জাতীয় স্মৃতিসৌধ
আলতাফ হোসেন
🕐 ১২:৪২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৮, ২০২০
বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সূর্য উঠেছিল বাংলাদেশে। এই ৯ মাসে ৩০ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল পাক হানাদার বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া সেসব শহীদের স্মৃতি চির জাগরূক রাখতে দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ ও ভাস্কর্য। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় সেসব স্থাপনা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আলতাফ হোসেন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদদের স্মরণে জাতির শ্রদ্ধা নিবেদনের চিরন্তন প্রতীক জাতীয় স্মৃতিসৌধ। ঢাকা থেকে ২৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সাভার উপজেলায় ৪৪ হেক্টর জায়গা নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স। ১৯৭১-এর ডিসেম্বরে সাভারের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত বিজয়, তাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগ স্মরণ করে স্মৃতিসৌধ সাভারে নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ৫৭টি সেরা নকশার মধ্য থেকে স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন-এর নকশাকে নির্বাচন করা হয়। ১৯৮২ সালের কিছু পর স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামো, কৃত্রিম লেক এবং উদ্যান তৈরির কাজ সমাপ্ত হয়। স্মৃতিসৌধটি সাত জোড়া ত্রিভুজ নিয়ে গঠিত। জাতীয় স্মৃতিসৌধের সাত জোড়া দেয়াল স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি ভিন্ন পর্যায় নির্দেশ করে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। এই সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমা হিসেবে বিবেচনা করেই সৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে। স্মৃতিসৌধটির দেয়ালগুলো ছোট থেকে বড় এই ক্রমে সাজানো হয়েছে। মাঝখানের দেয়ালটি দৈর্ঘ্যে সবচেয়ে ছোট কিন্তু উচ্চতায় সবচেয়ে বেশি। সর্বোচ্চ বিন্দুতে সৌধটি ১৫০ ফুট উঁচু। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সৌধটি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দৃষ্টিগোচর হয়। স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন সৌধের মূল কাঠামোটি কংক্রিটের এবং কমপ্লেক্সের অন্যান্য স্থাপনা লাল ইটের তৈরি করেন। মূল সৌধের গাম্ভীর্য ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার জন্য এই পার্থক্য। এর দ্বারা রক্তের লাল জমিতে স্বাধীনতার স্বতন্ত্র উন্মেষ নির্দেশ করা হয়েছে। পুরো কমপ্লেক্সে রয়েছে কৃত্রিম জলাশয়, বাগান এবং গণকবর।
১৯৭১ এ সাভারে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের এক বড় যুদ্ধ হয়। অনেক মুক্তিযোদ্ধা সে যুদ্ধে শহীদ হন। এই চূড়ান্ত যুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় ও পাকিস্তানের পরাজয় নির্ধারিত হয়। এর আগে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সাভার এলাকার গ্রাম থেকে অনেক বাঙালিকে বন্দি করে ক্যাম্পে নিয়ে আসে। নির্যাতনের পর তাদের হত্যা করা হয়। অসংখ্য গ্রামবাসীকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে নিচু জমিতে ফেলে রাখা হয় বা মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। যুদ্ধের পর এই এলাকায় আবিষ্কৃত হয় বধ্যভূমি ও গণকবর। এই গণকবরগুলো স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সে অবস্থিত। জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামোর সামনেই রয়েছে একটি জলাশয়। এখানে প্রতিফলিত হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামো এবং জাতীয় পতাকা। এই জলাশয়ে ফুটে আছে অসংখ্য শাপলা ফুল। বাংলাদেশের জাতীয় ফুল।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228