ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কবির বিয়ে কবিতার মৃত্যু

রুবেল কান্তি নাথ
🕐 ৪:০০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ০৬, ২০১৮

‘ছেলেটা তো কবিতা-কবিতা করেই রসাতলে যাবে দেখছি! ধাড়ি ছেলেটা মাস্টার্স কমপ্লিট করে চাকরি-বাকরির চিন্তা না করে শুধু কবিতা নিয়ে মেতে থাকলে হবে? অ্যাই, কিছু বলছ না কেন? চুপ করে আছ কেন রাশেদের বাপ?’

রাশেদের মা নাফিসা বেগম রাগে গজগজ করতে করতে অভিযোগ জানালেন আকবর সাহেবের কাছে। রাশেদের বাবা আকবর সাহেব চুপ করে দৈনিক পত্রিকার পাতায় চোখ বোলাতে বোলাতে অভিযোগ শুনলেন। ‘এখনো চুপ করে আছ? তোমাকে কী বোবা রোগে পেয়েছে! আমার মাথায় কিন্তু রাগ চড়ে যাচ্ছে। পত্রিকা কিছুক্ষণের মধ্যে চুলায় দেব বললাম।’

অনেকক্ষণ পর মুখ খুললেন তিনি- ‘আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। আশা করছি, এ মহৌষধে কাজ হবে।’
‘কী আইডিয়া? জলদি বলো, তর সইছে না।’ রাশেদের বাবা আইডিয়া শেয়ার করলেন। শুনে নাফিসা বেগমের রাগ ঠাণ্ডা হয়ে গেল- ‘তোমার আইডিয়া তো দারুণ!

এতদিন কোথায় লুকিয়ে ছিল যুগান্তকারী আইডিয়াটা!
বুড়ো-বুড়ি দুজনে মিষ্টি খুনসুটিতে মেতে উঠলেন। ছোট্ট বাড়িটা মুহূর্তে এক টুকরো স্বর্গে পরিণত হলো।

দুই
‘ধুর, শালা! তিন লাইন লেখার পর, চতুর্থ লাইনটা যে কোথায় গেল? কিছুতেই ধরতে পারছি না।’ বিরক্ত হলো উদীয়মান কবি রাশেদ মাহমুদ।
‘কী এত বিড়বিড় করছিস রে, খোকা?’ রাশেদের পাশে এসে ওর কাঁধে হাত রেখে প্রশ্নটা করলেন নাফিসা বেগম। যদিও তিনি আড়ালে ওকে খোকার বদলে ধাড়ি পোলা বলে ডাকতেই বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

‘আর বোলো না, মা। লেখালেখি করার চেয়ে ডজন-ডজন প্রেম করা, উঁচু পাহাড় ডিঙানো, উত্তাল সাগরে সার্ফিং করা অনেক সহজ।
দুইঘণ্টা ধরে একটা কবিতা লিখতে বসেছি। কিন্তু তিন লাইন লিখে আর লিখতে পারছি না। চার নম্বর লাইনটাকে কিছুতেই ধরতে পারছি না।
‘ধরা তো ওকে দিতেই হবে। ধরা না দিয়ে যাবে কই। কবিতার চার নম্বর লাইনটা তো আমরাই লিখতে চলেছি। অনেক কষ্টে ওকে ধরতে পেরেছি রে।’ কথাগুলো রাশেদের কানে পৌঁছেনি। সে ব্যস্ত কবিতার চার নম্বর লাইনটাকে ধরতে।

তিন
‘কী করছিস রে, খোকা?’ রাশেদের পাশে এসে জিজ্ঞেস করলেন নাফিসা বেগম।
‘কবিতা তো আমাকে জ্বালিয়েই ছাড়বে দেখছি!’
‘কবিতা আবার তোর কী করল?’
‘এই দেখো না, মা। দশ-বারো লাইন লেখার পরও ওর বাজারের ফর্দ শেষ হচ্ছে না। কবিতা বলছে, আরও কয়েক লাইনের ফর্দ লিখতে হবে।’
‘এটা খুব ভালো কথা। তুই কী পারবি না, তোর বউ ‘কবিতা’র কথামতো দশ-বিশ লাইনের বাজারের ফর্দ লিখতে? পারবি, খোকা।’

রাশেদ বোয়াল মাছের মতো হা করে তাকিয়ে থাকল মায়ের দিকে।
নব্য কবির বিস্ময়ভরা মুখ দেখে, নাফিসা বেগম প্রশান্তি অনুভব করলেন।
রাশেদের বাবার আইডিয়াটা কাজে লাগিয়ে ‘কবিতা’ নামধারী একজন সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে বিয়ে করিয়ে দেওয়া হলো কবি সাহেবের।
বিয়ের পরই বেচারা কবি কবিতা লেখা বাদ দিয়ে, নিজের বউ কবিতার ফরমায়েশ অনুযায়ী বাজারের লিস্ট লিখতেই সদা ব্যস্ত।

ইতোমধ্যে বউ কবিতার ঠেলায় একটা সম্মানজনক চাকরিও জুটিয়ে নিয়েছে। মোটামুটি সুখী একটা জীবনই উপভোগ করছে ওরা।
কিন্তু, নাফিসা বেগম ও আকবর সাহেব নিজেদের অজান্তেই দেশে স্বঘোষিত একজন কবির সংখ্যা কমিয়ে ফেলেছেন।
যে কবি হয়তো অদূর ভবিষ্যতে নিখিল বাংলাদেশ স্বঘোষিত কবি সংঘের সভাপতির পদটা অলঙ্কৃত করতে পারত!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper