নারী পুলিশের আলোকবর্তিকা
শফিউল আজম টুটুল
🕐 ৩:৪৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২০
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিন। দক্ষতা, সততা, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় কর্তৃব্যনিষ্ঠা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। বরিশাল রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার হিসেবেও নির্বাচিত হন তিনি। প্রতিবেদন তৈরি করেছেন ঝালকাঠি প্রতিনিধি শফিউল আজম টুটুল
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিন। দক্ষতা, সততা, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় কর্তব্যনিষ্ঠা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন।
মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারসহ মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, লেখাপড়া ফাঁকি দিয়ে রাতে পার্ক ও বিভিন্ন স্থানে আড্ডা দেওয়া শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে বাড়ি পাঠানো, দস্যুদের হাত থেকে সাধারণ মানুষের জমি উদ্ধার, সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কাজের জন্য প্রশংসিত হন ফাতিহা ইয়াসমিন। এ জন্য বরিশাল রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।
জেলায় কিশোর গ্যাং, সামাজিক ও মানবিক অবক্ষয় রুখতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার (এসপি) ফাতিহা ইয়াসমিন। সন্ধ্যার আগেই তরুণদের বাড়ি ফেরানো, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে অভিভাবক সমাবেশ ও স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং সভাসহ নানা কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন এসপি ফাতিহা ইয়াসমিন। ফলে অভিভাবকদের মধ্যে ফিরেছে স্বস্তি।
অভিভাবকদের সমন্বয়ে জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিভাবক সমাবেশ এবং মাদক, জঙ্গিবাদ, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, যৌতুকবিরোধী জনসচেতনতামূলক সভা ও স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং সভা করছেন নিয়মিত। সন্তানরা কোথায় যায়, কি করে, ঠিকমতো স্কুলে যায় কি-না, নিয়মিত পড়াশোনা করে কি-না, পার্কে আড্ডাবাজি করে কি-না সে সম্পর্কে এসব সমাবেশে তিনি অভিভাবকদের সন্তানের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখারও আহ্বান জানান।
ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দেন এসপি ফাতিহা ইয়াসমিন। তিনি উপস্থিত থেকে যানবাহনের কাগজ যাচাই-বাছাই করেন। যাদের কাগজ ত্রুটিযুক্ত তাদের মামলা এবং যাদের কাগজ ত্রুটিমুক্ত তাদের ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। এসব কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ঝালকাঠি শহরকে যানজটমুক্ত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে গাড়ি চেকিং ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন।
ফাতিহা ইয়াসমিন বলেন, ঝালকাঠিতে আসার পর দেখেছি এখানে উঠতি ছেলেদের রাতভর আড্ডাসহ বিভিন্ন ধরনের সমাজ ও আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড চলে। কিন্তু বলে দিয়েছি ঝালকাঠিতে এসব চলবে না। যারা এসব বেআইনি কাজ করছেন তাদের সম্পূর্ণরূপে শুদ্ধ হয়ে চলতে হবে। নতুবা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চ্যালেঞ্জিং পেশা
প্রথম পছন্দের ক্যাডার ছিল পুলিশ। ২৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সেই ক্যাডারেই যোগদান করলেন। চোখে-মুখে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার স্বপ্ন তার। নারীরাও যে অপরাধ দমনে সফল হতে পারে সেই দৃষ্টান্তই রাখলেন তিনি। চাকরি জীবনের প্রতিটি ধাপেই কঠোর পরিশ্রম আর সফলতার পরিচয় দিয়ে আজ তিনি পুলিশ সুপার পদে একটি জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখছেন। কর্মস্থলে তিনি সব সময়ই পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
এখানে সন্তানের মমতা, পরিবার কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে ছোট শিশুসন্তানকে রেখেও তার যেতে হয়েছে দেশের বাইরে মিশনে। সাত ভাইবোনের সবচেয়ে ছোট ফাতিহা ইয়াসমিন তার বাবার অনুপ্রেরণায়ই এ পেশায় এসেছেন।
ফাতিহা ইয়াসমিন বলেন, বাবার অনুপ্রেরণা, ইউনিফরমকে ভালোবেসে এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধসহ অপরাধ দমনে সরাসরি ভূমিকা রাখতেই আমি পুলিশ ক্যাডারকে বেছে নিই। আমার বিশ্বাস এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারছি। আমি এ পর্যন্ত অনেক বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছি, ইভটিজিং ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে পারছি, এটাই আমার সার্থকতা।
শৈশব থেকে ফাতিহা
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাঁকড়কান্দি ইউনিয়নের বরুয়াজানি গ্রামের মেয়ে ফাতিহা ইয়াসমিন। তার বাবা মরহুম হাজী আবুল মুনসুর তালুকদার ও মা ছাহেরা খাতুন। সাত ভাইবোনের মধ্যে ফাতিহা ইয়াসমিন সর্বকনিষ্ঠ। বরুয়াজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তার শিক্ষাজীবন শুরু।
এরপর তারাগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং নাজমুল স্মৃতি মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে আবার ‘ক্রিমিনালজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম’-এর ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তার এমফিলের গবেষণার বিষয় ছিল ‘উইমেন পার্টিসিপেশন ইন দ্য লোকাল গভার্মেন্ট’।
২৪তম বিসিএস দিয়ে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে মুন্সীগঞ্জ জেলায় সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস তার খুবই প্রিয়। তাই এ বিশ^বিদ্যালয় থেকেই ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করার ইচ্ছে আছে তার।
ফাতিহা ইয়াসমিন বলেন, বাবার ইচ্ছে ছিল মেয়ের নামের পিছনে ‘ডক্টর’ থাকবে। এখন বাবা বেঁচে নেই। বাবার ইচ্ছে পূরণের জন্য যেভাবেই হোক পিএইডি ডিগ্রি অর্জন করব।
বর্ণাঢ্য অভিযাত্রা
২০০৫ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে মুন্সীগঞ্জ জেলায় সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৭ সালে তিনি পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০১২ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে হাইতিতে যান। সেখানে তিনি লজিস্টিক অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে ডেপুটি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ঢাকার সিআইডি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন সেন্টার, ডিএমপিতে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এবং সব শেষ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সৎ ও সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তার সুনাম রয়েছে পুলিশ বাহিনীতে। চট্টগ্রামে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
ঝালকাঠিতে যোগদানের পর রাতে শহরের বিভিন্ন স্পটে স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা আড্ডা বন্ধ করতে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কখনো শিক্ষার্থীদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ গিয়ে মাঝেমধ্যেই উপস্থিত হন পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিন। সেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের মাদক-সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও বাল্যবিবাহ থেকে দূরে থাকার শপথ পড়ান।
সাক্ষাৎকার
কেমন ছিল আপনার স্কুলজীবন?
স্কুলজীবনটা একটা চমৎকার সময় পার করেছি। ক্লাস ওয়ান থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কখনো সেকেন্ড হইনি। সব ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করেছি। সব সময় নিজের মধ্যে একটা স্পিড কাজ করত। আমাকে ভালো করতে হবে। একজন আদর্শ মানুষ হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। বাবা আমাকে কখনো মেয়ে হিসেবে চিন্তা করতেন না। বাবা চিন্তা করতেন আমি ওনার একজন সন্তান। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। এসএসসিতে স্টার মার্ক ছিল। সব সময় ভালো মার্কস নিয়ে ভালো রেজাল্ট নিয়ে পরবর্তী ক্লাসে উঠতাম।
পড়াশোনা চলাকালীন অন্যদের চেয়ে আলাদা কিছু হতে হবে এমনটা কখনো ভাবছেন কি না?
পড়াশোনা চলাকালীন ভেবেছি অন্যদের চেয়ে আমাকে আলাদা কিছু একটা হতে হবে। সব সময় চিন্তা করেছি আমার বাবা-মায়ের সুনাম যেন রক্ষা হয়। এমন কিছু করতে হবে বাবা-মা যেন সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত হন। এই তাগিদটা আমার মধ্যে সব সময় কাজ করত।
নারী পুলিশ সুপার হিসেবে আপনার অভিজ্ঞতা কি?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী হয়ে একটি জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করা সত্যিই ভাগ্যোর ব্যাপার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারী নেতৃত্বের ক্ষমতায়নকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান সেই আশীর্বাদে আমি জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেছি।
আপনি বিসিএস দিয়ে পুলিশ ক্যাডারে সুযোগ পাওয়ায় আপনার বাবা-মা ও পরিবারের সমর্থন কেমন ছিল?
আমার সাহস ও প্রবল ইচ্ছা যে আমাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। এই ইচ্ছাটা এসেছে বাবা-মায়ের কারণে। তারা সব সময় আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। বাবা আমার পুলিশ হওয়া খবরে খুশিতে সারা রাত ঘুমাতে পারেননি।
ট্রেনিংয়ের অভিজ্ঞতা কি এবং সেখানে কি চ্যালেঞ্জ ছিল?
নারী ছিলাম কিন্তু পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে সমান তালে ট্রেনিং করেছি। যা কঠোর নিয়মানুবর্তিতা ও কঠোর অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শেষ করতে হয়েছে। মেয়ে বলে পিছিয়ে ছিলাম না। প্রচণ্ড মানসিক শক্তি নিয়ে এগিয়ে গিয়েছি।
ট্রেনিং শেষে যখন ইউনিফর্ম প্রথম গায়ে জড়ালেন তখনকার অনুভূতি কেমন ছিল?
সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে ইউনিফর্ম পরে প্রথম মুন্সীগঞ্জে যখন যোগদান করি তখন দায়িত্বটা অনেক বেড়ে যায়। সেই অনুভূতিটা ছিল চমৎকার। আর সেটা ছিল দায়িত্বশীল হওয়ার অনুভূতি।
পুলিশ বাহিনীতে দীর্ঘ সময়ে আপনার ভালো ও মন্দ অভিজ্ঞতার কথা যদি বলেন?
এই দীর্ঘযাত্রায় ভালো ও মন্দ লাগার অনুভূতি দুটোই আছে। প্রথমত ভালো লাগার অনুভূতি হচ্ছে- মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরেছি। আমি বাংলাদেশ পুলিশের একজন গর্বিত সদস্য হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করেছি। আর কিছু মন্দ অভিজ্ঞতা হলো- পরিবার-পরিজন রেখে যখন মিশনে যাই তখন বিদেশের মাটিতে গিয়ে একা থাকার বিষয়টি কিছুটা কষ্টের মনে হয়েছে।
পুলিশে কাজ করতে গিয়ে অনেকটা সময় স্বামী ও সন্তানদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন?
পরিবার থেকে সব সময় সহযোগিতা পেয়েছি। আমার স্বামী ও সন্তানরা সব সময়ই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে আমার স্বামীর সহযোগিতার কারণে আমি মিশনে যেতে পেরেছি এবং মাঠে কাজ করতে পারছি। তাদের কারণে প্রতিকূল ও অনুকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে কাজ করতে পারছি।
নারী অফিসার হিসেবে পুলিশ প্রশাসন ও জনগণের কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন?
কাজ করার জন্য আমি সব সময় অনুকূল পরিবেশ পেয়েছি। আমি যেখানেই কাজ করেছি সেখানে প্রশাসন এবং জনগণ আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আমি নিজেকে নারী পুলিশ সুপার মনে না করে একজন পুলিশ সুপার হিসেবে সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি তারাও সব সময় সহযোগিতা করেছে।
আপনি নারী পুলিশ সুপার এ বিষয়টি আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
আমি এখানে একজন পুলিশ সুপার। পুলিশ সুপারকে পুরুষ বা মহিলা হওয়ার সুযোগ নেই। আমি জখন ইউনিফর্মটা পরি তখন মনে হয় আমি পুলিশ সুপার। কাজ করার সময় আমার কাছে মনে হয় না আমি একজন নারী।
নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আপনার ম্যাসেজ কি?
নারীরা এখন সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গিয়ে মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করি। ওদের বলি ‘তোমাদের জীবনের লক্ষ ঠিক কর। তোমরা পুলিশের মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় আসতে পার। আমি নারী হয়ে যদি তোমাদের সামনে আসতে পারি তাহলে তোমরাও আমার মতো পারবে’।
পদক-প্রশিক্ষণ-মিশন
ফাতিহা ইয়াসমিন সম্প্রতি আইজিপি পদক পান। এর আগে তিনি জাতিসংঘ মিশনে অবদান রাখায় উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। তিনি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ইতালিতে কমান্ডার সিনিয়র স্টাফ কোর্স (এফপিএইউ), ২০১৭ সালে স্পেনে এবং ২০১৯ সালে কানাডায় ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশ কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন।
২০০৮ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ান ইন্সটিটিউট অব পুলিশ ম্যানেজমেন্ট আয়োজিত ‘ইন্টালিজেন্ট ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’-এ অংশ নেন। তিনি ২০১২ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে হাইতিতে যান সেখানে তিনি লজিস্টিক অফিসার এবং ২০১৫ সালে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে ডেপুটি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পরিবার
ফাতিহা ইয়াসমিনের স্বামী রফিকুল ইসলাম একজন ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রকৌশলী। তিনি ঢাকার একটি টেক্সটাইলে কর্মরত আছেন। দুই পুত্র সন্তান ও স্বামী নিয়ে সুখের সংসার ফাতিহা ইয়াসমিনের। বড় ছেলে ফাইয়াদ রাফসান ক্লাস ফোর এবং ছোট ছেলে রাসিফ মালিক ক্লাস থ্রিতে পড়ছে।
ফাতিহা ইয়াসমিন বলেন, কর্মক্ষেত্রে আমার সফলতার পিছনে আমার স্বামীর অবদান সব সময়ই আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তার প্রেরণায় আমি সফলতা পেয়েছি। আমার জীবনে দুজন পুরুষের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন আমার বাবা আরেকজন আমার স্বামী।
নারীর ক্ষমতায়নে ভাবনা
বেগম রোকেয়াকে নারী জাগরণের পথিকৃৎ মনে করেন ফাতিহা ইয়াসমিন। আজকে নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছে তার পিছনে বেগম রোকেয়ার অবদান অস্বীকার করা যাবে না বলে তিনি মনে করেন।
ফাতিহা ইয়াসমিন বলেন, বেগম রোকেয়া আমাদের নারী জাগরণের সূচনা করেছেন আর আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জিং পেশাকে গ্রহণে ভয় না পেয়ে ভয়কে জয় করার আহ্বান জানান।
সাদা রঙই প্রিয় তার
ছোটবেলা থেকেই সাদার প্রতি তার আকর্ষণ। এ কারণে সাদা রঙের পোশাককেই সব সময় অগ্রাধিকার দিতেন এবং এখনো দেন। রবীন্দ্র সংগীত এবং পংকজ উদাসের গজলও তার খুব প্রিয়। দেশের শিল্পীদের মধ্যে কুমার বিশ্বজিতের ভক্ত ফাতিহা ইয়াসমিন।
ছাত্রজীবনে অনেক কনসার্ট দেখেছেন কুমার বিশ্বজিতের। এসবের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণেও বেশ আনন্দ পান তিনি। এ পর্যন্ত তিনি ব্যক্তিগত ভ্রমণ ও সরকারি ট্যুর মিলিয়ে ২০টির মতো দেশ ভ্রমণ করেছেন।
এর মধ্যে জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড ও লন্ডন উল্লেখযোগ্য।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228