ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মহাকাশে অ্যানাকোন্ডা!

খোলা কাগজ ডেস্ক
🕐 ৫:২৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০১৯

কি? শুনতে বেশ অদ্ভুত ঠেকছে তাই না! মহাকাশে অ্যানাকোন্ডা’র দেখা মিলল! একটা ‘গরু’কে জোরালো নিশ্বাসে দূর থেকে টেনে এনে যে গিলে খাচ্ছে! অ্যানাকোন্ডার ভোজনপর্ব চলল টানা তিন দিন ধরে। তার খাওয়ার সময় চার পাশে ছড়িয়ে, ছিটিয়ে পড়ছে সেই উত্তাপে ঝলসানো গরুটির দেহের বিভিন্ন অংশ। আর তাতে এতটাই আলোয় ভরে উঠেছে মহাকাশ, যা এর আগে দেখা যায়নি কখনও। জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই ঘটনাটার নাম- ‘এটি-২০১৮-কাউ’। যার ডাক নাম- ‘কাউ’ (গরু)।

মহাকাশে অ্যানাকোন্ডার ওই ভোজনপর্ব দেখল নাসার দু’টি টেলিস্কোপ। নিল গেহরেল্স সুইফ্ট অবজারভেটরি ও নিউক্লিয়ার স্পেকট্রোস্কোপিক টেলিস্কোপ অ্যারে (নিউস্টার)। আর এ অ্যানাকোন্ডাটি আদতে একটি অসম্ভব ভারী ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। মহাকাশে ২০১৮ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনা এটি। কাছে এসে পড়া একটি মৃত তারাকে গিলে খাচ্ছে একটি রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোল কৃষ্ণগহ্বর। আর তাতে মহাকাশ এতটাই আলোয় ভরে উঠেছে, যা এর আগে দেখা যায়নি কখনও। টানা তিন দিন ধরে সেই আলো দেখতে পাওয়া গেছে। এই নজরকাড়া ঘটনা চাক্ষুষ করার কথা জানানো হয়েছে গত ১০ জানুয়ারি, সিয়াটলে আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ২৩৩তম বৈঠকে। ঘটনাটা ঘটেছে আমাদের থেকে ২০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে হারকিউলিস নক্ষত্রপুঞ্জে। অভূতপূর্ব এই ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কার্যত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন বিজ্ঞানীরা।

একদল বিজ্ঞানী বলছেন, কাছে এসে পড়া একটি মৃত তারাকে গিলে খাচ্ছে একটি রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। অন্যদের বক্তব্য, না, তা নয়। এটা আদতে একটি সুপারনোভাই। কোনও তারার মৃত্যু দৃশ্য।

এ ব্যাপারে যে দু’টি গবেষণাপত্র নিয়ে এই সপ্তাহে আলোচনা হয়েছে আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির বৈঠকে, তার একটির দুই মূল গবেষকের অন্যতম বাল্টিমোরের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রিসার্চ সায়েন্টিস্ট অ্যামি লিয়েন গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ‘মৃত তারাটির আকার পৃথিবীর মতোই মনে হচ্ছে। আমরা ওই রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলটির ভরও মেপেছি। তা প্রায় একটা বড়সড় গ্যালাক্সির মতো। আমাদের সূর্যের ভরের অন্তত ১০ লক্ষ গুণ। এও দেখেছি, যা স্বাভাবিক, তা হয়নি এই রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলটির ক্ষেত্রে। এত ভারী ব্ল্যাক হোল সাধারণত থাকে কোনও গ্যালাক্সির কেন্দ্রে। কিন্তু এই রাক্ষুসে (সুপার ম্যাসিভ) ব্ল্যাক হোলটি রয়েছে ওই গ্যালাক্সির (‘সিজিসিজি ১৩৭-০৬৮’) কেন্দ্র থেকে অনেকটা দূরে।’ গবেষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘মান্থলি নোটিসেস অফ দ্য রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’র আগামী সংখ্যায় বেরুতে চলেছে।

এ ছাড়া দ্বিতীয় গবেষণাপত্র, যেটি প্রকাশিত হবে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’, সেই গবেষণাপত্রের মূল গবেষক, ইলিনয়ের নর্থ-ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী রাফায়েল্লা মারগুত্তি গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ‘এটা আদতে খুব বড় চেহারার কোনও তারার মৃত্যু-দৃশ্য বা সুপারনোভা। অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছে কোনও তারা ওই বিস্ফোরণের (সুপারনোভা) পর তৈরি করে ব্ল্যাক হোল বা খুব বেশি ঘনত্বের নিউট্রন নক্ষত্র। আমরা বোধহয় সুপারনোভার পর ব্ল্যাক হোল বা নিউট্রন নক্ষত্রের জন্ম-প্রক্রিয়াই চাক্ষুষ করেছি।’

বিস্ফোরণটা সে মাত্রায় ভয়াবহ ছিলো বলেই হয়তো মহাকাশে টানা তিনদিন ধরে উজ্জ্বল আলো পরিলক্ষিত হয়েছে।

 
Electronic Paper