ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রীতিলতার চিঠি

রোকেয়া ডেস্ক
🕐 ৫:৪২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮

আত্মাহুতির আগের রাতে প্রীতিলতা মায়ের উদ্দেশে একটি চিঠি লিখেছিলেন। মৃত্যুর পর মাস্টারদা সূর্য সেন (ব্রিটিশ ভারতের প্রখ্যাত বিপ্লবী সূর্যকুমার সেন) চিঠিটি তার মায়ের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন


তুমি আমায় ডাকছিলে? আমার যেন মনে হলো তুমি আমার শিয়রে বসে কেবলি আমার নাম ধরে ডাকছো, আর তোমার অশ্রু-জলে আমার বক্ষ ভেসে যাচ্ছে। মা, সত্যিই কি তুমি এত কাঁদছো? আমি তোমার ডাকে সাড়া দিতে পারলাম না তুমি আমায় ডেকে ডেকে হয়রান হয়ে চলে গেলে।
স্বপ্নে একবার তোমায় দেখতে চেয়েছিলাম তুমি তোমার আদরের মেয়ের আবদার রক্ষা করতে এসেছিলে! কিন্তু মা, আমি তোমার সঙ্গে একটি কথাও বললাম না। দুচোখ মেলে কেবল তোমার অশ্রুজলই দেখলাম। তোমার চোখের জল মোছাতে এতটুকু চেষ্টা করলাম না।
মা, আমায় তুমি ক্ষমা করো তোমায় বড় ব্যথা দিয়ে গেলাম। তোমাকে এতটুকু ব্যথা দিতেও তো চিরদিন আমার বুকে বেজেছে। তোমাকে দুঃখ দেওয়া আমার ইচ্ছা নয়। আমি স্বদেশ-জননীর চোখের জল মোছাবার জন্য বুকের রক্ত দিতে এসেছি। তুমি আমায় আশীর্বাদ কর, নইলে আমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে না।
একটিবার তোমায় দেখে যেতে পারলাম না! সে জন্য আমার হৃদয়কে ভুল বুঝো না তুমি। তোমার কথা আমি এক মুহূর্তের জন্যও ভুলিনি মা। প্রতিনিয়তই তোমার আশীর্বাদ প্রার্থনা করি। আমার অভাব যে তোমাকে পাগল করে তুলছে, তা আমি জানি। মাগো, আমি শুনেছি, তুমি ঘরের দরজায় বসে সবাইকে ডেকে ডেকে বলছো ‘ওগো তোমরা আমার রানীশূন্য রাজ্য দেখে যাও’। তোমার সেই ছবি আমার চোখের ওপর দিনরাত ভাসছে। তোমার এই কথাগুলো আমার হৃদয়ের প্রতি তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে কান্নার সুর তোলে।
মাগো, তুমি অমন করে কেঁদো না! আমি যে সত্যের জন্য-স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি কি তাতে আনন্দ পাও না? কি করবে মা? দেশ যে পরাধীন! দেশবাসী যে বিদেশির অত্যাচারে জর্জরিত! দেশমাতৃকা যে শৃঙ্খলভারে অবনতা, লাঞ্ছিতা, অবমানিতা! তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে মা? একটি সন্তানকেও কি তুমি মুক্তির জন্য উৎসর্গ করতে পারবে না? তুমি কি কেবলই কাঁদবে? আর কেঁদো না মা। যাওয়ার আগে আর একবার তুমি আমায় স্বপ্নে দেখা দিও। আমি তোমার কাছে জানু পেতে ক্ষমা চাইবো।
আমি যে তোমায় বড় ব্যথা দিয়ে এসেছি মা। ইচ্ছা করে ছুটে গিয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আসি। তুমি আদর করে আমাকে বুকে টেনে নিতে চাইছো, আমি তোমার হাত ছিনিয়ে চলে এসেছি। খাবারের থালা নিয়ে আমায় কত সাধাসাধিই না করেছো আমি পিছন ফিরে চলে গেছি। না, আর পারছি না। ক্ষমা চাওয়া ভিন্ন আর আমার উপায় নেই। আমি তোমাকে দুদিন ধরে সমানে কাঁদিয়েছি। তোমার ক্রন্দন আমাকে এতটুকু টলাতে পারেনি। কি আশ্চর্য মা! তোমার রানী এত নিষ্ঠুর হতে পারলো কি করে? ক্ষমা করো মা; আমায় তুমি ক্ষমা করো!

 
Electronic Paper