মুঠোফোনের বৈধতা যাচাই শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১২:৫২ অপরাহ্ণ, জুলাই ০২, ২০২১
মুঠোফোনের বৈধতা যাচাই কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি। এ প্রক্রিয়ায় ১ জুলাই থেকে যেসব নতুন মুঠোফোন নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে, তার মধ্যে কোনোটি অবৈধ হয়ে থাকলে গ্রাহককে জানিয়ে তিন মাস সময় দেওয়া হবে। এ সময় মুঠোফোন নেটওয়ার্কে সচল রেখে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নেওয়া হবে পরবর্তী ব্যবস্থা। এ ছাড়া ৩০ জুন পর্যন্ত গ্রাহকের হাতে থাকা সব চালু মুঠোফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনইআইআরে নিবন্ধিত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের এই প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় এখন থেকে কারো মোবাইল ফোন চুরি বা হারিয়ে গেলে খুব সহজেই তা উদ্ধার করা সম্ভব হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। দেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করবে বিটিআরসি। এতে মোবাইল গ্রাহকদের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিটিআরসি জানিয়েছে, অবৈধ মোবাইল সেট বৈধ করার সময় পাবেন সবাই। এখনই কারও মোবাইল সেট নিষ্ক্রিয় বা বন্ধ করা হবে না। তবে নতুন কেনার ক্ষেত্রে যাচাই করে কিনতে হবে। বিটিআরসির মহাপরিচালক (তরঙ্গ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদুল আলম জানান, মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে মুঠোফোনের তথ্য স্থানান্তর হয়েছে। এর ফলে ৩০ জুনের মধ্যে নেটওয়ার্কে চালু থাকা সব মুঠোফোনের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘কোন হ্যান্ডসেট চালু থাকবে আর কোনটা বন্ধ হবে তা তিনমাস পরে জানানো হবে। এনইআইআরের মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা যাবে। এনইআইআর প্রযুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধ দমন আরো সহজ হবে পৃষ্ঠা ১১ কলাম ১
মুঠোফোনের বৈধতা এবং অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধের মাধ্যমে রাজস্ব খাতেও সহায়তা হবে।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কার্যক্রম চালু হলে অবৈধ সেট শনাক্ত করা যাবে। গ্রাহকের অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ সেট ব্যবহার করতে পারবেন না। চুরি করা সেট ব্যবহার করা যাবে না। সব মিলিয়ে সরকারের রাজস্ব ও নিরাপত্তা বাড়বে।
বাজার-সংশ্লিষ্ট লোকজনের দাবি অনুযায়ী, দেশে ২৫-৩০ শতাংশ স্মার্টফোন অবৈধভাবে আমদানি করা হয়। এর কারণে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারায় সরকার। বিটিআরসি জানিয়েছে, এনইআইআরের কার্যক্রম ১ জুলাই থেকে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হলে গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও সিম নম্বরের সঙ্গে ব্যবহৃত মুঠোফোনের আইএমইআই সম্পৃক্ত করে নিবন্ধন করা হবে। ১ জুলাই থেকে নতুন যেসব মুঠোফোন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হবে, তা প্রাথমিকভাবে নেটওয়ার্কে সচল করে এনইআইআরের মাধ্যমে বৈধতা যাচাই করা হবে। বৈধ হলে মুঠোফোনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে নেটওয়ার্কে সচল থাকবে। আর যেসব মুঠোফোন বৈধ নয়, সেগুলো সম্পর্কে গ্রাহককে খুদে বার্তা বা এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে। এরপর পরীক্ষাকালে তিন মাসের জন্য নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রাখা হবে। এরপর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেনার আগে করণীয়: মুঠোফোন কেনার আগে করণীয় কী, তা-ও জানিয়েছে বিটিআরসি। সংস্থাটি বলছে, ১ জুলাই থেকে যেকোনো মাধ্যম (বিক্রয়কেন্দ্র, অনলাইন বিক্রয়কেন্দ্র, ই-কমার্স সাইট ইত্যাদি) থেকে মুঠোফোন কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই মুঠোফোনের বৈধতা যাচাই ও রসিদ সংরক্ষণ করতে হবে। বৈধ কি না, তা যাচাইয়ের পদ্ধতি হলো, মুঠোফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে কণউ<ংঢ়ধপব>১৫ ডিজিটের ওগঊও নম্বরটি লিখুন। ১৬০০২ নম্বরে পাঠান। ফিরতি খুদে বার্তায় বৈধতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
বিদেশ থেকে আনলে: বিটিআরসি জানিয়েছে, বিদেশ থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে বৈধভাবে কেনা বা উপহার পাওয়া মুঠোফোন সেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেটওয়ার্কে সচল হবে। এরপর ১০ দিনের মধ্যে অনলাইনে তথ্য/দলিল জমা দিয়ে নিবন্ধন করার জন্য ব্যবহারকারীকে খুদে বার্তা পাঠানো হবে। নিবন্ধন সম্পন্ন করলে মুঠোফোনটি বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। নিবন্ধন না করলে মুঠোফোন বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে না এবং সেগুলো সম্পর্কে গ্রাহককে খুদেবার্তার মাধ্যমে জানিয়ে পরীক্ষার সময়ের জন্য নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রাখা হবে। এরপর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, বিদ্যমান ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে শুল্কবিহীন সর্বোচ্চ দুটি ও শুল্ক দিয়ে আরও ছয়টি মুঠোফোন সঙ্গে নিয়ে আসতে পারেন।
নিবন্ধনের পদ্ধতি: হবরৎ.নঃৎপ.মড়া.নফ ওয়েবসাইটে গিয়ে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করুন। ঝঢ়বপরধষ জবমরংঃৎধঃরড়হ সেকশনে গিয়ে মুঠোফোনের আইএমইআই নম্বরটি দিন। প্রয়োজনীয় নথির ছবি/স্ক্যান করা অনুলিপি (যেমন পাসপোর্টের ভিসা/ ইমিগ্রেশনের তথ্যাদি, ক্রয় রসিদ প্রভৃতি) আপলোড করুন ও সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। মুঠোফোনটি বৈধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে। বৈধ না হলে খুদে বার্তার মাধ্যমে গ্রাহককে জানিয়ে পরীক্ষার সময়ের জন্য নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রাখা হবে। পরীক্ষামূলক সময় শেষ হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহক সেবাকেন্দ্র বা কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের গিয়েও এ বিষয়ক সেবা নেওয়া যাবে।