ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আলো ছড়ানোর কারিগর

আলতাফ হোসেন
🕐 ৩:৪৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৯

উপস্থাপক
তিনি একজন অত্যন্ত সুবক্তা। বাংলাদেশে টেলিভিশনের সূচনালগ্ন থেকে মনস্বী, রুচিমান ও বিনোদন-সক্ষম ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। টেলিভিশনের বিনোদন ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় তিনি পথিকৃৎ ও অন্যতম সফল ব্যক্তিত্ব।

পুরস্কার ও সম্মাননা

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে ১৯৭৭ সালে জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার, ১৯৯৮ সালে মাহবুব উল্লাহ ট্রাস্ট পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে রোটারি সিড পুরস্কার, ২০০০ সালে বাংলাদেশ বুক ক্লাব পুরস্কার। ২০০১ সালে এমএ হক ফাউন্ডেশান স্বর্ণপদক, ২০০৪ সালে রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার, ২০০৫ সালে একুশে পদক, ২০০৬ সালে শেলটেক পুরস্কার, ২০০৬ সালে ড. ইব্রাহীম স্মৃতি স্বর্ণপদক, ২০০৯ সালে পরিবেশ পদক, ২০০৯ সালে মার্কেনটাইল ব্যাংক পদক, ২০১০ সালে চ্যানেল আই আনন্দ আলো পুরস্কার, ২০১১ সালে সোশাল ইসলামী ব্যাংক পুরস্কার, ২০১১ সালে কাজী আজহার আলী স্মৃতি স্বর্ণপদক, ২০১২ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কারে ভূষিত হন।

আশিতেও অগ্রযাত্রা
আশিতেও আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ নতুন ভাবনায় উজ্জীবিত। তিনি যেমন সবাইকে স্বপ্ন দেখান, তেমনি নিজেও স্বপ্ন দেখেন। এখন তার স্বপ্ন নিজের লেখালেখিকে ঘিরে। ৮০ বছর বয়সে স্মৃতি, স্বপ্ন সবকিছুই খানিকটা ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবন যেমন মৃত্যু পথযাত্রী, তেমনি তার সৃজনশীলতারও হয়তো মৃত্যু আছে। তারপরও আমি লিখতে চাই, এখন দিনের দুই-তৃতীয়াংশ সময় লেখার পেছনে ব্যয় করব।’ এই কথার মধ্যে তার যে আকুতি, তা উজ্জীবনী শক্তিতে ভরপুর এক মানুষের।

জ্ঞান চর্চায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ব্যক্তিত্বের প্রায় সব দিক সমন্বিত হয়েছে তার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সংগঠক সত্তায়। মাত্র ৩৫ টাকায় ১০টি বই কিনে ১৯৭৮ সালে শুরু করেছিলেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র। কিশোর ও যুব সমাজকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

কৈশোর ও তারুণ্যের দিনগুলোতে তাদের হৃদয়কে স্নিগ্ধ, সজীব, উৎকর্ষময় করে তুলে আলোকিত, সমৃদ্ধ ও উন্নত মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র। সারা দেশের প্রতিভাবান ছেলেমেয়েদের তাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বেছে নিয়ে তাদের মানবসভ্যতার শ্রেষ্ঠ বইগুলো পড়িয়ে তাদের চেতনাজগত বিকশিত করে।

অন্যদিকে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক, সামাজিক কার্যক্রম ও সাহিত্যিক কর্মসূচি, প্রতিযোগিতা, অতিথি বক্তৃতা, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র দর্শন, শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত শ্রবণ, ভ্রমণ ইত্যাদি কর্মসূচি পরিচালনা করছে।

আলোকিত মানুষ চাই- এই স্লোগানের উপর ভিত্তি করে সংগঠনটি বাংলাদেশে বই পড়া ও সৎ চিন্তা বিকাশ ঘটানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’ এই স্বপ্ন নিয়েই বর্তমানে সারা দেশের প্রায় ১৭ লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী বই পড়া কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত।

এছাড়াও জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার আনন্দময় চর্চা ও উৎকর্ষের ভিতর দিয়ে উদার দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলার জন্য ২০১৩ সাল থেকে চালু হয়েছে আলোর ইশকুল ও অনলাইনে বইপড়া কর্মসূচি আলোর পাঠশালা। কেন্দ্রে রয়েছে সুবিশাল গ্রন্থাগার, চিত্রকলা প্রদর্শনী কক্ষ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনের কক্ষ, গান ও সঙ্গীতের আর্কাইভসহ আরও অনেক কিছু। ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার প্রকল্পের অধীনে সংগঠনটি বাসে করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন বই প্রেরণের কাজও করে। সারা দেশব্যাপী এ লাইব্রেরির প্রায় ৫৬টি ভ্রাম্যমাণ গাড়ি আছে।

কর্মজীবন
শিক্ষক হিসেবে জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখর স্পর্শ করেছেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তিনি শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন ১৯৬১ সালে মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে, পরবর্তী সময়ে সিলেট মহিলা কলেজে। ১৯৬২ সালের এপ্রিলে তিনি রাজশাহী কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবন শুরু করেন। সেখানে পাঁচ মাস শিক্ষকতা করার পর ঢাকায় ইন্টারমিডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজে যোগ দেন (বর্তমানে ঢাকা বিজ্ঞান কলেজ)।

এই কলেজে তিনি দুই বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ঢাকা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন আহমেদের আমন্ত্রণে সেখানে যোগদান করেন। ঢাকা কলেজেই তিনি তার শিক্ষকতা জীবনের স্বর্ণযুগ অতিবাহিত করেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু ঢাকা কলেজে প্রাণবন্ত, সপ্রতিভ, উজ্জ্বল ছাত্রদের পড়ানোর তৃপ্তি, শিক্ষক-জীবনের অনির্বচনীয়তম আস্বাদ ছেড়ে তিনি যেতে চাননি।

শিক্ষাজীবন
শিক্ষা জীবনে তিনি ১৯৫৫ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। ১৯৫৭ সালে বাগেরহাটের প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ (বর্তমান সরকারি পি. সি. কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক বিএ (অনার্স) ও ১৯৬১ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper