ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

একটি পরিবার এবং শোক ও শক্তি

মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান
🕐 ৭:৫৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৯

শেখ হাসিনা-এ ডটার্স টেল- কোনো সিনেমা নয়, এটি একটি প্রামাণ্যচিত্র। টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবুর রহমান বাল্যকাল থেকে কলকাতায় গমন ও পরবর্তীতে ঢাকায় আগমন এবং তার পরিবার বিশেষ করে ছেলেমেয়ে নিয়ে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ঢাকায় গমন, বারবার বঙ্গবন্ধুর কারাভোগ ও জেলজীবন এবং ছয় দফা প্রভৃতি ঘটনা সাবলীলভাবে চলে আসে ঘটনার বিবরণে।

শেখ মুজিব কীভাবে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন এসব বিষয় খুব সংক্ষেপে এগিয়ে যায়। অতঃপর সামনে আসে একাত্তর। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এই দুই বোনের মাধ্যমে সব ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ঘটনা পরম্পরা এগিয়ে চলে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের দিকে। এরই মধ্যে শেখ হাসিনা ড. ওয়াজেদ মিয়ার কাছে জার্মানিতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সঙ্গে ছোট বোন রেহানাও যাবেন। তারাও বুঝতে পারেননি বাংলাদেশ এ ধরনের একটি অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হয়তো বা বাঁচিয়ে রাখবে বলে নিয়তিই তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে।

’৭৫-এর পর নানা ঘটনাপরিক্রমায় শেখ হাসিনা-শেখ রেহানা দিল্লিতে থাকাকালে তাদের নাম পাল্টে থাকতে হতো। তারা মি. তালুকদার, মিসেস তালুকদার ও মিস তালুকদার নামে পরিচিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে শেখ রেহানা বলেন, ‘এ এক দুর্বিষহ জীবন। স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও আমাদের ভিন দেশে থাকতে হয়েছে এবং নাম পাল্টাতে হয়েছে। এর চেয়ে দুর্বিষহ জীবন আর কিছু হতে পারে না।’

ছোট্ট ছোট্ট দুটো রুমের মধ্যে তাদের এই নির্বাসিত জীবনযাপন করতে হয়েছে। এই সময় মারাত্মক দারিদ্র্যের মুখোমুখি হতে হয় তাদের।
এ পর্যায়ে শেখ রেহানার বক্তব্যে মনে হয়, এই ধরনের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তারা মানসিক শক্তি হারাননি। বাংলাদেশের মাটিতে খুনিদের একদিন বিচার হবে- তারা এ বিষয়ে প্রত্যয়দীপ্ত হতে থাকেন।

অবশেষে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে এসে প্রথমেই সিদ্ধান্ত নেন, তাকে দল গোছাতে হবে। আওয়ামী লীগের খণ্ড বিচ্ছিন্ন অংশগুলোকে একত্রিত করতে হবে। আওয়ামী লীগ (মালেক), আওয়ামী লীগ (মিজান), আওয়ামী লীগ (গাজী) প্রভৃতি ভাগে বিভক্ত ছিল দলটি। আবার ১৯৮২ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকে নিজ দলে ভেড়ান। আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বেশ কিছু সিনিয়র নেতা আলাদা বাকশাল গঠন করেন।

রাজনীতির ময়দানে এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর সংগ্রামে তিনি রাতদিন ব্যস্ত থাকায় তার সন্তানদের লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন শেখ রেহানা সিদ্ধান্ত নেন তাদের ভারতের ননিতালে নিয়ে স্কুলে ভর্তি করাবেন। শেখ হাসিনা গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় জয় ও পুতুলকে ননিতালে ভর্তি করা হয়।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন নির্বাচনে জয়লাভ করে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে প্রথমেই যে কাজটি করেন, তা হলো ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা। অতঃপর গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি ও পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদন। দীর্ঘকালের সমস্যা জর্জরিত পার্বত্য শান্তি চুক্তি সমগ্র বিশ্বে প্রশংসিত হয়। অতঃপর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের আওতায় আনা শুরু হয়।

এই চলচ্চিত্রের প্রতিটি ঘটনা প্রত্যেকটি দৃশ্য ছিল হৃদয়গ্রাহী। দর্শক মুহূর্তের জন্যও পর্দা থেকে চোখ সরাতে পারেনি। ছবির ফাঁকে ফাঁকে দর্শক কেঁদেছে। ঘটনার সঙ্গে মিউজিকের সুর ছিল অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ। কখনো কখনো মিউজিক যেন বুকের মধ্যে মোচড় দিয়েছে বা দর্শকদের আবেগপ্রবণ করেছে।

একটি পরিবার কীভাবে একটি জাতির ভাগ্য নির্ধারণে জড়িয়ে পড়ে অথবা একটি পরিবারের সঙ্গে একটি জাতি কীভাবে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসে- ‘শেখ হাসিনা-এ ডটার্স টেল’ তারই প্রতিফলন।

শেখ হাসিনা গৃহে অন্তরীণ অবস্থায় বুকভাঙা কান্নার মধ্যে তার সন্তানদের পড়তে পাঠিয়েছিলেন, এ জন্য আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

শেখ হাসিনা সেই ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন বলে আজ প্রতিবন্ধীরা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুযোগের আওতায় এসেছে। এ জন্য তরুণ প্রজন্মের এই প্রামাণ্য চিত্রটি দেখা উচিত এবং শোককে কীভাবে শক্তিতে পরিণত করতে হয় তা জানা উচিত।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper