শত্রুর মোকাবিলায় প্রস্তুতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ০৮, ২০২১
আজ ৮ মার্চ। একাত্তরের এ দিনে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের বার্তা। মুক্তিপাগল বাঙালি যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। বাংলার আকাশে-বাতাসে কেবলই ধ্বনিত হতে থাকে বঙ্গবন্ধুর সেই দীপ্ত কণ্ঠস্বর ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’।
এদিন বন্ধ রাখা হয় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বন্ধ থাকে সচিবালয়, হাইকোর্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। তবে সরকারি কর্মকর্তারা যাতে বেতন তোলা নিয়ে কোনো প্রকার সমস্যায় না পড়েন, সেজন্য বঙ্গবন্ধুর দুই ঘণ্টার জন্য ব্যাংক খোলা রাখার নির্দেশ দেন। তার দেওয়া নির্দেশ অনুসারে ব্যাংকগুলো স্বল্প সময়ের জন্য খোলা রাখা হয়।
বেতার-টেলিভিশনের শিল্পীরা প্রচার মাধ্যমের ভূমিকায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বেতার-টেলিভিশনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অনুষ্ঠান প্রচারের শর্ত জানিয়ে দেন। অন্যথায় তারা বেতার ও টেলিভিশনের সবধরনের অনুষ্ঠান বয়কট করবেন বলে ঘোষণা দেন। কোনো উপায় না থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিল্পীদের এ শর্ত মানতে বাধ্য হয়। এদিন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ছাত্রলীগ। একই কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় প্রতিটি জেলা শহর থেকে প্রাথমিক শাখা পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পাকিস্তানের পতাকা প্রদর্শন, জাতীয় সংগীত বাজানো এবং দেশের সব প্রেক্ষাগৃহে উর্দু ছবির প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বানে দেশের সংগ্রামী জনতা ভেতরে ভেতরে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুত শুরু করে দেয়। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাকিলা করতে বঙ্গবন্ধুর আহ্বান ছড়িয়ে পড়তে থাকে শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে। আর সময়ের ব্যবধানে উত্তাল বাংলা আরও বেশি উত্তাল হয়ে উঠতে থাকে।
এদিন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষণার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। তাদের মধ্যে ন্যাপের নেতা মোজাফ্ফর, বাংলা ন্যাশনাল লীগের অলি আহাদ, জাতীয় লীগের আতাউর রহমান, পিডিবির নূরুল আমিনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বঙ্গবন্ধুকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর সহসভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন এক যুক্ত বিবৃতিতে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য বাংলার সংগ্রামী জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। পৃথক এক বিবৃতিতে সশস্ত্র বাহিনীর গুলিতে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সব সরকারি-বেসরকারি ভবনে অনির্দিষ্টকালের জন্য কালো পতাকা উত্তোলনেরও আহ্বান জানান তারা।
পিডিপির সভাপতি নুরুল আমীন, মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুর, জাতীয় লীগ প্রধান আতাউর রহমান খান, ওয়ালীপন্থি ন্যাপের প্রাদেশিক সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদসহ পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারাও পৃথক বিবৃতিতে ৭ মার্চ ঘোষিত বঙ্গবন্ধুর সব শর্ত মেনে নেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রতি আহ্বান জানান। গণঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) এম আসগর খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ধানমন্ডির বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী সমিতি এবং ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228