ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাজনীতি সচেতন একজন কবি

নির্মলেন্দু গুণ ও 'কবিতাকুঞ্জ'

সালাহ উদ্দিন খান রুবেল
🕐 ১:১৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ০৪, ২০২১

রাজনীতি সচেতন একজন কবি

‘মানবজাতির সভ্যতার ক্রমবিকাশের সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস জানতে হলে তোমাকে যেতে হবে কবিতার কাছে। POETRY IS NEARER TO VITAL TRUTH THAN HISTORY (ইতিহাস নহে, জীবনসম্পৃক্ত সত্যের নিকটবর্তী হলো কবিতা) ..মহামতি প্লেটো। মানবতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ ষাট দশক থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের কবিগণের অন্যতম কবি ও চিত্রশিল্পী কবি নির্মলেন্দু গুণ। (জন্ম: ২১ জনু, ১৯৪৫ইং ৭ আষাঢ়, ১৩৫২ বঙ্গাব্দ, কাশবন, বারহাট্টা, নেত্রকোণা)।

তিনি বাংলাদেশের পাঠকনন্দিত কবি। তিনি শুধু বাংলাদেশেরই নয়, বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবিদের একজন। তার অগণিত কবিতা মানুষের মুখে মুখে। তিনি শ্রেণিসংগ্রাম, স্বৈরাচার-বিরোধিতার পাশাপাশি তিনি প্রচুর প্রেমের কবিতাও লিখেছেন। লিখেছেন, ‘আমি যেখানেই হাত রাখি তোমার শরীর’-এর মতো শিহরণ জাগানো পঙ্ক্তি, কিংবা ‘খোঁপার মতো কোনো ফুলদানি নেই’-এর মতো মুগ্ধকর চরণ। এছাড়াও ছড়া কবিতা, গল্প-প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা, ভ্রমণকাহিনি সাহিত্যের প্রভৃতি ক্ষেত্রে তিনি বিচরণ করেছেন। ১৯৬৯ এর গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লিখিত ‘হুলিয়া’ থেকে ‘স্বাধীনতা এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ কবিতা পর্যন্ত ধারাবাহিকতায় তিনি একজন রাজনীতি সচেতন কবি হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত।

জন্মভূমি ও জন্মভূমির মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও সুচিন্তিত দায়বদ্ধতা থেকে তিনি স্বদেশের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে কবিতায় বিন্যস্ত করেছেন। এ প্রসঙ্গে কবি শামসুর রাহমান বলেছেন, ‘ষাট দশকে নির্মলেন্দু গুণের আবির্ভাব। তখন তার কবিতা ছিল আত্মকেন্দ্রিক, কিছুটা বিষয়বাসী। কিন্তু দেশে ও দশের প্রতি তার অসামান্য মমত্ববোধ তাকে দিয়ে লিখিয়ে নিল এমন সব কবিতা, যেগুলো রৌদ্রাভিসারী, খোলামাঠের হাওয়ার মতো দুরন্ত, উদ্যম। তার কবিতা ক্রমশ হয়ে উঠল রাজনীতি সচেতন। মাঝে মধ্যে অন্য ধরনের কবিতা লিখলেও মূলত রাজনীতিকেই তিনি কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে গ্রহণ করলেন, তবে কাব্যধর্মকে বিসর্জন দিয়ে নয়’।

স্বাধীনচেতা এই কবি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি যোগ দিয়েছিলেন, তখন তিনি প্রেরণায় জ্বলে উঠে লিখেছিলেন, ‘আগ্নেয়াস্ত্রের মতো সাড়া জাগানো কবিতা। তখন এ কবিতা লেখা সম্ভব ছিল শুধুমাত্র একজন সাহসী খাঁটি বাঙালি কবির পক্ষে। দুর্লভ এই সাহসিকতা। এই সাহসিকতা ও জনসাধারণের আশা- আকাঙ্খার সঙ্গে একাত্ববোধই নির্মলেন্দু গুণকে আমাদের জনপ্রিয় কবি করে তুলেছে।’

কবি নির্মলেন্দু গুণ কাব্যের বাইরেও একজন সমাজ সচেতন মানুষ। তিনি মনে করেন, ‘সামাজিক কাজ, এটা তো কবির পক্ষেরই কাজ’। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা পদকের প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে নিজ জেলা নেত্রকোণায় তৈরি করেছেন ‘কবিতাকুঞ্জ’ নামে বিশ্বের সব ভাষার একটি সংগ্রহশালা ও পাঠচর্চা কেন্দ্র। এই পাঠচর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলায় আনন্দিত কবি, সাহিত্যিক ও কবিতা প্রেমীরা।

এ ছাড়াও বারহাট্টায় নিজ গ্রামে তৈরি করেছেন ‘কাশবন’। সেখানে সেরা চারজন বাঙালির ভাস্কর্য রয়েছে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং রয়েছে বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন এর ভাস্কর্য। তাছাড়া রয়েছে-কাশবন বিদ্যানিকেতন (উচ্চ বিদ্যালয়), রামসুন্দর পাঠাগার, বীরচরণ মঞ্চ, সারদা-বাসুদেব চিত্রশালা (আর্টস্কুল) শৈলজা সঙ্গীত ভুবন (গানের স্কুল), শহীদ মিনার ইত্যাদি।

বাংলা ভাষা ও কবিতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে, স্বাধীনতা পুরস্কার একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জেমকন সাহিত্য পুরস্কার, শান্তিনিকেতন সম্মাননা, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, উইলিয়াম কেরী পুরস্কার, আলাওল পুরস্কার, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বঙ্গবন্ধু পদকসহ অগণিত পুরস্কার ।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper