করোনায় অশান্ত ইলেকট্রনিকস পণ্যের বাজার
খোলা কাগজ ডেস্ক
🕐 ৪:৪৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২০
দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা। এতে ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাপী হুমকির মুখে পড়তে শুরু করেছে ব্যবসা-বাণিজ্য। এর প্রভাবে অশান্ত হতে শুরু করেছে এমনকি বাংলাদেশের ইলেকট্রনিকস পণ্যের বাজার। এরই মাঝে প্রযুক্তি পণ্যের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। আশঙ্কা আছে চাহিদার অনুপাতে পণ্য সরবরাহের সক্ষমতা নিয়েও।
বাংলাদেশের ইলেকট্রনিকস পণ্যের বাজার বিশেষ করে প্রযুক্তিপণ্য প্রায় পুরোটাই নির্ভরশীল চীনের ওপর। চাইনিজ নববর্ষের ছুটি ও করোনা ভাইরাসের আঘাতে সেই বাজার বন্ধ আছে প্রায় তিন সপ্তাহ। আগামী সপ্তাহে চীনের বিভিন্ন কারখানা খোলার কথা থাকলেও সেখান থেকে কবে নাগাদ নতুন পণ্যের সরবরাহ আসবে তা নিয়ে আছে শঙ্কা। ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে ইলেকট্রনিকস পণ্যের বাজারে। ফেব্রুয়ারি মাস কোনো মতে চলে গেলেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করবে মার্চ থেকে।
এদিকে দেশে ইলেকট্রনিকস পণ্য প্রস্তুতকারী বেশকিছু কারখানা থাকলেও কাঁচামালের জন্য সেগুলো পুরোপুরি নির্ভরশীল চীনের ওপর। কাজেই নতুন পণ্যের চাহিদা মেটানো ও পুরনো পণ্যের সার্ভিসিং নিয়ে চিন্তিত ক্রেতা-বিক্রেতা ও সরবরাহ সংশ্লিষ্ট মহলগুলো।
তারা বলছে, এই মুহূর্তে দেশে পণ্যের যে মজুদ আছে তা দিয়ে এই ফেব্রুয়ারি মাসটা চালানো যাবে। এভাবে চলতে থাকলে আসছে মার্চ থেকেই পণ্যের ঘাটতি চরম আকার লাভ করবে।
সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাওয়ে বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে গিয়ে দেখা যায় বেড়ে গেছে বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্যের দাম। বিক্রেতারা জানান, ইতোমধ্যে র্যাম, হার্ড ডিস্ক, এসএসডি হার্ডডিস্ক, মনিটর, পেনড্রাইভ, রাউটার, মেমরি কার্ডসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম আগের সপ্তাহের চেয়ে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ।
ইউনিভার্সাল কম্পিউটার্স দোকানের সত্ত্বাধিকারী আনিস রহমান বিভিন্ন পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, সবকিছুর দামই বাড়তে শুরু করেছে। যেমন ধরেন, চীনের ৪ জিবি র্যাম ওয়ারেন্টিসহ এগুলোর মূল্য ছিল এক হাজার টাকার মতো, এখন সেগুলো ১৩০০-১৪০০ টাকা।
৩২ জিবি ৩.০ পেনড্রাইভের দাম ছিল ৪০০ টাকা। এখন প্রায় ৬০০ টাকা। হার্ডডিস্ক ৫০০ জিবির দাম ছিল প্রায় এক হাজার টাকা, এখন সেগুলো প্রায় ১৫০০ টাকা। যদি মনিটরে যাই, যে মনিটরের দাম ছিল গত সপ্তাহেও পাঁচ হাজার টাকা, সেগুলো এখন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বাড়তি। সব থেকে বেশি প্রভাব পড়েছে এসএসডি হার্ডডিস্কে। ১২০ জিবি এসএসডি হার্ডডিস্কের দাম ছিল ১৮০০-১৯০০ টাকা, এখন সেগুলো ২৫০০-২৬০০ টাকা।
দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান টগি সার্ভিসেস লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার আবু তৈয়ব বলেন, ইতোমধ্যেই করোনা ইস্যুতে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যাদের আগে থেকে মজুদ ছিল, তারা ভালো করছে। নতুন পণ্য আসা প্রায় বন্ধ। ব্যাংক নতুন করে চীন থেকে মালামাল আনতে এলসি খুলতে দিচ্ছে না। আগে করা এলসিগুলোর মধ্যে খুব কম পণ্যই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বের হয়ে আসছে। মজুদ থাকা পণ্যগুলো শেষ হয়ে গেলে সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।
চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে পণ্য আনা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আবু তৈয়ব বলেন, অনেকে তাইওয়ান থেকে পণ্য আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু সমস্যা আসলে ওই পুরো অঞ্চল জুড়েই। মালয়েশিয়া বা ফিলিপাইন থেকে আনলেও হচ্ছে না, কারণ অনেক কিছুরই শিপমেন্ট হয় সিঙ্গাপুর থেকে। সিঙ্গাপুরে করোনার প্রভাব আছে।
এদিকে মোবাইল বাজারেও করোনার প্রভাব পড়বে বলে জানান বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ট্রানশন বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজওয়ানুল হক। তিনি বলেন, মোবাইল বাজারে করোনার প্রভাব এখনও পড়েনি, তবে পড়বে। চীনের ফ্যাক্টরিগুলো ২৯ তারিখের দিকে খুলবে বলে জানা যাচ্ছে। ফলে উৎপাদন দুই সপ্তাহের মতো পিছিয়ে গেছে। মোবাইলে প্রতি মাসেই শিপমেন্ট লাগে। তবে এর জন্য মোবাইলের দাম বাড়বে বলে মনে হয় না। অনেকেরই যথেষ্ট মজুদ আছে।
এদিকে এ পরিস্থিতিতে মানবিক দিক বিবেচনায় ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল আচরণের আহবান জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, এটা একটা মানবিক বিপর্যয়। আমি সবাইকে আহ্বান জানাব, মানবিক কারণে এই সময়ে যেন সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করেন। পণ্যের দাম যেন তারা বৃদ্ধি না করেন। গ্রাহকদের স্বার্থ যেন তারা দেখেন।