ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

যারা একুশে পদকের জন্য মনোনিত

বাতিঘর ডেস্ক
🕐 ১২:৪৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২১

যারা একুশে পদকের জন্য মনোনিত

একুশের মহান চেতনাকে তাৎপর্যপূর্ণ করার পাশাপাশি সৃজনশীল ও প্রতিভাবান ব্যক্তিদের যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনের জন্য একুশে পদক প্রবর্তন করা হয়েছিল। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এবার তিন ভাষাসৈনিক, তিন মুক্তিযোদ্ধা, তিন সাহিত্যিক, সাংবাদিকতা, গবেষণা ও অর্থনীতিতে একজন করে ও শিল্পকলার বিভিন্ন শাখায় সাত জনসহ মোট ২১ জনকে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। বরেণ্য এসব ব্যক্তিদের নিয়ে আজকের আয়োজন।

মোতাহের হোসেন তালুকদার

মোতাহের হোসেন তালুকদার ১৯২২ সালে সিরাজগঞ্জের রতনকান্দি ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নাইমুদ্দিন তালুকদার ছিলেন শিক্ষক। পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে রাজশাহী কলেজ থেকে বিএসসি সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবনে মোতাহের হোসেন তালুকদার ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের হাজি আহম্মদ আলী হাইস্কুলের বিএসসি শিক্ষক ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি গণপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সব রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ‘আমার রাজনৈতিক জীবনের ৫৫ বছর’ শিরোনামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। মোতাহের হোসেন তালুকদার ২ ডিসেম্বর ২০০১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

মো. শামসুল হক

মো. শামসুল হক বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার একজন রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, যিনি তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ও তৎকালীন ময়মনসিংহ-১৫ ও ময়মনসিংহ-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য ২০২১ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদকের জন্য মনোনীত করা হয়।
মো. শামসুল হক ১৯৩০ সালের ২৯ জানুয়ারি তারাকান্দা উপজেলার কামারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ছিলেন আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ শহরের স্টেশন রোড থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় তিনি ৬ মাস কারাগারে ছিলেন। ময়মনসিংহ শহরে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন।
শামসুল হক ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সব রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৭০ সালের তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ময়মনসিংহ-১৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ময়মনসিংহ-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার কীর্তিকে স্মরণ করে ময়মনসিংহ শহরের টাউন হল সংলগ্ন ভাষা সৈনিক শামসুল হক মঞ্চ করা হয়েছে।

ফজলুর রহমান ফারুক

ফজলুর রহমান ফারুক বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা, যিনি পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্য এবং টাঙ্গাইল-৭ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২১ সালে একুশে পদকের জন্য মনোনীত করেন। ফজলুর রহমান ফারুক ১২ অক্টোবর ১৯৪৪ সালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কহেরা গ্রামে জন্মগ্রহণ। তিনি আব্দুল হালিম খান ও মা ইয়াকুতুন্নেছা খানমের আট সন্তানের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স পাস করেন। ফারুক ১৯৬০ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৬২ সালে টাঙ্গাইল মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৬৫ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭০ সালে গণপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ৬ দফা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সব রাজনৈতিক কর্মকা-ে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

ফজলুর রহমান ফারুক ১৯৬২-১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেফাকের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল মহকুমা প্রেস ক্লাব এবং টাঙ্গাইল মহকুমা মফস্বল সংবাদদাতা সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

সৈয়দা ইসাবেলা

সৈয়দা ইসাবেলা একজন বাংলাদেশি লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২১ সালে মরণোত্তর একুশে পদকের জন্য মনোনীত করে। সৈয়দা ইসাবেলা ১৯৪২ সালের ২৪ ডিসেম্বর বাবার বাড়ি সিরাজগঞ্জের বাণীকুঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সৈয়দ মোহাম্মদ ইসহাক সিরাজী ও মাতা আছিরুন নেছা খন্দকার দু’জনেই শিক্ষক ছিলেন। তার বড় চাচা সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী। লেখাপড়া করেন কলকাতার সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল বিদ্যালয়ে। তার স্বামী আনোয়ার হোসেন রতু মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাদের পাঁচ মেয়ে এবং এক ছেলে। সৈয়দা ইসাবেলা পেশাগত জীবনে ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত গৌরী আরবান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। অবসর জীবনে ২০০২ সালে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধে স্বামীর সঙ্গে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন রৌমারী অঞ্চলে। তার বিভিন্ন বিষয়ে ২২টি বই প্রকাশিত হয়। সৈয়দা ইসাবেলা ২০১৩ সালের ১২ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।


আফসার উদ্দিন আহমেদ

আফসার উদ্দিন আহমেদ চট্টগ্রাম জেলার রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, প্রকৌশলী ও চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২১ সালে মরণোত্তর একুশে পদকের জন্য মনোনীত করে। আফসার উদ্দিন আহমেদ চট্টগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিজিসি ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রকৌশলী। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় ও ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম-১৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি।

সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী
সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী একজন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক এবং কাহিনিকার। তিনি ১৯৮০ সালের চলচ্চিত্র ঘুড্ডির কাহিনী লিখে বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতার পুরস্কার পান। ২০২১ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়

ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় একজন বাংলাদেশি আবৃত্তিকার, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও অভিনেতা। শিল্পকলার আবৃত্তি শাখায় অবদানের জন্য তিনি ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।

ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৫২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) খুলনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা লোহিত কান্তি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা দেবী বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি খুলনায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের একটা পত্রিকায় বার্তা সম্পাদক হিসেবে কাজ করতেন। এরপর তিনি ঢাকার দৈনিক বঙ্গবার্তার খুলনা প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত হন।

গোলাম হাসনায়েন

মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার গোলাম হাসনায়েনকে ২০২১ সালে মরণোত্তর একুশে পদকের জন্য মনোনীত করেন।

রাইসুল ইসলাম আসাদ

আসাদুজ্জামান মোহাম্মদ রাইসুল ইসলাম যিনি রাইসুল ইসলাম আসাদ নামে পরিচিত। তিনি একজন বাংলাদেশি অভিনেতা। যিনি বেতার, মঞ্চ, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি চার বার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও ২০২১ সালে একুশে পদক ২০২১ লাভ করেন। আসাদুজ্জামান মোহাম্মদ রাইসুল ইসলাম ১৯৫২ সালের ১৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে।

১৯৭২ সালে আসাদ প্রথম মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন, ‘আমি রাজা হব না’ এবং ‘সর্পবিষয়ক’ নামের দুটি নাটকে। তার প্রথম চলচ্চিত্র ১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আবার তোরা মানুষ হ’। আসাদ নাটক পরিচালনাও করছেন। ২০১০ সালে তিনি ধারাবাহিক নাটক ‘আলো ছায়া’ পরিচালনা করেন যার রচয়িতা ছিলেন আজাদ আবুল কালাম। তানভীর মোকাম্মেলের লালন (২০০৪) চলচ্চিত্রে তিনি লালন চরিত্রে এবং গৌতম ঘোষের মনের মানুষ (২০১০) চলচ্চিত্র লালনের গুরু সিরাজ সাঁই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। মানিক বন্দ্যোপাধায়ের উপন্যাস অবলম্বনে গৌতম ঘোষের পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯৩) চলচ্চিত্রে তিনি কুবের চরিত্রে অভিনয় করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন আসাদ ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি কিংবদন্তি খ্যাতিপ্রাপ্ত ক্র্যাক প্লাটুনের একজন সদস্য ছিলেন। যুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘না, আমার কখনও আপে হয় না। এই যে আপনি এ আপে করার ভাবনাটা একটি স্বাধীন দেশে বসে করতে পারছেন- এটাই তো অনেক বড় পাওয়া। সবার আগে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে?’

বুলবুল চৌধুরী

বুলবুল চৌধুরী একজন বাংলাদেশি কথাসাহিত্যিক ও লেখক। ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। বুলবুল চৌধুরী ১৯৪৮ সালের ১৬ আগস্ট গাজীপুরের দক্ষিণবাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ছোট গল্পগ্রন্থ, টুকা কাহিনি, পরমানুষ, মাছের রাত, চৈতার বউ গো। এছাড়া উপন্যাস- অপরূপ বিল ঝিল নদী, কহকামিনী, তিয়াসের লেখন, অচিনে আঁচড়ি, মরম বাখানি, এই ঘরে লক্ষ্মী থাকে, ইতু বৌদির ঘর, দখিনা বাও। আত্মজীবনী-আঁকিবুঁকি, অতলের কথকথা। এছাড়াও ‘গাঁওগেরামের গল্পগাথা’, ‘নেজাম ডাকাতের পালা’, ‘ভালো ভূত আর প্রাচীনগীতিকার গল্প’ নামক কিশোর গ্রন্থের রচয়িতাও তিনি।


গোলাম মুরশিদ

গোলাম মুরশিদ লন্ডন প্রবাসী একজন বাংলাদেশি লেখক, গবেষক, সংবাদ-উপস্থাপক এবং আভিধানিক। ২০২১ সালে তিনি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেন।
১৯৪০ সালের ৮ এপ্রিল বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুরা গ্রামে ড. গোলাম মুরশিদ জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ করেছেন। তার প্রথম কর্মজীবন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় দুই দশক তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। মুরশিদ বাংলার সাহিত্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সমাজ নিয়ে বেশ কিছু সুপরিচিত গ্রন্থ রচনা করেছেন।

সুজাতা আজিম

সুজাতা একজন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। তিনি ১৯৬৫ সালের রূপবান চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সর্বাধিক পরিচিত। চলচ্চিত্রশিল্পে তার অবদানের জন্য ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। শিল্পকলার চলচ্চিত্র শাখায় অবদানের জন্য তিনি ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন। তার পিতা গিরিজানাথ মজুমদার ও মাতা বীণা পানি মুজমদার।

মজুমদার কর্মজীবনের শুরুতে মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতেন। পরবর্তীকালে ওবায়দুল হকের দুই দিগন্ত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রূপালী পর্দায় অভিনয় শুরু করেন। মূল অভিনেত্রী হিসেবে প্রথম কাজী খালেক পরিচালিত মেঘ ভাঙা রোদ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, তবে রূপবান চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি তার পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৭৮ সালের পর প্রায় একযুগ অভিনয় থেকে দূরে থাকলেও বর্তমানে তিনি টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন।

পাপিয়া সারোয়ার

পাপিয়া সারোয়ার (জন্ম ২১ নভেম্বর) একজন বাংলাদেশি সঙ্গীত শিল্পী। তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতের একজন প্রকাশক। ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি থেকে রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৫ সালের বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ লাভ করেন। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য তিনি ২০২১ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেন।

পাপিয়া বরিশাল জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৬ সালে ছায়ানটে ওয়াহিদুল হক, সনজীদা খাতুন এবং জাহেদুর রহিমের কাছে এবং পরবর্তিতে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে সঙ্গীত দীক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। ১৯৭৩ সালে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত অধ্যয়ন করার জন্য ভারত সরকার থেকে বৃত্তি লাভ করেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীলিমা সেনের অধীনে রবীন্দ্র সঙ্গীত এবং ধ্রুবতারা জসীর অধীনে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ‘গীতসুধা’ নামে একটি গানের দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৭৮ সালে সারোয়ার আলমের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। দাম্পত্য জীবনে তিনি এক সন্তানের মা।

অজয় দাশগুপ্ত

অজয় দাশগুপ্ত সাংবাদিক, ছড়াকার ও কলাম লেখক। ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২১ সালে সাংবাদিকতায় একুশে পদকের জন্য মনোনীত করেন। অজয় দাশগুপ্ত ১০ জানুয়ারি ১৯৫৯ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাস করেন। তার স্ত্রী দীপা দাশগুপ্ত অস্ট্রেলিয়ায় এবং হলিউডে অভিনেতা নির্দেশক ও পরিচালক। একমাত্র সন্তান অর্ক দাশগুপ্ত।

মাহফুজা খানম

অধ্যাপক মাহফুজা খানম হচ্ছেন একজন বাংলাদেশি শিক্ষিকা, শিক্ষাবিদ, নারীনেত্রী, সমাজসেবী, মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এবং একমাত্র নারী ভিপি। তিনি শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০২১ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক পদক লাভ করেন।

তিনি বাংলা বাজার গার্লস স্কুলে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে মাস্টার্স করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে লন্ডনের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পান। তিনি শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৬৬-৬৭ ডাকসু নির্বাচনে ভিপি হন। তিনি সমাজসেবামূলক বিভিন্ন সংস্থার চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশেষ করে নারী শিক্ষায় অবহেলিতদের পাশে আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। শিক্ষার আর্থিক তহবিলের জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৭টি শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছেন।

তিনি ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে ব্যারিস্টার শফিক আহমেদকে বিয়ে করেন। তাদের দুই পুত্র ও এক মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়।

আহমেদ ইকবাল হায়দার

আহমেদ ইকবাল হায়দার ২০২১ সালে একুশে পদকের জন্য নাটক ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়েছেন। ১৯৭৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি নাটকের সঙ্গে জড়িত। আহমেদ ইকবাল হায়দারের জন্ম পটিয়ার সুচক্রদ-ী গ্রামে। বাবা কায়কোবাদ আহমেদ ও মা জেবুন্নেছা বেগম। ৬ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ৪র্থ। চট্টগ্রামের ‘তির্যক’ নাট্যদলের দলপ্রধান তিনি। বর্তমানে থিয়েটার ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রামের অর্টিস্টিক ডিরেক্টর হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।

পাভেল রহমান

দেশের খ্যাতিমান আলোকচিত্র সাংবাদিকদের একজন পাভেল রহমান। বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২১ সালে একুশে পদকের জন্য মনোনীত করেছেন। তার জন্ম ১৯৫৬ সালে। বাবা সৌখিন ফটোগ্রাফার থাকার সুবাদে মাত্র সাত বছর বয়সে ক্যামেরার সঙ্গে পরিচয়। নিউজ ফটোগ্রাফিতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমে কাজ করেন তিনি। নব্বইয়ের গণআন্দোলনে জীবন্ত পোস্টার নূর হোসেন, নিউজ উইকের বিখ্যাত প্রচ্ছদ, গেঞ্জিপরা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর পাইপটানা ছবি, পুলিৎজারে প্রতিযোগিতা করা সেই মহিলার মুখসহ নেলসন ম্যান্ডেলা, জিমি কার্টার, বেনজির ভুট্টো, লিওনেল মেসি অসংখ্য বিখ্যাত ঘটনা ও ব্যক্তির ছবি তুলেছেন। পূর্ণকালীন কর্মী হিসেবে ছিলেন সংবাদ সংস্থা এপি-তে।

কাজী কামরুজ্জামান

কাজী কামরুজ্জামান বাংলাদেশের একজন মুক্তিযোদ্ধা ও চিকিৎসক। সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২১ সালে একুশে পদকের জন্য মনোনীত করে। কাজী কামরুজ্জামান ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল ট্রাস্ট (ডিসিএইচ ট্রাস্ট) ও কমিউনিটি ইনিশিয়েটিভ সোসাইটির (সিআইএস) চেয়ারম্যান। তিনি বাংলাদেশের প্রথম শিশু সার্জন প্রফেসর।

কাজী রোজী

কাজী রোজী একজন বাংলাদেশি কবি ও রাজনীতিবিদ। তিনি কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান এবং ২০২১ সালের বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।

কাজী রোজী ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কাজী শহীদুল ইসলাম। শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন এবং ২০০৭ সালে তথ্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। রোজী ১৯৬০-এর দশকে কবিতা লেখা শুরু করেন।


ড. মির্জা আব্দুল জলিল

ড. মির্জা আব্দুল জলিল পাবনা জেলার রাজনীতিবিদ ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব যিনি প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। মির্জা আব্দুল জলিল ১৯ মার্চ ১৯৩৭ সালে পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার জয়নগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে পশুচিকিৎসা ও পশুপালন বিষয়ে বিএসসি এবং ১৯৬৪ সালে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৩-১৯৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে পশুপুষ্টির ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ড. মির্জা আব্দুল জলিল ১৯৬৭ সালে পশুসম্পদ অধিদফতরে গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক পশুসম্পদ অধিদফতরে পরিচালক, বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সদস্য, অতিরিক্ত সচিব পদ মর্যাদায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি অবসরে যান। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়ে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেন।

সমীর কুমার সাহা

সমীর কুমার সাহা একুশে পদকপ্রাপ্ত একজন বাংলাদেশি অণুজীববিজ্ঞানী এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তিনি শিশুদের জন্য ঢাকা শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজির ডায়াগনস্টিক বিভাগের অধ্যাপক, সিনিয়র পরামর্শদাতা এবং বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের দ্য চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) নির্বাহী পরিচালক। তিনি ২০২১ সালে গবেষণায় একুশে পদক লাভ করেন।

সাহা ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি এবং এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া ১৯৮৯ সালে ভারতের বারানসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
সাহা নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস এবং এন্টারিক জ্বর বিশেষজ্ঞ, বিশেষত পেডিয়াট্রিক সংক্রামক রোগগুলোর জন্য তার গবেষণা পরিচিত। তিনি এই রোগগুলোর প্রকৃত বোঝা, তাদের কার্যকারক জীব, ওষুধ প্রতিরোধের নিদর্শন এবং সেরোটাইপ বিতরণের সন্ধানে মনোনিবেশ করেছেন।

সাহা পিয়ার-রিভিউড জার্নালগুলোতে প্রায় দেড় শতাধিক নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। এসব নিবন্ধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শৈশব নিউমোনিয়া এবং মেনিনজাইটিসের বিষয়গুলো অন্বেষণ করে।

 

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper