উদ্যোক্তা অরুনার গল্প
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি
🕐 ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ০৪, ২০২১
গ্রামের স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার পর চলে যান ঢাকায়। সেখানে বড় ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। তারপর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে ভর্তি হন। ডিগ্রি পড়াকালীন বিয়ে হয়। স্বামীর চাকরি সূত্রে চলে আসেন রাঙ্গামাটি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ২২ বছর যাবৎ রাঙ্গামাটিতে আছেন। এতক্ষণ বলছিলাম কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের হাজি মো. সমন আলীর মেয়ে শিরীন সুলতানা অরুনার কথা।
অরুনার উদ্যোক্তা জীবন শুরু হয় অনেক আগেই। এক সময় মুরগির খামার করেছেন। তারপর মাশরুম চাষ করেছেন। পরে ২০০৬ সালে ৫৯৫ টাকার ক্রিস্টাল পুঁতি কিনে ব্যাগ বানানো শুরু করেন। ব্যাগগুলো বাচ্চার স্কুলে নিয়ে যেতেন। স্কুলে যারা আসতেন; তাদের কাছে বিক্রি করতেন। আস্তে আস্তে সবাই জেনে যান। ফেসবুকে একটা পেজও খোলেন। এভাবে ২ বছরে প্রায় ২ লাখ টাকার ক্রিস্টালের ব্যাগ আর গহনা বিক্রি করেন।
২০০৮ সালে ৫ হাজার ৮০০ টাকার কাপড় কেনেন অরুনা। সেটাও স্কুলে নিয়ে যেতেন। বিক্রি ভালোই হতো। কেউ কেউ আবার বাসায় এসে নিয়ে যেতেন। আস্তে আস্তে ব্যবসা বাড়তে থাকে অরুনার। এরমধ্যে অনেকেই অনেক রকম মন্তব্য করতেন। তিনি কোনো কিছুতে পাত্তা না দিয়ে আপনমনে কাজ করতেন। ২০১২ সালে রাঙ্গামাটির বনরূপায় একটি শোরুম নেন। তার বানানো কাপড়, গহনা ও ব্যাগ বিক্রি করেন।
২০১৭ সালে আরও একটি শোরুম নেন। দুটি শোরুমই সমানতালে চলতে থাকে। দেশি থ্রি-পিস, কুর্তি, বেড কভারসহ সব ধরনের হ্যান্ডিক্র্যাফ্টস ভালোই চলে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে একটি শোরুম ছেড়ে দেন। এখন একটি শোরুমই চলছে। পাশাপাশি তার ফেসবুক পেজের মাধ্যমে কাজুবাদাম বিক্রি করেন। এর জন্য ২০১০ সাল থেকে ট্রেড লাইসেন্সও করে রেখেছেন। প্রতিবছর নবায়ন করেন।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ রাঙ্গামাটিতে লকডাউন শুরু হলে তার শোরুম বন্ধ হয়ে যায়। বৈসাবির আগে আগে শোরুম বন্ধ থাকায় কোনোভাবেই দিন কাটছিল না অরুনার। বাসায় অলস সময় যাচ্ছে না। তখন তার স্বামী ফেসবুকভিত্তিক একটি ই-কমার্স গ্রুপের সন্ধান দেন। তিনি কোনোভাবেই কোনো গ্রুপে জয়েন করবেন না। স্বামী তিন দিন বোঝানোর পর অরুনা জয়েন করেন মার্চ মাসের শেষদিকে।
অরুনা বলেন, একদিন গ্রুপের এক অডিও আড্ডায় রাজীব স্যারকে বললাম, আমি দেশি কাজুবাদাম আর কফি নিয়ে কাজ করব। স্যার বললেন, খুব ভালো হবে। কফি আর কাজুবাদাম নিয়ে কেউ কাজ করছে না। তাই আপনি শুরু করেন।
তিনি বলেন, এভাবেই কাজুবাদাম নিয়ে কাজ শুরু করি। যা এখনো চলমান রয়েছে। কাজুবাদাম নিয়ে কাজ শুরু করি মে মাস থেকে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬৮৫টি ডেলিভারি দিয়েছি। উইতেই রিভিউ পেয়েছি ২০৯টি। এ ছাড়া আমার পেজ আর ইনবক্স মিলিয়ে রিভিউয়ের পরিমাণ ৯৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত আমি প্রায় ৬ লাখ টাকার কাজুবাদাম বিক্রি করেছি।
অরুনা ভবিষ্যতে কাজুবাদাম নিয়ে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে চান। যাতে এ খাতেও ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হয়। এ ছাড়াও দেশি কাজুবাদামকে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে রফতানি করে চাষিদের মুখে হাসি ফোটাতে চান।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228