ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পুত্রের বেশে কন্যাসন্তান!

তারিক উল ইসলাম
🕐 ৫:৪৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮

তিন কন্যার পর জন্ম নিলো চতুর্থ কন্যা আসিয়া। প্রবল পিতৃতান্ত্রিক আফগান সমাজে পরিবারে পুত্রসন্তান না থাকাকে দেখা হয় অভিশাপ হিসেবে। তাই আসিয়া হলো আসির, পরিবার তাকে গড়ে তুলতে লাগলো ছেলে হিসেবেই। আসিয়া ছেলেদের পোশাক পরে।

একটু বড় হয়ে বোনদের বাড়ির বাইরে আনা-নেওয়া, বাজার করা ইত্যাদি কাজ শুরু করল সে। ফুটবল পায়ে আসিয়া তুখোড়, দৌড়ায়ও যেন ঠিক ছেলেদেরই মতো করে। পরিবার তার পাড়াপড়শিদের কাছে মোটামুটি লুকিয়েই রেখেছে যে আসিয়া প্রকৃতপক্ষে একজন মেয়ে।
পুত্রসন্তান না থাকবার ‘দায়’ মেটাতে কন্যাকে শৈশবকালে এভাবে ছেলে হিসেবে পালন করার আফগান প্রথাটির নাম ‘বাচা পোশ’। আসিয়া একজন বাচা পোশ। ফার্সির আফগান সংস্করণ বা দারি ভাষায় বাচা পোশ অর্থ ‘মেয়ে, যারা ছেলেদের পোশাক পরে’। বাচা পোশ প্রথার ব্যাপারে কোথাও কোথাও এমন লোককথাও প্রচলিত যে, কোনো সন্তানকে বাচা পোশ বানালে গর্ভের পরবর্তী সন্তানের ছেলে হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়! পরবর্তী সময়ে পুত্রসন্তান জন্ম নিলে পূর্বতন বাচা পোশ আবার মেয়ে হিসেবে ফিরে আসে।
আফগান সমাজে নারী-পুরুষের চরম বৈষম্যের কথা হয়তো নতুন করে বলবার কিছু নেই। জাতিসংঘ, সেভ দ্য চিলড্রেন ও থম্পসন-রয়টার্স ফাউন্ডেশনের মতে, নারীদের জন্য আফগানিস্তানই সবচেয়ে বাজে দেশ।
আড়ালে-আবডালে যাই বলা হোক, বাচা পোশকে সমাজে ছেলের মতো করেই দেখা হয়। মেয়েদের প্রতিকূলতাগুলো এদের ভোগ করতে হয় না। আসিয়ার কথাই বলি, অন্য বোনেরা যেখানে সকালে উঠে নাশতা বানাতে মাকে সাহায্য করে, আসিয়া ঘুম থেকে ওঠে সবার পরে। একটা সাধারণ আফগান মেয়ে জিন্স পরতে না পারলেও আসিয়া তা পারে। বুকে ওড়না জড়াবার দায় নেই আসিয়াদের। চাইলে তারা ছেলেদের স্কুলেও পড়তে পারে, পড়তে পারে মেয়েদের স্কুলেও। তারা কারও মুখাপেক্ষী নয়, একাই বাইরে যেতে পারে, খেলতে পারে, চাকরি করতে পারে।
বয়ঃসন্ধি হলেই বাচা পোশ থাকার মেয়াদকাল ফুরোয়। পরিবারই চায়, মেয়ে ফিরে আসুক মেয়ের জীবনে। কিন্তু সবাই ফিরতে চায় না। মানসিকভাবে ছেলে বনাম মেয়ে-দ্বিমুখী সত্তার দ্বন্দ্বে অনেকে বাচা পোশই থেকে যেতে চায় আজীবন।
আজিতা রাফাত, আফগান জাতীয় সংসদে অন্যতম নারী সাংসদ। আফগানিস্তানের বাদগিস প্রদেশ থেকে নির্বাচিত আজিতাও পুত্রসন্তানের অভাবে নিজের কনিষ্ঠ কন্যাকে বানিয়েছেন বাচা পোশ! নিউইয়র্ক টাইমসের জেনি নর্ডবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন-‘আমি জানি আপনি অবাক হচ্ছেন এটা ভেবে যে কী করে একজন মা তার ছোট মেয়ের সঙ্গে এমন কিছু করতে পারে। কিন্তু দেখুন, এটা আফগানিস্তান। এখানে অনেক কিছুই হয় যা আপনাদের মতো পশ্চিমাদের ধারণার বাইরে!’
তালেবান-সোভিয়েত যুদ্ধের পটভূমিতে ২০০৩ সালে নির্মিত হয়েছে ‘ওসামা’ নামে একটি আফগান চলচ্চিত্র। এখানেও গল্পটি একজন মেয়ের, যে কিনা ভগ্নপ্রায় পরিবারের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিল বাচা পোশ।

 
Electronic Paper