ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু

শেখ মোস্তফা জামান
🕐 ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০১৯

দক্ষিণাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম টুঙ্গিপাড়া। এই গ্রামেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ এখানেই জন্মেছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই বেড়ে উঠেছেন এই গ্রামে।

বাবা শেখ লুৎফর রহমান এবং মা সায়েরা খাতুনের খুবই আদরের ছেলে তিনি। ডাকনাম খোকা। বংশের বড় ছেলে হিসেবে সব আদর-সোহাগ তিনিই পেয়েছেন। টুঙ্গিপাড়ার গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাকে ভর্তি করা হয় সাত বছর বয়সে।

গ্রামে তখন একটি মাত্র ইংরেজি স্কুল ছিল, যা পরে হাইস্কুল হয়। সেই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে চতুর্থ শ্রেণিতে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৩৪ সালে যখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র, তখন ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘ছোট সময়ে আমি খুব দুষ্টু প্রকৃতির ছিলাম। খেলাধুলা করতাম, গান গাইতাম এবং খুব ভালো ব্রতচারী করতে পারতাম। হঠাৎ বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার হার্ট খুব দুর্বল হয়ে পড়ে। আব্বা আমাকে নিয়ে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে যান। কলকাতার বড় ডাক্তার শিবপদ ভট্টাচার্য, একে রায় চৌধুরী আরও অনেককেই দেখান এবং চিকিৎসা করাতে থাকেন। প্রায় দুই বছর আমার এভাবে চলে।’ এরপর ১৯৩৬ সালে তার চোখে গ্লুকোমা ধরা পড়ে। আবার কলকাতায়। সেখানে থাকতেন বোনের বাড়িতে। ডাক্তার চোখে অপারেশনের পরামর্শ দিলেন। ভর্তি হলেন কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরদিন সকালে অপারেশন। শুনে ভয়ে পালাতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু পারলেন না। অপারেশন করার পর তিনি ভালো হলেন। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিলেন, কিছুদিন লেখাপড়া বন্ধ রাখতে হবে, চশমা পরতে হবে। সেই ১৯৩৬ সাল থেকেই তিনি চশমা পরা শুরু করেন। শেখ মুজিবের সহপাঠীরা এ ফাকে ক্লাসে এগিয়ে যায়। যে কারণে ১৯৩৭ সালে খোকাকে গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে ভর্তি করা হয়। এখানেই খোকার পড়ালেখার জন্য বাড়িতে কাজী আব্দুল হামিদ মাস্টারকে রাখলেন। তার জন্য আলাদা ঘরও দেওয়া হয়েছিল। এই হামিদ মাস্টারের নেতৃত্বে একটা ‘মুসলিম সেবা সমিতি’ গঠন করা হয়েছিল। সমিতির অন্যতম সংগঠক ও একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন শেখ মুজিব।

১৯৩৯ সালে গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা একে ফজলুল হক ও মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সফর করেন। তাদের ভাষণ শুনে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর নেতা শেখ মুজিবের জীবন ধারা বদলে গেল। দেশ এবং দেশের দরিদ্র মানুষ তাকে আলোড়িত করে। পরাধীন দেশ তার ভালো লাগত না। স্বপ্ন দেখতেন ইংরেজ বিতাড়ন করে স্বাধীন দেশ গড়ার। সেই স্বপ্নের পথ ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি।

১৯৪২ সালের পুরোটা সময় শেখ মুজিব খেয়ে না খেয়ে রিলিফের কাজ করেছেন। তারপর কত জেল-জুলুম, কত আন্দোলন-সংগ্রাম এবং সবশেষে যুদ্ধবিগ্রহের মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালিকে স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং তাদের জন্য বাংলাদেশ নামক নতুন রাষ্ট্র এনে দিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তির পর ১৯৬৯ সালে ছাত্র জনতা তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করে। বিশ্ব মানচিত্রে ১৯৭১ সালে ঠাঁই পেল একটি নতুন দেশ। নাম তার বাংলাদেশ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশের মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল। হানাদার হটাতে কিশোররাও সেদিন যুদ্ধ করেছে অস্ত্র হাতে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper