মহাপুরুষের আগমনের দিনে
ড. এম এ মাননান
🕐 ১০:১১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০১৯
আজ সেই দিন যেদিন বাংলার বুকে জন্ম নিয়েছিলেন ক্ষণজন্মা এক মহাপুরুষ, যিনি শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট জাতিকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে জীবনের সোনালি দিনগুলো দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন। যৌবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সময় কাটিয়েছেন গরাদের ওপাশে; আর দিনক্ষণ গুনেছেন কবে সুযোগ পাবেন সবার প্রিয় মাতৃভূমিকে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে। তিনি উৎসর্গ করেছিলেন নিজের সবকিছু বাংলার মুক্তির জন্য। তার মনের গহীনে নিরন্তর বাজনা বাজিয়েছে মুক্তির জয়গান।
সেই কবে ১৯৪৮ সালের প্রথম মাসে ছাত্রলীগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু করেছিলেন আন্দোলন আর মুক্তির সংগ্রাম। আন্দোলন-সংগ্রাম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এগিয়েছেন ধাপে ধাপে, বুঝেশুনে, সন্তর্পণে। গঠন করলেন আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব দিলেন ভাষা আন্দোলনের। ১৯৪৮-এর ১১ সেপ্টেম্বর শাসকদের চক্রান্তে বহিষ্কৃত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব হারানোর পরেও একটুও দমে যাননি তিনি। বরং আরও ক্ষুরধার হলো তার সংগ্রামের নেতৃত্ব। ১৯৫২-এর ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিনের ‘উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে’ ঘোষণার প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে বাংলা ভাষা রক্ষার আন্দোলনকে এগিয়ে দেন অনেক দূর। দিন যায়, রাত যায়, বাঙলার এ অংশের মানুষের উপর শোষণ বাড়তে থাকে। তিনিও সেনাশাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম জোরদার করতে থাকেন, আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র, সামরিক শাসন আর সব প্রদেশকে একত্রে জুড়ে দিয়ে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার এক-ইউনিট পদ্ধতির বিরুদ্ধে অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে মিলে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। পূর্ব বাঙলার স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ছয়দফা দাবির রূপকার হিসেবে সারা দেশের হয়ে ওঠেন দুর্দমনীয় নেতা। এভাবে তিনি ক্রমান্বয়ে হয়ে উঠলেন বাঙালির মুক্তির প্রতীক।
তিনিই বাঙালিকে জাগিয়ে তুললেন, ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ থেকে; মোহমুক্তি ঘটালেন। হিমালয়ের মতো মাথা উঁচু করে অকুতোভয়ে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করলেন, বাঙালির আত্মপরিচয়ের সুযোগ করে দিলেন। দোর্দ- রূপকার হয়ে স্বাধীনতার পথে সাড়ে সাত কোটি মানুষকে হাঁটতে উদ্বুদ্ধ করলেন, একটি নতুন দেশের জন্ম দিলেন। মর্যাদাবান জাতি হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পাইয়ে দিলেন আর স্বাধীন জাতিকে দিয়ে গেলেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িকতার আলোকে দেদীপ্যমান একটি সংবিধান।
ঊনসত্তরের ২৩ ফেব্রুয়ারির সোনালি বিকেলে লাখ লাখ প্রিয় অনুসারীর উপস্থিতিতে তৎকালীন মশহুর ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদের ঘোষণায় তিনি হয়ে উঠলেন ‘বঙ্গবন্ধু। একাত্তরের ৭ মার্চে একই ময়দানে ‘রাজনীতির কবি’ হিসেবে বিশ্বজোড়া খ্যাতি কুড়ালেন ১৮ মিনিটের কাব্যময় ভাষণ দিয়ে। আর বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি একই স্থানে স্বাধীন ভূমিতে পা দিয়ে আরেকবার উজ্জীবিত করলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দিশাহারা মানুষগুলোকে। আলোর পথ দেখালেন সামনে এগিয়ে যাবার। হলেন স্বাধীনতার মহানায়ক।
যে মহাপুরুষের কথা বলছি তিনি হলেন টুঙ্গিপাড়ার নিভৃত গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের স্থপতি, স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীনতার ঘোষক আর সোনার বাংলার রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হওয়া আজকের এই দিনে, তার জন্মদিনে ১৭ মার্চে কামনা করি এ বিশাল হৃদয়ের মানুষটির আত্মার মাগফিরাত আর স্বগের্র একটি সুন্দর স্থান।
ড. এম এ মাননান : শিক্ষাবিদ ও কলাম লেখক;
উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228