ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাজনীতির কবি

ফারুক খান
🕐 ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০২০

‘‘প্রতীক্ষা মানুষের: ‘কখন আসবে কবি?’ ‘কখন আসবে কবি?’/ শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে/রবীন্দ্রনাথের মত দৃপ্ত পায়ে হেঁটে/ অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।” ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে যে কবি জনতার মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি নিপীড়িত মানুষের জন্য একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছিলেন। ১৮ মিনিট ধরে বজ্রকণ্ঠ থেকে ঝরে পড়া শব্দগুলো যে মানুষকে এতটা উদ্বেলিত করতে পারে তা দেখে অবাক হয়েছিল সবাই। বিশ্ব গণমাধ্যম এ জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অভিহিত করেছিল ‘পয়েট অব পলিটিক্স’ বা ‘রাজনীতির কবি’ হিসেবে।

১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন নিউজউইকের প্রচ্ছদজুড়ে ছাপা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। আর লিড নিউজে তাকে অভিহিত করা হয় ‘পয়েট অব পলিটিক্স’। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের জন্যই তাকে এ উপাধি দেয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। সেই জ্বালাময়ী ভাষণ কেবলই ভাষণ নয়, একজন দক্ষ, সুনিপুণ কবির ছন্দময় কবিতা। কবি কল্পনা করেন, ভাবেন, স্বপ্ন দেখেন। বঙ্গবন্ধু ভেবেছেন নিপীড়িত মানুষ নিয়ে। সেসব মানুষের জন্য একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছেন তিনি।

৭ই মার্চে ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে দেখিয়েছিলেন মুক্তির দিশা। মহাত্মা গান্ধী, জর্জ ওয়াশিংটন, মাওসেতুং, হো-চি মিন, ফিদেল কাস্ট্রো, পেট্রিস লুমাম্বা ও কওমী নক্রুমা, নেলসন ম্যান্ডেলা, লেনিন, মার্শাল টিটোর মতো শেখ মুজিবুর রহমানও তার অসামান্য দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের চিরঞ্জীব উদাহরণের জন্য বিশ্ব-ইতিহাসের অনিবার্য ও অবিচ্ছেদ্য অধ্যায় হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত।

বঙ্গবন্ধু রচিত ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে ‘থালা বাটি কম্বল/ জেলখানার সম্বল’ লেখাটি থেকে বঙ্গবন্ধুর অনন্য সাধারণ রচনাসমূহ যে কত গভীর ও বিশাল কবিতার প্রতীক, উপমা ও কালের ক্যানভাস সমৃদ্ধ, তা সহজেই অনুমেয়। বঙ্গবন্ধু বলেছেন- ‘জেলে যারা যায় নাই, জেল যারা খাটে নাই, তারা জানে না জেল কী জিনিস। আমি পাঁচবার জেলে যেতে বাধ্য হয়েছি। রাজবন্দী হিসেবে জেল খেটেছি, সশ্রম কারাদণ্ডও ভোগ করতে হয়েছে। আবার হাজতি হিসেবেও জেল খাটতে হয়েছে। তাই সকল রকম কয়েদির অবস্থা নিজের জীবন দিয়ে বুঝতে পেরেছি।’ এমন চমৎকার ভাষায় কাব্যিক উচ্চারণে বন্দী জীবনকে চিত্রিত করার এত সরল ভঙ্গিমা উপস্থাপন করেছেন রাজনীতির এ কবি।

কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেছেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের মতো’। হিমালয়সম এ ব্যক্তিত্ব বাঙালি জাতির জন্য আশির্বাদ হিসেবে এসেছিলেন। বিশ্বকবির মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে ৭ মার্চের জনতার মঞ্চে আবৃত্তি করেছিলেন নিজের অনবদ্য কবিতা। যে কবিতা মানুষকে প্রেরণা যুগিয়েছিল। মানুষকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে সাহস যুগিয়েছিল। তার বজ্রকণ্ঠ থেকে উচ্চারিত ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ লাইনটিই যেন শ্রেষ্ঠ কবিতা। যে কবিতা একটি স্বাধীন সূর্যের উদয় করেছিল।

ছোটবেলা থেকেই মানবিকতা ও সৎ সাহস নিয়ে বেড়ে উঠেন বাঙালি জাতির জনক। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব পরিস্ফুট হয়েছে স্কুল-কলেজে থাকা অবস্থাতেই। রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তখনই। পরবর্তীতে সমগ্র জীবনে একজন স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশ্ব গণমাধ্যম বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বকে নানাভাবে উপস্থাপন করেছিল। প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের মতে, শেখ মুজিব ছিলেন এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব। ফিনান্সিয়াল টাইমস ১৯৭৫ সালে তাকে নিয়ে লিখেছিল, ‘মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ কখনই জন্ম নিত না।’ বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন প্রচ্ছদে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শিরোনাম করে ‘বাংলাদেশ : ফ্রম জেইল টু পাওয়ার’। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিশ্বের গণমাধ্যমের এমন ভাবনা ও মন্তব্য বাংলাদেশের এ মহানায়কের যে ভাবমূর্তি তৈরি করেছে তা সারা বিশ্বে বাংলাদেশ ও বাঙালির মুখ উজ্জ্বল করেছে, তাদের করেছে গৌরবান্বিত।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper