পিতার স্বপ্নের কারিগর
সায়েদ রহমান
🕐 ৮:১১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৯
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের পাঁচ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শেখ হাসিনা। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান।
পরবর্তীকালে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছয় বছর ভারতে অবস্থান করেন। ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ড থেকে তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন।
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই তিনি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন। তাকে বারবার কারান্তরীণ করা হয়।
তাকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ১৯ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়।
শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা।
বাংলাদেশ পেয়েছে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা। শেখ হাসিনার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে আর্থ-সামাজিক খাতে দেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করে।
শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বিশ্বের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন ডিগ্রি এবং পুরস্কার প্রদান করে।
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন, পেয়েছেন সম্মাননা।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন ঠিক, তবে তাকে ঘিরে শঙ্কাও কম নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে গিয়েছিলেন, তবে সেদিন তার জন্য যে বুলেট বরাদ্দ ছিল তা তাকে এখনো তাড়া করছে। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর দলের হাল ধরে আওয়ামী লীগকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন একটি মধ্যম আয়ের দেশ। বিশ্বে ৩৩তম অর্থনীতি (পিপিপি হিসাবে)। মাথাপিছু গড় আয় ১৬১০ মার্কিন ডলার। গত এক দশকে গড় প্রবৃদ্ধি ৬.৫ শতাংশ ছিল (চলতি আর্থিক বছরে ৭.২৮ শতাংশ)। সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার।
এসব অর্জন অস্বীকার করি কীভাবে? বাংলাদেশ কোনো উন্নত দেশের ক্লাব, যেমন জি-৭ বা জি-১০ এর সদস্য নয়। সেই ক্লাবের সদস্যরা তাদের সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের ভাষায় ‘বাংলাদেশের এই বিস্ময়কর উন্নয়নের’ মন্ত্র জানতে চান। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র করেছে, যার সঙ্গে এ দেশের কিছু সুধীজনও জড়িত ছিল।
সেই বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামনে বাংলাদেশের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন কীভাবে করতে হয় তা বাংলাদেশ থেকে শিখতে পার। বাংলাদেশ কীভাবে জঙ্গিবাদ দমন করেছে তা-ও এখন অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে শিখতে চায়।
রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করে শেখ হাসিনাই বাংলাদেশকে বিশ্বের পরমাণু ক্লাবের ৩২তম সদস্য করছেন। ২০০৯ সালে যখন শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন তখন দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল আনুমানিক ৩ হাজার মেগাওয়াট।
পিতার রেখে যাওয়া সাহস ও ভালোবাসা দিয়েই শেখ হাসিনা আজ সারা দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় নেত্রী ও যোগ্য শাসক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তিনি আজীবন মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228