ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

স্থাপত্যের ধ্রুবতারা

রোকেয়া ডেস্ক
🕐 ৫:৪৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮

জাহা মোহাম্মদ হাদিদ। যিনি জাহা হাদিদ নামে বিশ্বের এই সাম্প্রতিককালের স্থপতি-তারকা গোষ্ঠীর একমাত্র নারী স্থপতি, ইসলাম ধর্মাবলম্বী এবং প্রিৎস্কার আর্কিটেক্ট পুরস্কারপ্রাপ্ত স্থাপত্যশিল্পী হিসেবে তার বিস্ময়কর সৃজনশীলতার আলো ছড়িয়েছেন।

জন্ম ইরাকের বাগদাদে ১৯৫০ সালের ৩১ অক্টোবরে। জাতীয়তা আরবীয়, নাগরিকত্ব ইরাকি-ব্রিটিশ। লেখাপড়া প্রথমে সুইজারল্যান্ডের বোর্ডিং স্কুলে, পরে বৈরুতের আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে গণিত শাস্ত্রে। তার পরে পিতামাতাসহ ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের রাজনৈতিক ডামাডোলের কারণে বিলেতে বসবাস করতে এসে স্থাপত্যশিল্পে লন্ডনের বিখ্যাত প্রাচীনতম ভিন্নধর্মী স্থাপত্য বিদ্যায়তন আর্কিটেকচারাল অ্যাসোসিয়েশন স্কুল অব আর্কিটেকচারে পড়াশোনা করেন। জাহা হাদিদ স্থপতি হিসেবে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ২০০৪ সালে তিনি প্রিৎস্কার জয় করেন। প্রিৎস্কার আর্কিটেকচার এ বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক পুরস্কার। একে স্থাপত্যকলায় নোবেল বলেও মানা হয়। তিনি এটি জেতেন স্পেনে পানি ও টেকসই উন্নয়ন শিরোনামের একটি প্রদর্শনীর জন্য নির্মিত ব্রিজ প্যাভিলিয়নের জন্য। হাদিদই প্রথম নারী এবং মুসলিম, যিনি এই সম্মানজনক পুরস্কার জিতেছিলেন। এ ছাড়া তিনি ‘রয়েল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস’ থেকেও গোল্ড মেডেল লাভ করেন। লাইপসিশ শহরে বিএমডাব্লিউর ভবনের নকশা করে জার্মান আর্কিটেকচার প্রাইজ জেতেন হাদিদ। তিনি তার নকশায় অফিস কমপ্লেক্স আর উৎপাদন স্থলের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে সবাইকে চমকে দেন।
তিনি হার্ভার্ডে শিক্ষকতা করেছেন, এ ছাড়াও শিক্ষকতা করেন শিকাগোর স্কুল অব আর্কিটেকচারে, হ্যামবুর্গের হ্যাকশুয়েলে ফুয়ের বিলডেনডে কুইসটে, ওয়াইহো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে, ভিয়েনার ইউনিভার্সিটি অব ফাইন আর্টসসহ আরও অনেক নামিদামি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। পড়াশোনা শেষে কিছুদিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও ১৯৮০ সালে নিজেই একটি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। শুরুতে হাদিদ যে ধরনের স্থাপনার কথা বলতেন সেগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে মনে করা হতো। তবে সে হিসাব পাল্টে দেয় হাদিদের চিন্তার প্রথম ফসলটি। জার্মানির ভাইল আম রাইন শহরে অবস্থিত আসবাবপত্র প্রস্তুতকারক ভিটরার দমকল অফিসটিই হাদিদকে আলোচনায় নিয়ে আসে। তার নানা কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থাপনাগুলো হচ্ছে- রোমের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি আর্ট, হংকংয়ের দ্য পিক ক্লাব, কার্ডিফ বে অপেরা হাউস, সুইজারল্যান্ডের নিউ সিটি ক্যাসিনো অব ব্যাসেল, অস্ট্রিয়ার ব্রিগসেল স্কি জাম্প, জার্মানির বিএমডব্লিউ সেন্ট্রাল বিল্ডিং, আমেরিকার কনটেম্পরারি আর্টস সেন্টার অন্যতম। লন্ডনের মিলেনিয়াম ডোমে মাইন্ড জোনের মতো উঁচুমানের ইন্টেরিয়র ডিজাইন তিনি করেন। ফ্লুইড ফার্নিচার সৃষ্টি করা এবং জেডকার নামক হাইড্রোজেন কার তারই নকশায় তৈরি।
২০০৭ সালে ইতালির আসবাবপত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বি অ্যান্ড বি ইতালিয়ার ফার্নিচারেরও তিনি নকশা করেন। ২০০৯ সালে তিনি ল্যাকোসটির কাপড় নকশায় অনবদ্য অবদান রাখেন। পিতলের ট্রাই ফ্লো-তারই সহযোগিতায় বাস্তবতা লাভ করে। লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত তার জাহা হাদিদ আর্কিটেকটসে ৩০০-এর বেশি কর্মী কাজ করছেন। বিশ্বের ৪৪টি দেশে ৯৫০টির মতো প্রকল্পে তিনি কাজ করেছেন। বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের সেরা ১০০ ক্ষমতাশালী নারীর তালিকায় নাম আছে জাহা হাদিদের। ২০০৯ সালে তিনি বিবিসির রেডিও সংবাদভিত্তিক অনুষ্ঠান টুডের অতিথি সম্পাদক হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছেন এমন কিছু কাজের মধ্যে একটি জাহাজ আকৃতির হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির একটি ভবন। সেখানে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব ডিজাইন’ বিভাগটি অবস্থিত। হংকং যে দিন দিন এশিয়ায় ডিজাইন শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে, ভবনটির এরকম নকশার মাধ্যমে সেটাই নাকি তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া ঢেউ খেলানো আজারবাইজানের ‘হায়দার আলিয়েভ সংস্কৃতি কেন্দ্রটি যে কাউকে চমকে দেবে। তার নকশায় বিস্ময়ে দম বন্ধ করে দেওয়ার মতো ভবন রয়েছে ইতালিতে। সে ভবনের বারান্দা ঝুলছে ২ হাজার ২৭৫ মিটার উঁচুতে। ২০১৬ সালের মার্চের ৩১ তারিখে এই স্থাপত্য জাদুকর মৃত্যুবরণ করেন।

 
Electronic Paper