ জলাশয়টির আনুমানিক খননকাল অষ্টম শতাব্দীর কোনো একসময়ে। হিন্দুশাস্ত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খ্রিস্টপূর্ব নবম হতে অষ্টম শতাব্দীতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বিরাট রাজা পাণ্ডবদের এবং রাজা ভগ দত্ত করে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। পাণ্ডবরা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ১২ বছরের জন্য বনবাসে যেতে বাধ্য হয়। নির্বাসনের স্থান মনোনীত করেন। পাণ্ডবদের তৃষ্ণা মেটাবার জন্য বিরাট রাজা তখন এই বিশাল দীঘিটি খনন করেন। বিরাট দীঘির অপভ্রংশ হিসেবে কালক্রমে বিরাট দীঘি, বিল্টা দীঘি এবং অবশেষে বিন্না দীঘি হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৯৭৯ সালে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক আ. জব্বার এ দীঘিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আনুষঙ্গিক সংস্কারের পাশাপাশি নামকরণ করেন ‘নীলসাগর’। নীলসাগরের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এর উদার উদাস পরিবেশ। শীতকালে অতিথি পাখির আগমনে উচ্ছল হয়ে ওঠে এর পরিবেশে। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এর সুখ্যাতি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দিনাজপুর কান্তজীউ মন্দির
কান্তজীউ মন্দির বা কান্তজির মন্দির বা কান্তনগর মন্দির বাংলাদেশের দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে, দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেঁপা নদীতীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির। এটি নবরত্ন মন্দির নামেও পরিচিত কারণ তিনতলাবিশিষ্ট এই মন্দিরের ৯টি চূড়া বা রত্ন ছিল। মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তিবেদির শিলালিপি থেকে জানা যায়, তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় তার শেষ বয়সে মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু করেন। ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যুর পরে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, তার পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণকাজ শেষ করেন। শুরুতে মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটি ভূমিকম্পের কবলে পড়লে এর চূড়াগুলো ভেঙে যায়। মহারাজা গিরিজানাথ মন্দিরের ব্যাপক সংস্কার করলেও মন্দিরের চূড়াগুলো আর সংস্কার করা হয়নি। মন্দিরের বাইরের দেয়ালজুড়ে পোড়ামাটির ফলকে লেখা রয়েছে রামায়ণ, মহাভারত এবং বিভিন্ন পৌরণিক কাহিনী। পুরো মন্দিরে প্রায় ১৫ হাজারের মতো টেরাকোটা টালি রয়েছে। ওপরের দিকে তিন ধাপে উঠে গেছে মন্দিরটি। মন্দিরের চারদিকের সবগুলো খিলান দিয়েই ভেতরের দেবমূর্তি দেখা যায়। মন্দির প্রাঙ্গণ আয়তাকার হলেও, পাথরের ভিত্তির ওপরে দাঁড়ানো ৫০ ফুট উচ্চতার মন্দিরটি বর্গাকার। নিচতলার সব প্রবেশপথে বহু খাঁজযুক্ত খিলান রয়েছে। দুটি ইটের স্তম্ভ দিয়ে খিলানগুলো আলাদা করা হয়েছে, স্তম্ভ দুটি খুবই সুন্দর এবং সমৃদ্ধ অলংকরণযুক্ত। মন্দিরের পশ্চিম দিকের দ্বিতীয় বারান্দা থেকে সিঁড়ি ওপরের দিকে উঠে গেছে। মন্দিরের নিচতলায় ২১টি এবং দ্বিতীয়তলায় ২৭টি দরজা-খিলান রয়েছে, তবে তৃতীয়তলায় রয়েছে মাত্র ৩টি করে। এই মন্দির ভ্রমণে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ভ্রমণপ্রিয় মানুষ ঘুরতে আসে।

 
Electronic Paper