ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আবুল মনসুর আহমদের জন্মদিন উপলক্ষে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান

খোলা কাগজ ডেস্ক
🕐 ১:১৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৯

সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদের ১২১তম জন্মদিন ছিল গত ৩ সেপ্টেম্বর। এ উপলক্ষে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদানের আয়োজন করে আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) আয়োজিত অনুষ্ঠান নিয়ে খোলা কাগজের বিশেষ আয়োজন

আবুল মনসুর আহমদ আমাদের জানা ও বোঝার খোলা জানালা

আনিসুজ্জামান

আবুল মনসুর আহমদ আমাদের জানা ও বোঝার খোলা জানালা। তিনি ছিলেন বহুমুখী চিন্তা ও মেধার মানুষ। সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও রাজনীতির আমূল পরিবর্তনে তিনি কাজ করে গেছেন। সব দিক থেকে সফল এ মানুষটি আমাদের জন্য তার যে বই রেখে গেছেন তা অমূল্য সম্পদ।

তিনি তখনকার প্রেক্ষাপটে যেসব বিষয়ে লিখেছেন, বহু বছর পর আজও সেগুলো বাস্তবসম্মত। তখনকার সমাজের নানা বৈষম্য ও কুসংস্কার নিয়ে তার ধারালো লেখালেখি আজও প্রাণবন্ত। আজ যখন তার স্মৃতি নিয়ে আমরা চর্চা করছি, তখন তার কাজগুলো আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে নির্মোহ প্রতিবাদ হিসেবে অনুপ্রেরণা জোগায়।

সে সময়ে সমাজের নানা ভণ্ডামির বিরুদ্ধে তার লেখনী সাড়া ফেলেছিল। তিনি কারও তাবেদারি না করে মাথা সোজা রেখে চলেছেন। নীতির সঙ্গে আপস করেননি। সমাজের নানা অসংগতির দিকে তিনি দৃষ্টি প্রসারিত করেছেন এবং সে সব বিষয়ে নিজস্ব মতামত গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। তিনি ছিলেন দূরদর্শী ও চিন্তাবিদ, তার রেখে যাওয়া সৃষ্টি আমাদের গবেষণার বিষয় হয়েছে। বর্তমান প্রজন্মকে আলোমুখী করতে, যোগ্য নাগরিক ও দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে আবুল মনসুর আহমদের রেখে যাওয়া কীর্তি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।

আনিসুজ্জামান
জাতীয় অধ্যাপক

তিনি শক্ত মেরুদণ্ডের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

একাধিক স্বতন্ত্র পরিচয় ও বহুমাত্রিক প্রতিভাবান হিসেবে আবুল মনসুর আহমদ সব ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও রাজনীতির বিষয়ে তিনি ছিলেন পথপ্রদর্শক। কৃষি অর্থনীতিকে উপজীব্য করে তিনি কৃষক প্রজা পার্টির মাধ্যমে সক্রিয় রাজনীতিতে নিজের মেধা ও সাহস তুলে ধরেছেন।

সাহিত্যে ধর্ম ও ভাষার গভীর সংযোগ তুলে ধরে সংস্কারধর্মী চর্চাকে তিনি উৎসাহিত করেছেন। ভাষার কৃত্রিমতা দূর করার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি তিনি ধর্ম থেকে কথিত ভণ্ডদের দূরে রাখতে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি আমাদের সংকটগুলো গভীরভাবে ধারণ করেছেন এবং সেগুলো সমাধানের জন্য উপযুক্ত নির্দেশনা দিয়েছেন। মত প্রকাশের বৈরিতার মধ্যে তিনি ব্যঙ্গ ও কার্টুনের মাধ্যমে মানুষের প্রাণের দাবিগুলো তুলে ধরেছেন। অসাম্প্রদায়িক, বিনয়ী ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন এ মানুষটি তুলে ধরেছেন পলাশীর পরে দেশভাগের দুর্ভোগের আগামবার্তা। শক্ত মেরুদণ্ডের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আবুল মনসুর আহমদ কারও কোনো চাপ বা ভয়ে মাথা নত করেননি। তিনি কর্ম দিয়েই আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।

নতুন প্রজন্মের কাছে তার লেখাগুলো অনুপ্রেরণা হোক, আমাদের কুসংস্কার ও অন্ধকার দূর করতে তিনি আজও ভাস্বর।


সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
এমেরিটাস অধ্যাপক

তিনি ছিলেন ভিতরে-বাইরে সমান

সৈয়দ আবুল মকসুদ

অধিকাংশ মানুষের বাইরের আর ভিতরের চরিত্র আলাদা। বাইরে সুশোভিত নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে ভিতরের কুৎসিত বিষয়গুলো মেলে না। আমাদের সমাজে সবখানেই এ রকম লোক দেখা যায়। বাইরে অনেক ভালো কিন্তু সত্যিকার অর্থে ভিতরে দুর্নীতিবাজ। কাছ থেকে দেখা আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন ভিতরে-বাইরে সমান।

রাজনীতি, লেখালেখি এবং সাংবাদিকতায় তিনি আধুনিকতা ও স্বচ্ছতার প্রবর্তন করেছিলেন। শক্ত হাতে, সাহস করে নিজের বিশ্বাসকে স্থাপন করতেন। আজকের এ সময়ে তার মতো মানুষের চিন্তাচর্চা করলে সমাজ থেকে অনেক অবিচার দূর হয়ে যেত। তিনি সব সময়ই অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। তার সময়ের মুসলিম নিপীড়ন ও নানা রকম ধর্মীয় কুসংস্কারকে তিনি সবার সামনে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন, সেগুলো থেকে মুক্ত হয়ে সুন্দর সমাজ গঠনের জোর দিযেছেন। তার সৃষ্টিগুলো আজও বিশ্বস্ত দলিল। ষাট দশক পর্যন্ত তিনি যেসব বিষয়ে লিখেছেন তা শুধু সাহিত্য ও তার নিজের চিন্তাচেতনা না, আমাদের ইতিহাস এবং জীবনবোধের জন্য চিরন্তন দলিল।

বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা, প্রগতিশীল সাহিত্য ও বাস্তববাদী রাজনীতির জনক আবুল মনসুর আহমদ আমাদের মাঝে যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন তার অমূল্য সৃষ্টিকর্মের মধ্যে।

সৈয়দ আবুল মকসুদ
লেখক-বুদ্ধিজীবী

তার কীর্তি ছড়িয়ে দিতে এ পরিষদ চেষ্টা করে যাচ্ছে

মাহফুজ আনাম

নতুনদের মাঝে আবুল মনসুর আহমদের কর্ম তুলে ধরতে পারলে এ আয়োজন সার্থক হবে। আজ যারা বিভিন্নভাবে তাকে জানা ও বোঝার সুযোগ পেয়েছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ আশপাশে যারা আছেন বিশেষ করে বন্ধু ও সহপাঠীদের মাঝে এ বিষয়টি তুলে ধরা।

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সবার মাঝে তার সৃষ্টিশীলতা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব না হলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগও অনেক বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে। সবার জানা ও বোঝার পরিধি বেড়ে যাবে আবুল মনসুর আহমদের সাহিত্য, রাজনীতি ও সাংবাদিকতার প্রেক্ষাপট ও সে সম্পর্কে পড়াশোনা করলে।

এ বিষয়ে সবাইকে সহযোগিতা করার জন্য আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদ কাজ করছে। সীমিত সাধ্যের মধ্যে তার কীর্তি সবখানে ছড়িয়ে দিতে এ পরিষদ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কারও গবেষণা বা কোনো প্রয়োজন হলে বই ও তথ্য দিয়ে এ পরিষদ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। এ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সবাইকে বিনম্র শ্রদ্ধা।

মাহফুজ আনাম
সদস্য সচিব
আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদ

তার লেখা আজও আমাদের জীবনে প্রাসঙ্গিক

চেঙ্গিশ খান

বহুমাত্রিক প্রতিভার আবুল মনসুর আহমদের কাজের পরিধি ও ব্যাপ্তি অনেক। প্রায় শত বছর আগের চিন্তাচেতনা ও লেখা আজও আমাদের জীবনে প্রাসঙ্গিক। সফল এ মানুষটি সব ক্ষেত্রেই সোনা ফলিয়েছেন।

তিনি আমাদের ধর্মীয় কুসংস্কার ও সমাজ পরিবর্তনের চিন্তায় বড় ধরনের দাগ কেটেছেন। নিজে আরাম-আয়েশের চিন্তা না করে তিনি নতুন কিছু করা, নির্যাতিত মানুষকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সব রকমের চেষ্টা করে গেছেন। সময়ের প্রয়োজনে তিনি যখন নানা বিষয়ে ব্যঙ্গ করেছেন, তুলে এনেছেন আমাদের সমাজের নানা বৈষম্য ও অবিচারের কথা তখন অনেকেই পাশ থেকে সরে গেছেন। কিন্তু অকুতোভয় এ মানুষটি সত্য থেকে, নিজের বিশ্বাস থেকে সরে যাননি।

সে কারণেই আজ অনেক বছর পরও তার সব কর্মই আমাদের কাছে জানার নতুন দরজা খুলে দেয়। আজকের এ আলোচনা ও স্মরণ সার্থক হবে আমরা তাকে উপযুক্ত সম্মান ও কদর করলে।

চেঙ্গিশ খান
অধ্যাপক
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

তিনি কখনো আপস করেননি

মাহবুব মুর্শিদ

বাঙালি মুসলমান সমাজ সাহিত্যচর্চা থেকে বিমুখ ছিল, তখন নানা কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতা চেপে বসেছিল সমাজে। মুসলমানদের নানাভাবে নির্যাতিতও হতে হয়েছে। ওই রকম একটি সময়ে শক্ত হাতে কলম ধরে ধর্মীয় কুসংস্কার ও অবিচারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন আবুল মনসুর আহমদ। গর্জনের সামনে গর্জনই তার উত্তর, তিনি কখনো নিজের চিন্তা ও চেতনার সঙ্গে আপস করেননি।

সাম্প্রদায়িক ও কুসংস্কারের কারণে লেখাপড়া, সাহিত্যচর্চাসহ সব দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মুসলমান সমাজের তিনি উচ্চকিত ছিলেন। তিনি দূরদর্শিতার পরিচয় নানাভাবে দিয়েছেন, তবে ১৯৪৩ সালে জবান শিরোনামে প্রবন্ধে তিনি দেশভাগের পরে ভাষা ও ধর্মের অবস্থান তুলে ধরেছিলেন। ১৯৪৭-এর পরে তা আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়।

আজ নতুন প্রজন্ম যেভাবে উৎসাহিত হচ্ছে, আমার বিশ্বাস তার চিন্তা ও মেধার স্পর্শে এ প্রজন্ম নিজেদের গড়ার সুযোগ পাবেন।

মাহবুব মুর্শিদ
অধ্যাপক
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

তার জীবনী পাঠ জরুরি ও প্রাসঙ্গিক

ড. কাজল রশীদ শাহীন

এ সময়ের জন্য তার জীবনী পাঠ জরুরি ও প্রাসঙ্গিক। মানবিক মূল্যবোধ ও লক্ষ্য অর্জনে যে কৌশল তিনি দেখিয়েছেন তা অনুকরণীয়। তিনি একটি পত্রিকাকে জনপ্রিয় ও বস্তুনিষ্ঠ, রাজনীতিকে চলমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সাহিত্যকে জীবনমুখী করে বহুমাত্রিক প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন।

সময়ের প্রয়োজনে তিনি জীবন ঘষে আগুন বের করেছেন। আমার বিশ্বাস, সঠিক পথের সন্ধান পেতে, জীবনে বিজয়ী হওয়ার সাহস ও অনুপ্রেরণা পেতে আমাদের আবুল মনসুর আহমদ চর্চা করা দরকার। নির্ভয়ে, মাথা উঁচু করে নিজের কাজটি সঠিকভাবে করার জন্য তিনি আমাদের কাছে শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।

সব প্রজন্মের কাছেই আলোময় বাতিঘর এই ব্যক্তিকে নিয়ে আমরা ন্যায় ও সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি। আজকের প্রেক্ষাপটে তাকে অনুসরণ করলে, তার কাছ থেকে শিক্ষা নিলে আমাদের জীবনেও সোনা ফলবে।

ড. কাজল রশীদ শাহীন
সম্পাদক
দৈনিক খোলা কাগজ

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper