ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জহির রায়হানের হত্যা পরিকল্পিত

অনল রায়হান
🕐 ১২:৩৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮

একাত্তরে যারা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশাজীবীদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল, তাদের বিচার আদৌ হবে এ বিশ্বাস কারও ছিল না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেরকম পরিস্থিতি কখনোই ছিল না। আঁধারে ঢাকা ছিল গোটা জাতি। এখন বিচার হচ্ছে এবং সামনে আরো ফলপ্রসূ হবে, এ বিশ্বাস করি।

বর্তমান সরকারের যুদ্ধাপরাধী বিচার করবার জন্য যত উদ্যোগ তার সবই অবিস্মরণীয়। ট্রাইব্যুনাল গঠন, আন্তর্জাতিক বিশ্বস্ততা অর্জন, অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা এবং কার্যকর করা। এর সবই ছিল ধ্রুপদী উদ্যোগ। একবার যখন একটি রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এবং সেটার বিচারকার্য সম্পাদন করে ফেলে তখন তা কিন্তু একটা রেকর্ডেড ডকুমেন্ট।

আলোড়ন তোলার মতো ডকুমেন্ট। দেশের বাইরে যারা পলাতক আছেন আশরাফ উদ্দিন, চৌধুরী মঈনুদ্দীনসহ অন্যরা তাদেরও খুব দ্রুত সাজার আওতায় আনা দরকার। এ কারণেই বিমর্ষভাবে চাইছি আওয়ামী লীগ আবারও যেন ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগে যদিও এখন দেশবিরোধী লোকজন ভিড় জমিয়েছে। তাতেও শঙ্কিত হওয়ার কিছু দেখছি না। আওয়ামী লীগ সেটা নিশ্চয়ই টেকনিক্যালি এড়িয়ে যেতে পারবে। হেফাজতের সাথে যে আপোস তার কিছুটা দরকার ছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে; তা না হলে তো মুক্তিযুদ্ধেও বিরোধী দল ক্ষমতা গেড়ে বসবে। তা আমরা চাই না। আওয়ামী লীগ যে সাহসের পরিচয় দিয়েছে, আন্তর্জাতিক শত চাপ উপেক্ষা করেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে। আমরা আশা করি যারা পলাতক আছে, শীঘ্রই তাদের যে কোনো উপায়ে সাজার আওতায় নিয়ে আসবে। এটাই বিশ্বাস করি এবং পূর্ণ আশাবাদী।

তবে আমাদের যেসব বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছে, গণহত্যা করা হয়েছে সেসব নিয়ে গভীরভাবে কোনো পর্যবেক্ষণ লক্ষ করিনি। এর কারণ মূলত, আমরা দীর্ঘসময় মুক্তিযুদ্ধের চর্চা করতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধ চেতনা থেকে ছিটকে পড়েছিলাম। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড দেশ তথা বিশ্বের কাছে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা। তালিকা করে, লক্ষ্য করে আস্তে আস্তে ডেকে এনে এদের হত্যা করা হয়েছে। সেটাকে নিয়ে আরও বিস্তারিত, গভীরভাবে গবেষণার দরকার ছিল। সে গবেষণাপত্র হাতে পেলে সেটাকে বিশ্লেষণ করে সামনে এগুনো যাবে। আমরা আশাবাদী তা হবে।

মার্চের হত্যাকাণ্ড, জুন-জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ড এবং ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড সবই একসূত্রে গাঁথা। স্বাধীনতা-পরবর্তী জহির রায়হান হত্যাও একই সূত্রে গাঁথা। একসময়ে জহির রায়হানের ‘অন্তর্ধান’ বিষয়টি সামনে চলে আসছিল। কিন্তু আজ তা একেবারে স্পষ্ট, জহির রায়হানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের দেড় মাস পরে মিরপুর স্বাধীন হলো। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি। কয়েক লাখ বিহারি, জামায়াত-আলবদর, পাকিস্তানি, রাজারকার সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল। দেড় মাস ধরে ওরা ওখানেই ছিল। এরই মাঝে দেশ স্বাধীন ভেবে যেসব বাঙালি মিরপুরে ঢুকেছিল তাদের জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল। জহির রায়হান যখন কলকাতা থেকে ফিরে এসে জানলেন, মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সারসহ তার ঘনিষ্ঠজন নেই। তখন বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের একটা তদন্ত কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে কবীর চৌধুরীও ছিলেন।

জহির রায়হান তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন। সেই তদন্তে বেরিয়ে এলো জামায়াত, মুসলিম লীগ ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যৌথ পরিকল্পনাতে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছিল। ১৯৭২ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রেস ক্লাবে জহির রায়হান একটি সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা তার কাছে আছে; কেন, কী উদ্দেশ্যে হত্যা করা হলো এবং তিনি তা শীঘ্রই প্রকাশ করবেন। এরপর ওনাকে জানানো হলো শহীদুল্লা কায়সার, মুনীর চৌধুরী মিরপুরে বেঁচে আছেন। এরপর ৩০ জানুয়ারি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট মিরপুরে অপারেশনে গেল। জহির রায়হান সিভিলিয়ান হিসেবে ওই দলের সঙ্গে ছিলেন। সকাল সাড়ে ৮টায় রাজাকার, পাকিস্তানি, আলবদরদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সেখানেই জহির রায়হান নিহত হন। এরপর আমরা সেই গণহত্যা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার গবেষণাপত্রটিও আর পাইনি। সেটা পেলে বুদ্ধিজীবী হত্যার রহস্য উন্মোচন হতো।

লেখক : নির্মাতা, জহির রায়হানের ছেলে

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper