ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

‘একদলীয় ব্যবস্থা হবে সাময়িক’

শামসুজ্জামান খান
🕐 ১:৩৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৪, ২০১৯

মস্কোয় আফ্রো-এশীয় লেখক সম্মেলনে যোগদান উপলক্ষে ১৯৭৫-এর জুনে অধ্যাপক কবীর চৌধুরী দেখা করেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। সাক্ষাৎকারের সময় উপস্থিত ছিলেন শামসুজ্জামান খান। ঘটনাক্রমে সেখানে তখন ছাত্রলীগের কিছু কর্মীও উপস্থিত ছিল। সেই সাক্ষাৎকারের অংশ বিশেষ-

ছাত্রলীগের এক সদস্য : আপনি ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলনেও তো গেলেন।

বঙ্গবন্ধু : যাব না কেন? আমি কি শুধু তোমাদের নেতা? আমি সবার। তা না হলে তো আমি জাতির পিতা হতে পারতাম না। তা ছাড়া তোমাদের কাজে আমি সন্তুষ্ট হতে পারি না সব সময়। ছাত্র ইউনিয়নের ওরা পরিশ্রমী, নিষ্ঠাবান, ত্যাগী। ওরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিডবেড করে উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করেছে। আমি একটি মাত্র জাতীয় পার্টি করছি। ত্যাগী সৎ লোকরা কাজের মাধ্যমে সেই পার্টির সামনের কাতারে আসবে। অকর্মণ্য গলাবাজরা পেছনে পড়বে। দেখ না আমি আলতাফ সাহেবকে মন্ত্রী করেছি। অমন একটা লোক পাওয়া ভাগ্যের কথা। এবার তোমরা (ছাত্রলীগের ছেলেদের) যাও, প্রফেসর সাহেবের (অধ্যাপক কবীর চৌধুরী) সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে।

আলাপ শুরু-
বঙ্গবন্ধু : (শামসুজ্জামানের দিকে ঈঙ্গিত করে) তিনজনকে আমি আগেই ব্রিফ করেছি (লেখক সম্মেলনে ব্যাপারে)। তখন তুমি ছিলে না, প্রফেসর সাহেব তোমাকে নিয়ে এসে ভালোই করেছেন। তুমি দলের বয়োকনিষ্ঠ সদস্য। দলনেতার নির্দেশমতো চলবে। দেশের সুনাম যেন নষ্ট না হয়। আর আমাদের কিছু কাগজপত্র নিয়ে নেও। ফরাসরা (ফরাসউদ্দীন, তার তৎকালীন প্রাইভেট সেক্রেটারি) ব্যবস্থা করে দেবে।

প্রশ্ন : বর্তমান পদক্ষেপ, তথা বাকশাল...
বঙ্গবন্ধু : (কবীর চৌধুরীর দিকে ঈঙ্গিত করে) চৌধুরী সাহেব, ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস, সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করলাম, কত জেল খাটলাম আর এখন এক পার্টি করতে যাচ্ছি। আগস্ট মাস থেকে বাকশালের কাজ পুরোপুরি শুরু হবে। আমি এটা চাইনি। বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে। পাকিস্তানপন্থী, বিভিন্ন ইসলামী দল এবং অস্ত্রধারী জাসদের গণবাহিনী, সর্বহারা পার্টি প্রভৃতি প্রশাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ভেঙে ফেলার উপক্রম করে ফেলেছে। আমার বহু লোককে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। ঈদের দিন নামাজের মধ্যে হত্যা করা হয় শুনেছেন কখনো? অতএব, অন্য কোনো পথ খোলা না দেখে আমি স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের নিয়ে সমমনাদের একটি রাজনেতিক মঞ্চ হিসেবে বাকশাল গঠন করছি। আমি সমাজতন্ত্রবিরোধী, ধর্মনিরপেক্ষতাবিরোধী, এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো দল বা ব্যক্তিকে বাকশালে নেব না।

আরও একটি কথা, আমার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য নয়, দেশকে বাঁচানোর জন্য এই পদক্ষেপ। আমি ক্ষমতা অনেক পেয়েছি, এমন আর কেউ পায় নাই। সে ক্ষমতা হলো জনগণের ভালোবাসা ও নজিরবিহীন সমর্থন।

প্রশ্ন : বাকশালে স্থায়িত্ব...
বঙ্গবন্ধু : প্রফেসর সাহেব (কবীর চৌধুরী) শোনেন, তুমিও (শামসুজ্জামান খান) লিখে রেখ, আমার এই একদলীয় ব্যবস্থা হবে সাময়িক। দেশটাকে প্রতিবিপ্লবের হাত থেকে রক্ষা করে আমি আবার গণতন্ত্রে ফিরে যাব। বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফিরে যাব। তবে চেষ্টা করব আমার গণতন্ত্র যেন শোষকের গণতন্ত্র না হয়। আমার দুঃখী মানুষ যেন গণতন্ত্রের স্বাদ পায়।

প্রশ্ন : যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপার...
বঙ্গবন্ধু : আমাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল দালাল ও রাজাকারদের ক্ষমা না করতে। খুব কঠোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল, শামসুজ্জামান জানে বোধহয়, প্রতিবিপ্লবীদের ধ্বংস করে দিতে। আমি তা করিনি। তাদের কুকীর্তির কথা জেনেও করিনি। আমার চোখমুখে ভেসেছে অসংখ্য মা, বাবা, স্ত্রী ও শিশুর মুখ। আমার মনে হয়েছে, আল্লার আরশ কাঁপবে না? আমি মানবিক হতে চেয়েছি। অনেকগুলো পরিবারকে ধ্বংস করিনি। আমি জাতির স্রষ্টা হয়ে সেটা করতে পারি না। আমি ভুল করেছি, কি ঠিক করেছি ইতিহাস একদিন সে বিচার করবে। তবে খুনি ও প্রকৃত অপরাধীরা রেহাই পাবে না। তাদের বিচার করব।

প্রশ্ন : স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলা ভাষার গুরুত্ব...
বঙ্গবন্ধু : নির্দেশ দিছি। সব ফাইল বাংলায় লিখতে হবে। যে লিখবে না তাকে বাড়ি পাঠায়া দিবার ব্যবস্থা করব।

প্রশ্ন : বাকশালে শামসুর রাহমান যোগ দিচ্ছেন না?
বঙ্গবন্ধু : শামসুর রাহমান আমাদের সবার প্রিয় কবি। আমরা তাকে ভালোবাসি। যোগ দেওয়া না দেওয়া তাঁর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। আমরা জোর করতে চাই না।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper