ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মাগুরা

খোলাকাগজ ডেস্ক
🕐 ৩:২৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের তীর্থভূমি মাগুরা। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এক সমৃদ্ধ জনপদের নাম মাগুরা। মাগুরার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রাজা সীতারাম রায়ের প্রাসাদ- দুর্গ, কবি কাজী কাদের নেওয়াজের বাড়ি, বিরাট রাজার বাড়ি, পীর তোয়াজউদ্দিনের মাজার ও দরবার শরিফ, চণ্ডীদাস ও রজকিনীর ঐতিহাসিক ঘাট শালিখা উপজেলা ও সিদ্ধেশ^রী মঠ পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ জেলা নিয়ে আজকের প্রতিবেদন

দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে এক সমৃদ্ধ জনপদের নাম মাগুরা। ১৭৮৬ সালে ব্রিটিশ আমলে বাংলা প্রদেশের প্রথম গঠিত জেলা যশোর। কিন্তু একজন জেলা কর্মকর্তার পক্ষে এ বৃহৎ জেলার আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনিক কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। মূলত মগ জলদস্যুদের হাত থেকে এ জেলার উত্তরাঞ্চলের জন সাধারণকে রক্ষা করার জন্যই ১৮৪৫ সালে যশোর জেলার প্রথম মহকুমা করা হয় মাগুরা। মহকুমা গঠন করার পর প্রথম মহকুমা অফিসার হিসেবে আসেন মি. ককবার্গ।

মহকুমা হবার আগে মাগুরা অঞ্চল ভূষণা ও মহম্মদপুর নামেই সুবিখ্যাত ছিল। পাল রাজত্বের সময় এ অঞ্চলের উত্তর ও উত্তর পূর্ব অংশ শ্রীপুর ও রাজাপুর নামে পরিচিত ছিলো। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব অংশ ভূষনা। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হবার পর প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসাবে মাগুরাকে ১৯৮৪ সালে মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত করা হয়। প্রথম ডেপুটি কমিশনার নিয়োগ করা হয়নি অরবিন্দু করকে। মাগুরা জেলা মোট ৪টি থানা নিয়ে গঠিত। যথা মাগুরা সদর , শ্রীপুর , শালিখা, ও মহম্মদপুর যা ২টি সংসদীয় যথা মাগুরা-১ ও মাগুরা-২ নির্বাচনী এলাকায় বিভক্ত।

শ্রীপুর জমিদাবাড়ি
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় রয়েছে পাল রাজার রাজপ্রাসাদের ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন তথা শ্রীপুর জমিদার বাড়ি। শ্রীপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সারদারঞ্জন পাল চৌধুরী জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। জানা যায়, ১৫০০ শতাব্দীতে সারদারঞ্জন পাল চৌধুরী নবাব আলীবর্দী খাঁর কাছ থেকে এই জমিদারী কিনে নেন। প্রচলিত আছে, শ্রীপুর জমিদার বাড়ি নির্মাণের পূর্বে বাংলার বারো ভূইয়ার মধ্যে অন্যতম যশোরের মহারাজা প্রতাপাদিত্যের ছেলে উদয়াদিত্যের সঙ্গে জমিদার সারদারঞ্জন পাল চৌধুরীর মেয়ে বিভা রানী পাল চৌধুরীর বিবাহ দেওয়া হয়।

শ্রীপুর জমিদার বাড়ি নির্মাণে রাজা প্রতাপাদিত্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। জমিদার সারদারঞ্জন পাল চৌধুরীর মেয়ে বিভা রানী পাল চৌধুরীকে নিয়েই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৌঠাকুরানীর হাট’ উপন্যাস রচনা করেছিলেন। শ্রীপুর জমিদার বাড়ির দৃষ্টিনন্দন বিশাল প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ এবং বাড়ির সিংহদ্বার শ্রীপুর জমিদার বাড়ি দেখতে আশা দর্শনার্থীদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে।

রাজা সীতারাম রাজপ্রাসাদ
রাজা সীতারামের রাজপ্রাসাদ মাগুরা শহর হতে ১০ মাইল দূরে মহম্মদপুর উপজেলায় অবস্থিত। তৎকালীন সময়ে মহম্মদপুর উপজেলা রাজা সীতারামের রাজধানী ছিল। ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণকারী সীতারামের আদিনিবাস বীরভূম জেলায় এবং তিনি উত্তর রাঢ়ীয় কায়স্থ ছিলেন। রাজা সীতারামের পিতা উদয় নারায়ণ কর্মদক্ষতায় ভূষণা পরগণায় তহশিলদার পদে নিযুক্ত হন। আর ধীরে ধীরে উদয় নারায়ণ তালুক বৃদ্ধি করে রাজায় পরিণত হন, যার কীর্তি মহম্মদপুরে এখনো বিদ্যমান।

রাজা সীতারামের রাজপ্রাসাদে প্রাচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষ, সুখ সাগর, কৃষ্ণ সাগর এবং রাম সাগর নামক দীঘি, দোল মঞ্চ, রাজভবনের ধ্বংসাবশেষ, মালখানা, সিংহদরজা, দশভুজা মন্দির, তোষাখানা, কৃষ্ণজীর মন্দির এবং লক্ষ্মী নারায়ণের অষ্টকোন মন্দির দেখতে পাওয়া যায়। রাজা সীতারামের রাজপ্রাসাদ এর পাশ দিয়ে একদা মধুমতির স্রোতধারা প্রবাহিত হতো।

রাজা সীতারামের দুটি বড় কামানের নাম ছিল কালে খাঁ ও ঝুম ঝুম খাঁ। নির্মল জলের রাম সাগর দীঘির দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ ১৫০০ ও ৬০০ ফুট। আর কৃষ্ণ সাগর দিঘী অবস্থিত দুর্গের দক্ষিণ পূর্ব দিকে কানাই নগর গ্রামে। ১৮৩৬ খ্রীষ্টাব্দে মহামারীর ফলে রাজা সীতারামের রাজপ্রাসাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ভাতের ভিটা
মাগুরা সদর উপজেলার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত বেয়ে ফটকী নদীর উত্তর তীরবর্তী এক পল্লীগ্রাম টিলা। নামের সঙ্গে গ্রামের ভূ-প্রকৃতির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে পূণ্যস্থান হিসেবে আদৃত ‘ভাতের ভিটা’ মাগুরা জেলা শহর হতে প্রায় ১২ কিলোমিটার দক্ষিণের এই টিলাগ্রামে অবস্থিত। ‘ভাতের ভিটা’ স্থানটি দেখতে টিলার মত।

কিংবদন্তি এই যে- কোন এক অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী দরবেশ নিশিকালে এপথে ভ্রমণের সময় এখানে এসে মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন। নির্মাণ কাজে নিয়োজিতদের জন্য ভাতরাধা যখন শেষ নির্মাণ কাজ তখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যে ভোরের নকীব পাখ-পাখালির ক‚ঞ্জনে মুখরিত হয়ে ওঠে রাতের নিস্তব্ধতা। নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখে দরবেশ চলে যান।

পথিমধ্যে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারিতে যেয়ে রাত শেষ হয়নি দেখে সেখানে মসজিদ নির্মাণ শুরু করে ফজরের নামাজ আদায় করেন।

মোকাররম আলী শাহ (র:) দরগাহ
মাগুরার ইছাখাদা গ্রামে হযরত পীর মোকররম আলী শাহ (র.) দরগাহ অবস্থিত। মাগুরা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কাছে পূর্ববাহিনী নবগঙ্গা নদীর তীরে দরগার অবস্থান। নদীর পাড়ে সবুজ বৃক্ষের ছায়ায় রয়েছে আধ্যাত্মিক সাধক হযরত পীর মোকাররম আলী শাহ (র.) -এর সমাধি। জানা যায়, হন আনুমানিক ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দে বিখ্যাত ধর্ম প্রচারক খান জাহান আলী (র.) ১২ জন শিষ্য নিয়ে যশোরের বারবাজারে আগমণ করেন। এরপর খান জাহান আলী (র.) বাগেরহাট গমণ করেন।

হযরত খান জাহান আলী (র.)-এর অন্যতম শিষ্য হযরত পীর মোকররম আলী শাহ (র.) পর্যায়ক্রমে ইসলাম প্রচার করতে করতে বারবাজার হতে ইছাখাদা গ্রামে এসে উপনীত হন। জনশ্রুতি আছে, সাধক পীর হযরত মোকররম আলী শাহ (রহ.) বিশেষ অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। ইছাখাদা গ্রামে তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ ও দুইটি পুকুর খনন করেন। সেই ঐতিহাসিক মসজিদের ভগ্নাবশেষ আজো দৃশ্যমান।

বর্তমানে ঐতিহাসিক পুকুর দুইটি খনন করে মাজারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি লক্ষ্যে সংস্কার কাজ করা হয়েছে এবং এখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একটি মাদ্রাসা পরিচালিত হচ্ছে। প্রতি বছর ৩ মাঘ দরগা প্রাঙ্গণে পবিত্র ইসালে সওয়াব আয়োজন করা হয়। এছাড়া সারা বছর ভক্তদের শুভাগমণে মুখর থাকে মাগুরার ঐতিহ্যের অনুপম নিদর্শন মোকাররম আলী শাহ (র.) দরগা।

সিদ্ধেশ্বরী মঠ
মাগুরা জেলা সদরের আঠারখাদা গ্রামের নবগঙ্গা নদীর তীরে সিদ্ধেশ্বরী মঠ অবস্থিত। মাগুরা শহর থেকে সিদ্ধেশ্বরী মঠের দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। সুদূর অতীতে এই জায়গাটিকে কালিকাতলা শ্মশান নামে ডাকা হত। জানা যায়, অনেককাল আগে থেকেই কালিকাতলা শ্মশানে একটি মঠ এবং সিদ্ধেশরী মাতার মন্ত্রঙ্কিত শিলাখন্ড ও কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠিত ছিল।

অতি প্রাচীনকালে নির্মিত হওয়ায় সিদ্ধেশরী মন্দিরের নির্মাণ কাল এবং নির্মাতা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। গভীর জঙ্গলে মাঝে অবস্থিত এই জায়গাটি সন্যাসীগণ তপস্যার জন্য পছন্দ করতেন। সিদ্ধেশ্বরী মঠের স্থান থেকে সপ্তদশ শতকের আগে থেকে নবগঙ্গা ধরে পূর্ণাথীগণ কামাক্ষ্যার পথে তীর্থে যাত্রা করতেন। আর তখন সাধু সন্যাসীদের পদচারনায় সিদ্ধেশ্বরী মঠ মুখর থাকতো।

একসময় চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আসা রঙ্গমাচার্য সন্যাসী সিদ্ধেশ্বরী মঠের মঠস্বামী ছিলেন। পরবর্তীতে যখন শ্রীমন্ত রায় দীক্ষা লাভ করেন, তার মাধ্যমেই কালিকাপুর সিদ্ধেশরী মঠে মঠস্বামীদের বসবাস শুরু হয়। তখন মঠস্থলে সন্যাসীদের থাকার তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না তাই নলডাঙ্গার অধিশ্বর শ্রীমন্তরায় দীক্ষা গুরু ব্রহ্মান্ডগিরির আদেশে পূর্ববর্তী মঠে সাধুগণের জন্য আশ্রম নির্মাণ করে দেন এবং ২৫০ বিঘা জমি দান করেন।

ব্রহ্মান্ডগিরির মৃত্যুর পর রাজাদের অবহেলায় সিদ্ধেশ্বরী মঠের মঠস্বামীদের নিযুক্ত গোমস্থাদের অযত্ন ও স্বার্থপরতায় ক্রমেই মঠের দুরাবস্থা বাড়তে থাকে। শিলাখন্ডটি মন্দির থেকে চুরি হয়, মন্দিরের স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে। পুজার ঘরটি অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়, এতে শুধু মন্দিরের রীতি রক্ষা হচ্ছিল। একসময় এস্থানটি জঙ্গলেপূর্ণ হয়ে উঠে। প্রায় ২০০ বছর পর অমলানন্দ ব্রাহ্মন সাধু এখানে এসে পুনরায় মঠ প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব
কবি ফররুখ আহমদ : কবি ফররুক আহমদ মাগুরা জেলার সদর মাঝ-আইল গ্রামে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ই জুন বিখ্যাত সৈয়দ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালের ২৯ শে অক্টোবর মাত্র ৫৬ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন।

ডাঃ লুৎফর রহমান : ডা. লুৎফর রহমান মাগুরা শহরের সন্নিকটে পারনান্দুয়ালী গ্রামে ১৮৮৯ সালে মামা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৬ সালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সাংবাদিক ও সাহিত্যিক শহীদ সিরাজউদ্দিন হোসেন : ১৯২৯ সালের ১ মার্চ মাগুরার শালিখা উপজেলার শরুশনা গ্রামে শহীদ সিরাজ উদ্দিন জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর তারিখে স্বাধীনতা বিরোধী হানাদার বাহিনীর হাতে তিনি শহীদ হন।

সৈয়দ আলী আহসান : সৈয়দ আলী আহসান ১৯২২ সালে মাগুরার আলোকদিয়া গ্রামে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ ‘চাহার দরবেশ’ পুঁথি সাহিত্যের উপদানে রচিত। তার অনেক আকাশ ‘একক সন্ধ্যায় বসন্ত’ ‘সহসা সচকিত’ ‘উচ্চারণ’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮৬ সালে ‘আধুনিক কাব্য চেতনা’ এবং ‘মহম্মদ মনিরুজ্জামানের কবিতা’ প্রকাশিত হয়। তিনি কিছু বিদেশী কবিতা ও নাটকের অনুবাদ করেছেন।

সৈয়েদা সুফিয়া খাতুন : সৈয়েদা সুফিয়া খাতুন ১৯২৭ সালে মাগুরা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। যশোরের ‘অবলাকান্ত মজুমদার সাহিত্য পরিষদ’ সৈয়দা সুফিয়া খাতুনকে তার সাহিত্য কর্মে স্বীকৃতি স্বরূপ ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করে।

শেখ হবিবর রহমান : শেখ হবিবর রহমান ১৮৯০ মতান্তরে ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলাধীন ঘোষগাতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ৭ মে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে তিনি পরলোক গমন করেন।

শিল্প ও বাণিজ্য
মাগুরা শিল্পে তেমন উন্নত নয়। এখানকার বৃহৎ টেক্সটাইল মিল ‘মাগুরা টেক্সটাইল মিলটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। আড়পাড়া টেক্সাটাইল মিলে গেঞ্জি, ছাতার কাপড় ইত্যাদি তৈরি হয়। দেশের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান জিকিউ বলপেনের একটি ইউনিট মাগুরায় ছয়ঘরিয়ায় অবস্থিত এবং নিশং জুট মিলটি ইছাখাদায় অবস্থিত। এছাড়াও বিস্কুট, চানাচুর, সাবান প্রভৃতি নানাবিধ কুঠির শিল্প মাগুরাতে অবস্থিত।

মাগুরায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সবজি এবং ফলমূল উৎপাদন হচ্ছে। এখানে উৎপাদিত শাক সবজি, কাচামরিচ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় হয়। কাঁচামাল কেনা বেচার জন্য মাগুরা শহরের ঢাকার রোডে একটি বৃহত্ত কাঁচাবাজার গড়ে উঠেছে। মাগুরা সদর উপজেলার হাজীপুর এলাকায় প্রচুর লিচু উৎপন্ন হয়। এছাড়া মাগুরাতে প্রচুর কলা উৎপন্ন হয়।

নামকরণ
মাগুরার নামকরণ করা হয় মুঘল যুগে। এর নামকরণ কিভাবে হয়েছে তা স্থিরভাবে বলা দুস্কর। জানা যায়, এক কালে সুন্দরবনের কাছাকাছি এই অঞ্চলে মগ জল দস্যুদের দারুণ উৎপাত ছিল। কুমার নদী ও নবগঙ্গার তীরে অবস্থিত বর্তমান মাগুরা শহরে ছিল তাদের আখড়া। নদী পথে তারা বর্গীদের মতো দস্যুপনা করতো। তাদের নামেই মগরা থেকে মাগুরা হয়েছে।

নেত্রকোণাতে ও দেখা যায় সেখানে মগরা নামে একটি নদী ও রয়েছে। বাংলাদেশে মাগুরা নামে আরো বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে, তবে জেলার মর্যাদায় উন্নীত হওয়ায় মাগুরা এখন শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার।

কাজী কাদের নওয়াজের বাড়ি

কাজী কাদের নওয়াজ ছিলেন বিশিষ্ট কবি, শিক্ষাবিদ এবং সাহিত্যানুরাগী। সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই তার পারদর্শিতা থাকলেও কবিতার প্রতি ছিল বিশেষ আকর্ষণ। রবীন্দ্র ভাব বলয়ের প্রভাব থাকলেও কবির রচনায় স্বকীয়তা ছিল চোখে পড়ার মত। প্রেম, প্রকৃতি, দেশ, সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহবান ছিল তার কবিতার মূল্য উপজীব্য। তৎকালীন সময়ে কবির অসংখ্য লেখাই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। বর্তমানে ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতাটি বাংলাদেশে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ানো হয়।

১৯০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি মুর্শিদাবাদের তালেবপুরে তার মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট গ্রামে কবি কাজী কাদের নওয়াজের পৈতৃক নিবাস হওয়ার সুবাদে বর্ধমানের মাথরুন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯২৩ সালে এন্ট্রান্স পাশ করেন। এরপর বহরম কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাক্রমে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ এবং এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৩২ সালে সাব-ইন্সপেক্টর অব স্কুল পদে যোগদান করে পরবর্তীতে ১৯৪৬ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর কবি কাজী কাদের নওয়াজ প্রথমে ঢাকায় নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং পরে দিনাজপুর জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৬ সালে অবসর গ্রহণের পর মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার মুজদিয়া গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কবি বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছিলেন। ১৯৮৩ সালের ৩ জানুয়ারি কবি কাজী কাদের নওয়াজের বৈচিত্র্যময় জীবনের অবসান ঘটে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper