ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে রোল মডেল

জ্যোতির্ময় নন্দী
🕐 ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৮

নারীর ক্ষমতায়ন বলতে যদি রাজনৈতিক ক্ষমতায় নারীদের অধিষ্ঠান বোঝানো হয়, তা হলে বলতে হবে, বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে যে রেকর্ডের সৃষ্টি করেছে, তা বিশ্বের অন্য কোনো দেশ এখনো অতিক্রম করতে পারেনি। এ দেশের জাতীয় সংসদে একই সময়ে একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও বিরোধীদলীয় প্রধান দেখা গেছে, যা এক অনন্য নজির। একই সময়ে মাঠের বিরোধী দলের প্রধানও নারী।

‘মাদার অব দ্য পার্লিয়ামেন্ট’ নামে পরিচিত ব্রিটিশ সংসদ ১৭০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সুদীর্ঘ ২৭২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৯৭৯ সালে তার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীকে পাওয়ার জন্য। অথচ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেরকার দুই দশকের মধ্যেই তার প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় বসাতে পেরেছে।

রাজনীতি ও অন্য খাতের মতো জনপ্রশাসনেও এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। দিন দিন বাড়ছে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা। বর্তমানে প্রশাসনের শীর্ষ পদ সচিব ও সমপর্যায়ের দায়িত্বে রয়েছেন ১০ জন নারী। নিজ যোগ্যতায় মাঠপ্রশাসনের একটি বিভাগীয় কমিশনার, ৬টি জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও ২০টি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (এডিসি) পদ দখলে রেখেছেন তারা। পাশাপাশি দেশের ১১৩টি উপজেলায় প্রশাসন পরিচালনা করছেন নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)।

এছাড়া সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্বে রয়েছেন ১০৮ জন নারী, যারা পুরুষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করছেন। এমনকি সবাইকে টপকে জনসেবা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসকের পদকও জিতে নিয়েছেন নারী কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি নিযুক্ত হন নাজমুন আরা সুলতানা। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নারী বিচারপতি রয়েছেন সাতজন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রথমবারের মতো নারী সৈনিক নেওয়া হয় ২০১৩ সালে, ‘সেনা চিকিৎসা শাখা’ (আর্মি মেডিকেল কোর-এএমসি)-তে। প্রথমবার শুধু চিকিৎসা শাখায় নারী নিয়োগ দেওয়া হলেও পরে করণিক কোরে (আর্মি কোর অব ক্লার্কস/আর্মি ক্লারিক্যাল কোর, এসিসি), সিগন্যালস কোরে, ইএমই (ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স) কোরে, ইঞ্জিনিয়ার্স কোরে, অর্ডন্যান্স কোরে এবং এএসসি (আর্মি সার্ভিসেস কোরে) নারীদের নেওয়া হয়। ঝুঁকিপূর্ণ পেশা পুলিশ বাহিনীতে দিনে দিনে বাড়ছে নারী উপস্থিতি। ক্রমেই বাড়ছে প্রাধান্য। দায়িত্ব পালন করছেন গুরুত্বপূর্ণ পদে। এখানেই শেষ নয়, দেশের সীমা ছাড়িয়ে তারা পৌঁছে গেছেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে।

যে খাতটিতে নারী কর্মীদের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটা হলো পোশাকশিল্প। এ শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের সিংহভাগই নারী। তবে কিছুদিন আগেও যেখানে তাদের হার ছিল ৮০ শতাংশের বেশি, বর্তমানে তা কিছুটা কমে ৬৫ শতাংশের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। তারপরও এখনো প্রায় ৪৪ লাখ নারী পোশাকশিল্পে কর্মরত।

২০১০ সালে বাংলাদেশে কর্মরত নারীর মোট সংখ্যা ছিল এক কোটি ৬২ লাখ। ২০১৬-১৭-তে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক কোটি ৮৬ লাখে। ২০১৭’এর বিশ্ব লিঙ্গ ব্যবধান প্রতিবেদন (গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট)-এ ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪৭তম। অথচ দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রতিবেশী দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তানের অবস্থান এ তালিকায় ছিল যথাক্রমে ১০৮, ১০৯, ১১১, ১২৪ ও ১৪৩তম স্থানে।

রাজনীতিতে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনের জন্য উইমেন ইন পার্লামেন্ট (ডব্লিউআইপি) গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ব পর্যায়ে তিনি এর আগেও নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী শিক্ষার প্রসারে অবদানের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন। সবমিলিয়ে নারীর ক্ষমতায়নে দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল।

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper