ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সর্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব

শুভ আনোয়ার
🕐 ২:৩৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৭, ২০১৮

বাংলাদেশসহ সমগ্র ভারতবর্ষ তথা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো শারদীয় দুর্গাপূজা। সনাতন ধর্মের প্রথা অনুসারে বছরে দুবার দুর্গোৎসবের নিয়ম রয়েছে। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে শারদীয় এবং চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে বাসন্তী দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। মহালয়া উদযাপনের মাধ্যমে দেবী দুর্গার এই মর্তে অর্থাৎ পৃথিবীতে আগমনী বার্তা ঘোষিত হয়। দেবী দুর্গা হলেন স্বয়ং ঈশ্বরের শক্তির প্রতীক। দেবী দুর্গাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয় তার মধ্যে অন্যতম দুর্গতিনাশিনী দেবী অর্থাৎ মহাবিশ্বের যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট বিনাশকারিণী তথা ধ্বংসকারিণী। আবার দুর্গম নামক অসুরকে বধ করেছিলেন বলে তাকে দুর্গা বলা হয়।

বছর যায় বছর আসে ঋতুচক্রের পালা বদলে বছর ঘুরে আবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে এসে হাজির হয়েছেন দেবী দুর্গা। সব বর্ণের নারী-পুরুষ আনন্দে মেতেছে শারদীয় দুর্গোৎসবে। চারদিকে ঢাকের তাল, শাখের ধ্বনি আর মন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে চলে এই উৎসব। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় গোষ্ঠী হিন্দু সম্প্রদায়, এখানে মুসলামানদের পাশাপাশি অন্যতম বড় সম্প্রদায় হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

দুর্গাপূজা তথা শারদীয় দুর্গোৎসব এখন আর শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই। যেহেতু বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ এবং এখানে সব ধর্মের মতের মানুষ একসঙ্গে সুখে-দুঃখে বসবাস করে তাই ধর্মীয় উৎসবগুলো এখন আর ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মাঝে আবদ্ধ নেই। আর তাই তো শারদীয় দুর্গাপূজাকে এখন আর শুধু দুর্গাপূজা বলতে রাজি নয় কেউ এ জন্যই একে শারদীয় দুর্গোৎসব বলা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়েল পাশাপাশি প্রতিমা দর্শনে মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় করে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা। শারদীয় দুর্গোৎসবে ধর্ম, বর্ণ- নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ নানাভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট ভুলে গিয়ে হিংসা-বিদ্বেষের ঊর্ধ্বে অবস্থান করে স্বর্গীয় প্রীতির মেলবন্ধন রচনার মাধ্যমে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বলেই শারদীয় দুর্গোৎসব হিসেবে বিবেচিত।

এই উৎসবকে কেন্দ্র করে পূজাম-পগুলো যেন হয়ে ওঠে এক একটি মিলনমেলা। এই মেলায় অংশগ্রহণ করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। সার্বিকভাবে দুর্গাপূজা এক মিলনমেলার মহোৎসব এবং আনন্দ ও সৃষ্টিশীলতার অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটায়। কি মুসলমান, কি বৌদ্ধ, ধনী-গরিব, শিশু থেকে বৃদ্ধ, যুবক-যুবতী সবারই থাকে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ।

দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে পূজাম-পগুলোর চারপাশে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী, খেলনা, মৃৎশিল্প, কুটির শিল্প, হস্তশিল্পসহ নানা ধরনের পণ্যাদির বেচাকেনা চলে। সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ তাদের উৎপাদিত সামগ্রী মেলায় এনে বিক্রি করে। যেমন- ডালা, কুলা, ঝাকা, চালুন, বেলুন, মাটির তৈরি পুতুল, বিভিন্ন ধরনের ধাতব পদার্থের দ্বারা তৈরি পণ্যসামগ্রী, কাঠের তৈরি বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র এবং বিভিন্ন ধরনের খেলনাসামগ্রী।

এছাড়া রয়েছে- নাগর দোলা, বায়োস্কোপ, লটারি, জাদু প্রদর্শন, পুতুল নাচ ইত্যাদি নানা আয়োজনের মাধ্যমে পূজামণ্ডপ হয়ে ওঠে সরগরম। তবে শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন মিষ্টিজাত পণ্যের প্রতি। নানান মিষ্টির পসরা সাজিয়ে বসে মেলা। আর আগত ক্রেতারা কমবেশি সবাই মিষ্টি ক্রয় করে আপন আপন বাড়িতে ফিরে। তবে বর্তমান সময়ের আরেক সংযোজন মেলায় বিক্রীত হরেক রকমের দেশীয় আচার যা চাহিদার তঙ্গে থাকে।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন সংস্কৃতি মনোভাবাপন্ন নর-নারী নতুন পোশাকে নিজেদের সুসজ্জিত করে দুর্গোৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে।

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper