ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

স্বপ্ন এখন সত্যি: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সাত তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৪:৩৫ অপরাহ্ণ, মে ১০, ২০১৮

উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের মাইলফলক ছুঁতে না ছুঁতেই আরেকটি স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দিল। মহাকাশে স্যাটেলাইট (কৃত্রিম উপগ্রহ) পাঠানোয় বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৫৭তম দেশ। মহাকাশ যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এ এক বিরাট অর্জন। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে স্যাটেলাইটটির নাম রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু-১।

স্যাটেলাইটের গায়েও লাল-সবুজের পটভ‚মিতে খোদাই করা হয়েছে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান। মহান মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণাদায়ী এ স্লোগান বুকে নিয়েই বাংলাদেশের এ স্যাটেলাইটটি আগামী ১৮ বছর ঘুরবে কক্ষপথে। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্কতা দেওয়ার পাশাপাশি সরাসরি সম্প্রচার, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে রাখবে অবদান।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ঐতিহাসিক মুহূর্তের আগে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো অনুষ্ঠান সম্প্রচারের জন্য বিদেশি স্যাটেলাইট ব্যবহার করায় যে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়, ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট চালু হলে তা বেঁচে যাবে। পাশাপাশি দেশের প্রথম এই কৃত্রিম উপগ্রহের বাড়তি সক্ষমতা ভাড়া দিয়ে বিদেশি মুদ্রা আয়ও হবে।
ফ্লোরিডার কেইপ কেনাভেরালের কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে স্থানীয় সময় ১০ মে বিকাল ৪টা ১২ মিনিট থেকে ৬টা ২২ মিনিটের মধ্যে (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ২টা ১২ মিনিট থেকে ৪টা ২২ মিনিট) কক্ষপথে রওনা হওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট।
তিন হাজার ৫০০ কেজি ওজনের জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ফ্যালকন-৯ কক্ষপথের দিকে ছুটছে কেনেডি স্পেস সেন্টারের ঐতিহাসিক লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯-এ থেকে, যেখান থেকে ১৯৬৯ সালে চন্দ্রাভিযানে রওনা হয়েছিল অ্যাপোলো-১১।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মিত হয়েছে ফ্রান্সের তালিস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে। নির্মাণ, পরীক্ষা পর্যালোচনা ও হস্তান্তর শেষে বিশেষ কার্গো বিমানে করে সেটি কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ সাইটে পাঠানো হয়। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য প্রথমে ১৬ ডিসেম্বর তারিখ ঠিক করা হলেও হারিকেন আরমায় ফ্লোরিডায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় তা পিছিয়ে যায়। এরপর ৪ মে উৎক্ষেপণের সম্ভাব্য তারিখ রাখা হয়। কিন্তু এপ্রিলের শেষে এক অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, উৎক্ষেপণের পিছিয়ে গেছে অন্তত ৭ মে পর্যন্ত। আবহওয়া অনুক‚লে না থাকায় সেই তারিখ আবার পিছিয়ে ১০ মে রাখা হয়।
সরকারের আশা, বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ যে ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়, এ উপগ্রহ উৎক্ষেপণের সেই অর্থ সাশ্রয় হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।
বিচ্ছিন্ন দ্বীপ বা দুর্গম পাহাড়ি এলাকা যেখানে ফাইবার অপটিক দিয়ে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া কঠিন, সেসব জায়গায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে খুব সহজেই পৌঁছানো সম্ভব হবে আশা করা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সাত তথ্য

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মহাকাশ যুগে বাংলাদেশ। কৃত্রিম উপগ্রহটি এখন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশের মানুষের। এটি নিয়ে ৭টি তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
স্যাটেলাইটের ধরন
মহাকাশে প্রায় ৫০টি দেশের দুই হাজারের ওপর স্যাটেলাইট বিদ্যমান। এগুলোর মধ্যে রয়েছেন আবহাওয়া স্যাটেলাইট, পর্যবেক্ষক স্যাটেলাইট, ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট ইত্যাদি। তবে বঙ্গবন্ধু-১ হল যোগাযোগ ও সম্প্রচার স্যাটেলাইট।
কী হবে স্যাটেলাইটির কাজ
টিভি চ্যানেলগুলোর স্যাটেলাইট সেবা নিশ্চিত করাই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রধান কাজ। এর সাহায্যে চালু করা যাবে ডিটিএইচ বা ডিরেক্ট টু হোম ডিশ সার্ভিস। এ ছাড়া যেসব জায়গায় অপটিক কেবল বা সাবমেরিন কেবল পৌঁছায়নি সেসব জায়গায় এ স্যাটেলাইটের সাহায্যে নিশ্চিত হতে পারে ইন্টারনেট সংযোগ।
স্যাটেলাইটের ফুটপ্রিন্ট
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার কক্ষপথে। এর ফুটপ্রিন্ট বা কভারেজ হবে ইন্দোনেশিয়া থেকে তাজিকিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত। শক্তিশালী কেইউ ও সি ব্যান্ডের মাধ্যমে এটি সবচেয়ে ভালো কাভার করবে পুরো বাংলাদেশ, সার্কভুক্ত দেশগুলো, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া।
স্থায়িত্ব
১৫ বছরের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে অরবিটাল স্লট কেনা হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু-১-এর স্থায়িত্ব হতে পারে ১৮ বছর পর্যন্ত।
স্যাটেলাইট নির্মাণ
৩.৭ টন ওজনের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটির ডিজাইন এবং তৈরি করেছে ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেস। আর যে রকেট এটাকে মহাকাশে নিয়ে যাচ্ছে সেটি বানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেসএক্স।
নির্মাণ খরচ
শুরুতে বাজেট ধরা হয় ২৯৬৭.৯৫ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ২৭৬৫ কোটি টাকায় এ পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হলো। এর মধ্যে ১৩১৫ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার আর বাকিটা বিদেশি অর্থায়ন।
স্যাটেলাইট অপারেশন
আর্থ স্টেশন থেকে ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্যাটেলাইটটির কক্ষপথে যেতে সময় লাগবে ৮-১১ দিন। আর পুরোপুরি কাজের জন্য প্রস্তুত হবে ৩ মাসের মধ্যে।
এরপর প্রথম ৩ বছর থ্যালাস অ্যালেনিয়ার সহায়তায় এটির দেখভাল করবে বাংলাদেশ। পরে পুরোপুরি বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের হাতেই গাজীপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া আর্থ স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে এটি।

 

 

 
Electronic Paper