ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

৫২’র স্ফুলিঙ্গ ৬১-তে বরাকে

কুন্তল দে
🕐 ১০:২৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯

পৃথিবীতে বাংলাই একমাত্র ভাষা, যে ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে অনেককে। পেরিয়ে আসতে হয়েছে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের কঠিন পথ। ১৯৫২ সালে বাংলাদেশের ঢাকায় মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে প্রাণ দিয়েছিলেন সালাম, রফিক, জব্বারসহ অনেক তরুণ। ভাষা আন্দোলনের সেই গৌরবগাথা স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছিল আসামের বরাক উপত্যকায়।

বাংলা ভাষার স্বীকৃতির আন্দোলনে ১৯৬১ সালের ১৯ মে পুলিশের গুলিতে ভেসে গিয়েছিল শিলচর রেলস্টেশন। ঘটনাস্থলেই শহীদ হন সাতজন। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও চারজনসহ মারা যান ১১ জন।

তৎকালে বাংলাদেশের সিলেট সীমান্তবর্তী একটি অঞ্চল ছিল কাছাড়। এখানে বসবাস ছিল প্রায় ৫০ লাখ বাঙালির। কাছাড়ের প্রধান শহর শিলচর। আসাম রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত কাছাড় জেলা ভেঙে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তিনটি জেলা হয়েছে- কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি। তিন জেলাকে একত্রে ডাকা হয় বরাক উপত্যকা নামে।

জানা যায়, কাছাড় জেলা ঐতিহাসিকভাবে আসামের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। উনিশ শতকের শেষ প্রান্তে কাছাড়কে আসামের অন্তর্ভুক্ত করার পর থেকে শুরু হয় ভাষাগত বঞ্চনা। তা অব্যাহত থাকে দেশ স্বাধীনের পরও। আসামের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে শুধু অহমিয়াকে স্বীকৃতি দিয়ে ১৯৬০ সালের ২৪ অক্টোবর বিল পাস হয়। বাংলাভাষীরা দাবি তোলেন, আসাম রাজ্যের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে বাংলা ভাষাকেও। ভাষার মর্যাদা ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শুরু হয় আন্দোলন। গঠিত হয় কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদ। হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জেও গঠিত হয় গণসংগ্রাম পরিষদের শাখা।

এ সংগঠন করতে ছাত্র-জনতাকে সংগঠিত করে গ্রামে গ্রামে পদযাত্রার মাধ্যমে। আসাম সরকারের ভাষা বিলের প্রতিবাদ চলে। টানা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৯৬১ সালের ১৯ মে তিন জেলায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয় এ অহিংস আন্দোলনে। সেদিন শিলচর রেলস্টেশনে রেল অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেয় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। আন্দোলনরত মানুষের ওপর অতর্কিতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ছোড়ে কাঁদানে গ্যাস, সেই সঙ্গে গুলি চালায় নির্বিচারে। পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ১১ জন।

১৯ মের ভাষা শহীদরা হলেন- কমলা ভট্টাচার্য, শচীন্দ্র চন্দ্র পাল, কানাই লাল নিয়োগী, হিতেশ বিশ্বাস, সুকোমল পুরকায়স্থ, তরণী দেবনাথ, চ-ীচরণ সূত্রধর, সুনীল সরকার, কুমুদরঞ্জন দাস, সত্যেন্দ্র দেব ও বীরেন্দ্র সূত্রধর।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারীদের বরাতে জানা যায়, বাংলাদেশের বাহান্নর ভাষা আন্দোলন প্রেরণা জুগিয়েছিল তাদের। আন্দোলনের বিষয়ও একসূত্রে গাথা। ভাষার আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, মাতৃভাষাকে রক্ষা করা। তারাও চেয়েছিলেন রাষ্ট্রভাষার পাশাপাশি অন্যতম দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা ও বাংলা ভাষার স্বীকৃতি।

আসামে ভাষা আন্দোলনে প্রাণদানকারীরা অবশেষে পেয়েছেন শহীদের মর্যাদা। এ মর্যাদা নিশ্চিত করেছে ভারত সরকার। আসামের একটি ডিভিশন হওয়া সত্ত্বেও বরাকের কাছাড়, হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জের সরকারি কাজের ভাষা এখন বাংলা। বাংলা ভাষার সম্মানের সঙ্গে মিশে আছে ভাষাশহীদদের রক্ত ও অধিকার আদায়ের দীপ্ত প্রত্যয়।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper