যুদ্ধাপরাধের বিচার
চার দশকের কলঙ্ক মুক্তি
শাহানারা আক্তার
🕐 ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৮
জাতি হিসেবে বাঙালির জন্মদায় শোধের এক অভূতপূর্ব সুযোগ নিয়ে আসে যুদ্ধাপরাধীর বিচার। দীর্ঘদিন পরে হলেও আমরা বেরিয়ে আসতে পেরেছি নিজেদের হাতেই তৈরি করা এক বিশাল কলঙ্ক আর পাপের দেয়াল ভেঙে। তা ছাড়া যে কোনো সভ্য সমাজ বা জাতিতে অপরাধীর বিচার করাটা মনুষ্যত্ব কিংবা সভ্যতারই মাপকাঠি। কিছুটা দেরিতে হলেও আমরা তা ধরে রাখতে পেরেছি।
পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধাপরাধের বিচার অবশ্যই নতুন কিছু নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই চার বিজয়ী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পরাজিত জার্মান নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য নুরেমবার্গে স্থাপন করেছিল আন্তর্জাতিক সামরিক আদালত। এই আদালতে ২৪ জন শীর্ষ সামরিক ও রাজনৈতিক নাৎসি নেতার বিচার করা হয়েছিল যাদের ভেতর ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের মেয়াদ ছিল ১০ মাস।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানিরা তাদের পূর্ব পরিকল্পনা মতো, ঘুমন্ত বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। গুলি, অগ্নিসংযোগ, হত্যা অবলীলাক্রমে তারা চালিয়ে যেতে থাকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বিশেষ করে যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে ১৪ ডিসেম্বরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় এ দেশের সাহিত্যিক, অধ্যাপক, সাংবাদিক, শিল্পী, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী, চিকিৎসকদের। শতাব্দীর অন্যতম জঘন্য এই অপরাধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ছিল এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটির সদস্যরা। বিজয় লাভের পর থেকেই বাংলাদেশের জনগণ একাত্তরে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি করে আসছে। এই দাবিকে সামনে রেখে প্রণীত হয়েছে ১৯৭২ সালের দালাল আইন এবং ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন। ১৯৭২-এ গঠিত হয়েছে দালাল আইনের অধীনে বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু পঁচাত্তর-পরবর্তী রাজনৈতিক মেরুকরণে রাষ্ট্রকে বাধ্য করা হয় যুদ্ধাপরাধ বিচারের অঙ্গীকার থেকে সরে দাঁড়াতে।
১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম আবার এই দাবিকে সামনে নিয়ে আসেন। কিন্তু থেমে থাকেনি বিচারবিরোধী চক্রান্ত। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০০৯ সালে যুদ্ধাপরাধ বিচারের ইস্যুটি নতুন গতি পায়। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি প্রথম রায়ে আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দিয়ে প্রথম রায় ঘোষণা করা হয়। এরপর একই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ এ মামলার চূড়ান্ত রায়ে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় এবং সেই বছরের ১২ ডিসেম্বর কার্যকর করা হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228