পৃথিবীর পথে নাজমুন নাহার
রাশেদ রহমান
🕐 ৫:৪৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮
‘হ্যালো বাংলাদেশ, আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই বাংলাদেশের পতাকা হাতে আমি পা রাখব একশতম দেশ জিম্বাবুয়েতে। বাংলাদেশের পতাকা হাতে সর্বোচ্চ রেকর্ডপ্রাপ্ত দেশে। সবাই থেকো আমাদের এ লাল সবুজ পতাকাতলে। আমি হৃদয়ে ১৬ কোটি মানুষকে নিয়ে পায়ে হেঁটে যাত্রা করব জাম্বিয়ার বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত থেকে জিম্বাবুয়েতে।’
একশতম দেশ ভ্রমণের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এভাবেই উচ্ছ্বাসের কথা বলেছেন নাজমুন নাহার। টাকা জমিয়ে মানুষ সম্পদ গড়ে। নাজমুন নাহার জমানো টাকায় ছুটে যান দেশ থেকে দেশান্তরে। ভ্রমণই তার শখ। এ শখই তাকে নিয়ে গেছে একশটিরও বেশি দেশে।
‘আই ওয়াজ বর্ন টু ট্রাভেল’-কথাটা নাজমুন নাহারের মুখেই মানায়। যেন ভ্রমণ করতেই তার জন্ম। বাংলাদেশের পতাকাধারী প্রথম বিশ্বজয়ী নারী পরিব্রাজক নাজমুন নাহার। জিম্বাবুয়ে সফরের মাধ্যমে দেশ ভ্রমণে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। ১৭ বছর ধরে তিনি বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বেশিরভাগ ভ্রমণেই ছিলেন একা, সঙ্গীহীন।
একজন নারী হিসেবে একাই ১০০টি স্বাধীন দেশ ঘুরে পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন নাজমুন নাহার। যিনি বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করছেন। তার ভ্রমণে তিনি দেশের সংস্কৃতি, প্রকৃতি, দেশের মানুষ সম্পর্কে জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের মানুষকে। ভ্রমণতালিকায় পূর্ব আফ্রিকার জাম্বিয়া ছিল ৯৯তম দেশ। মাস দুয়েক আগে দেশটির লিভিংস্টোন শহর থেকে হেঁটে জিম্বাবুয়ে পৌঁছে একশতম দেশ ঘোরার মাইলফলক ছুঁয়েছেন নাজমুন নাহার।
দুঃসাহসী এ নারী পরিব্রাজকের জন্ম ১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার হামছাদী ইউনিয়নের গঙ্গাপুর গ্রামে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি বাংলাদেশ গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য হন এবং আন্তর্জাতিক অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। সেই সময়ে তিনি ভারতের ভুপালের পাঁচমারিতে যান। এটিই তার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। এ ভ্রমণই তাকে বিশ^ ভ্রমণে উদ্বুদ্ধ করে। ৩ ভাই এবং ৫ বোনের মধ্যে নাজমুন নাহার সবার ছোট। ব্যবসায়ী বাবা মোহাম্মদ আমিন ২০১০ সালে পৃথিবী ছেড়ে গেছেন। মা তাহেরা আমিন। ২০০৬ সালে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য যান সুইডেনে। সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এশিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
একলা চলো রে
অধিকাংশ দেশে একাই ভ্রমণ করেছেন। কোনো দেশে গেলে থাকার জন্য বেছে নেন পর্যটকদের ইয়ুথ হোস্টেল। এসব হোস্টেলেই বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের সঙ্গে পরিচিত হন, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়েন! এভাবে প্রকৃতিকে যেমন জেনেছেন, দেখেছেন, তেমনি ভিন্ন দেশের মানুষগুলোকেও কাছ থেকে অনেক কিছু জানার সুযোগ তার। এখনো অনূঢ়া নাজমুন নাহার তাই একা ভ্রমণ করলেও কখনোই নিজেকে একা মনে করেন না।
মাকে নিয়ে ১৪ দেশ
ব্যবসায়ী বাবা আগেই গত হয়েছেন। তাই পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখে মাকে খুব মনে পড়ত তার! মনে হতো, মাকেও যদি সঙ্গে নিতে পারতেন। সেই অনুভূতি থেকেই মা তাহেরা আমিনকে নিয়ে গেছেন সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতমালা থেকে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন শহরে। ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মাকে সঙ্গে নিয়ে ১৪টি দেশ ভ্রমণ করেছেন!
স্বপ্ন দেখাতে চাই
‘ইনসপিরেশন গ্লোবাল ফাউন্ডেশন’ নামে একটি উদ্যোগের মাধ্যমে স্বপ্ন দেখাতে চান নাজমুন নাহার। বিভিন্ন স্কুল ও অনাথ আশ্রমে গিয়ে বর্ণনা করবেন নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। বললেন, ‘অসহায় শিশুদের মানুষ খাবার দেয়, নতুন জামা দেয় কিন্তু আমি তাদের স্বপ্ন দেখাতে চাই। পৃথিবী দেখার স্বপ্ন, নিজেকে বড় ভাবার স্বপ্ন। আমি ভ্রমণের সময় অনেক মানুষ পেয়েছি, যারা কষ্ট করে বড় হয়েছে। তাদের দৃষ্টান্ত আমি শিশুদের শোনাব।’