ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাংলা চলচ্চিত্রের বিস্মৃত বনলতা

সাইফ-উদ-দৌলা রুমী
🕐 ১২:৪৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২১

বাংলা চলচ্চিত্রের বিস্মৃত বনলতা

‘আয় রে মেঘ আয় রে, পরদেশী মেঘ রে, আর কোথা যাসনে, বন্ধু ঘুমিয়ে আছে দে ছায়া তারে’। ‘দি রেইন’ সিনেমার এ গান শুনলে দর্শকের স্মৃতিতে এখনো ভেসে ওঠে অলিভিয়ার নামটি। অবশ্য সেটা সত্তর দশকের দর্শকদের মনে। এ প্রজন্মের অনেকেই তা শুনেনি। সত্তরের দশকে পর্দা কাঁপানো এই নায়িকার পুরো নাম অলিভিয়া গোমেজ। তাকে বলা হতো বাংলা চলচ্চিত্রের বনলতা সেন। সত্যি নাটোরের বনলতা সেনের মতোই ছিল তার চোখ জোড়া। বাংলা চলচ্চিত্রের বিস্মৃত এই বনলতাকে নিয়ে লিখেছেন সাইফ-উদ-দৌলা রুমী

পারিবারিক জীবন
খ্রিস্টান মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে অলিভিয়ার জন্ম ১৯৫৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের করাচিতে। পিতামাতার আদি নিবাস ভারতের গোয়াতে। দেশভাগের পর তার পরিবার পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসে। করাচি থেকে ঢাকায় এসে তারা বসবাস শুরু করেন মগবাজারের ইস্পাহানি গলিতে। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে বড় বোন থাকতেন কলকাতায়, যিনি ২০১১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। মেজো বোন অডিট ছিলেন কেবিন ক্রু। ছোট বোন অলকা ছিলেন কানাডায়। আর বাবা কাজ করতেন দৈনিক অবজার্ভার পত্রিকার রিডিং সেকশনে। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ালেখা করা অলিভিয়া গোমেজ মাত্র ১৩ অথবা ১৪ বছর বয়স থেকেই মডেলিং করা শুরু করেন। জীবিকার খাতিরে তিনি হোটেল পূর্বাণীতে রিসিপশনিস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন কিছুদিন। সে সময় বেশকিছু বিজ্ঞাপনে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল তার। হোটেলে চাকরিরত অবস্থায়ই তার সঙ্গে দেখা হয় চলচ্চিত্র নির্মাতা এস এম শফির, যাকে তিনি ১৯৭২ সালে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। তখনই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

চলচ্চিত্রে আগমন
১৯৭২ সালে চিত্র নির্মাতা এস এম শফির ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’ ছবির হাত ধরে নায়িকা অলিভিয়ার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। সিনেমায় অলিভিয়ার শুরুটাই ছিল নাটকীয়। জহির রায়হান তখন ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নির্মাণের কথা ভাবছেন। চিত্রামোদী মহলের ধারণা জহিরের এ ছবিতে তার শ্যালিকা ববিতাই নায়িকা হবেন। একদিন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জহির তার পরের ছবির নায়িকা অলিভিয়ার সঙ্গে গণমাধ্যমের পরিচয় করিয়ে দিলেন। এটা সত্তর সালের কথা। একে তো জহির রায়হানের মতো পরিচালক, তার ওপর আন্তর্জাতিক বাজারের উদ্দেশ্যে বহু ভাষায় নির্মিতব্য ছবির নায়িকা নির্বাচিত হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। ফলে অলিভিয়া সম্পর্কে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন বিনোদন সাংবাদিকরা। কয়েক দিন বাদেই আবার ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ থেকে বাদ পড়েন অলিভিয়া। এলেন যথারীতি ববিতা। প্রথম ছবি থেকে এই ইন আর আউটের ব্যাপারটা ছিল সত্যিই আলোচনার মতো বিষয়। এই সুবাদে তার পরিচিতির পরিধিটা বাড়ল। দর্শক তার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে। প্রথম ছবি নিয়ে এই কা- অলিভিয়ার জন্য শাপে বরই হয়েছিল। ততদিনে চলচ্চিত্রাঙ্গনের কারও কারও সঙ্গে আলাপ-পরিচয় হয় তার। আর নিজের ছবি থেকে বাদ দেওয়া নবাগত অলিভিয়ার জন্য ছিল জহিরের শুভেচ্ছা ‘আই উইশ হার এ ব্রাইট ফিউচার’।

‘লেট দেয়ার বি লাইট’ প্রসঙ্গে অলিভিয়ার স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, ‘ছবিটি সর্বাঙ্গ সুন্দর করার জন্য জহির সাহেব সংশ্লিষ্ট সবাইকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে আলাপ করতেন। নানা নির্দেশ দিতেন এবং আমাদের রিহার্সালও তার বাড়িতেই চলতে থাকে।’ তার মতে, তার আবিষ্কারক জহির রায়হান একজন ‘খাঁটি শিল্পী’ এবং ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ তার মনে শিল্পীর অনুভূতি সঞ্চারে সহায়তা করেছে।

সত্তরের দশকে তিনি বেশ আলোচিত ও বিতর্কিত ছিলেন। রোমান্টিক, সামাজিক, ফ্যান্টাসি সব ধরনের সিনেমায় তাকে দেখা যেত। ওই আমলে তিনি বেশ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। এর ফলে নামের সঙ্গে আবেদনময়ী কিংবা গ্লামারাস শব্দগুলো যোগ হতো প্রায়ই। প্রায় ৫৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন জননন্দিত এই অভিনেত্রী। পোশাকি, ফ্যান্টাসি এবং সামাজিক, সব ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং গ্লামার নায়িকা হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পান তিনি। নায়ক ওয়াসিমের সঙ্গে তার জুটি আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া এই জুটির ‘দ্য রেইন’ ছবিটি দেশ-বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগায়। অলিভিয়ার স্বামী এস এম শফি তার গ্লামার এবং যৌন আবেদনকে ব্যবহার করতে কার্পণ্য করেননি। তবে অলিভিয়া শক্তিশালী অভিনয়ের পরিচয় দেন রাজ্জাকের বিপরীতে ‘জাদুর বাঁশি’ ছবিতে। ববিতার পর অলিভিয়া ছিলেন একমাত্র নায়িকা যিনি তখন কলকাতার ছবিতে অভিনয় করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। ছবির নাম ‘বহ্নিশিখা’। এ ছবির নায়ক ছিলেন উত্তম কুমার।

দর্শকপ্রিয়তা
১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দি রেইন’ ছবিটি দেশে-বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগায়। ‘আয় রে মেঘ আয় রে’ গানটি অলিভিয়াকে খ্যাতির শীর্ষে তুলে দেয়। ছবিটির সংগীত পরিচালনা করেছিলেন প্রয়াত নায়ক জাফর ইকবালের ভাই আনোয়ার পারভেজ। ছবিটিতে আরও অভিনয় করেছিলেন রোজী সামাদ ও মেহফুজ। এই সময়েই লাক্সের মডেল হওয়ার মতো প্রেস্টিজিয়াস কাজও করেন অলিভিয়া। এর আগেই ১৯৭৩ সালে তিনি কাজ করেন ‘মাসুদ রানা’ সিনেমায়। মুম্বাই ও পাশ্চাত্যের ধাঁচে নির্মিত এ সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ‘ও রানা ও সোনা’ এখনো বাংলা সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম আবেদনময় গানগুলোর একটি।

১৯৭৬ সালে ‘সেয়ানা’ চলচ্চিত্রে খোলা পিঠে ‘সেয়ানা অলিভিয়া’ লিখে হাজির হন তিনি। সৃষ্টি হয় নতুন বিতর্ক। যদিও বিতর্কের সঙ্গে বেশ সখ্যতা ছিল অলিভিয়ার। চরিত্রের প্রয়োজনে যেকোনো পোশাকে হাজির হতে কখনই তিনি আপত্তি জানাননি। অসংখ্য সিনেমা আছে, যেখানে সেন্সর বোর্ডের কাঁচি চলেছে অলিভিয়া অভিনীত অনেক দৃশ্যে। এমন একটি সিনেমা হলো ‘রাস্তার রাজা’। মাহমুদ কলির সঙ্গে অলিভিয়ার অসংখ্য দৃশ্য সেন্সর বোর্ড কেটে ফেলতে ‘বাধ্য হয়েছে’।

গণমাধ্যমও তাকে সাহসিকতা নয়, বরং যৌনতার প্রতীক হিসেবে দেখাতেই বেশি পছন্দ করত। তবে অলিভিয়া নিজেও ক্যারিয়ার নিয়ে খামখেয়ালি ছিলেন। একটু মনোযোগী হলেই হয়তো তাকে বাংলাদেশ কিংবদন্তিদের কাতারে রাখত। তিনি অভিনয়ে কতটা দক্ষ সেটা স্বয়ং নায়ক রাজ রাজ্জাকের সঙ্গে তার ‘যাদুর বাঁশি’ দেখলেই বোঝা যায়। সত্তরের দশকে চলচ্চিত্রে আসা জনপ্রিয় নায়িকাদের মধ্যে অলিভিয়া ছিলেন অন্যতম। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের রক্ষণশীল বৈশিষ্ট্যের বাইরে অভিনয় করে অনেক সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি, হয়েছেন অনেক সমালোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুও। চরিত্রের প্রয়োজনে যেকোনো পোশাকে সাজতে তিনি কখনো অস্বস্তি বোধ করেননি। ‘বাহাদুর’ ছবিতে বেশ খোলামেলা থাকার কারণে তাকে অনেক বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে। তার কাজের ধরনে ছিল সাহস, সাচ্ছন্দ্য এবং সফলতা। চরিত্রের দরকারে তিনি সাহসী ছিলেন; সামাজিক, ফ্যান্টাসি, রোমান্টিক- সব ধরনের ছবিই তিনি করে গেছেন।

অভিনীত চলচ্চিত্র
ছন্দ হারিয়ে গেল (১৯৭২), জীবন সঙ্গীত, দূর থেকে বলছি, টাকার খেলা (১৯৭৪), মাসুদ রানা (১৯৭৪), সেয়ানা (১৯৭৬), দ্য রেইন (১৯৭৬), বাহাদুর (১৯৭৬), বহ্নিশিখা (১৯৭৬), তীর ভাঙা ঢেউ (১৯৭৬), শাপমুক্তি (১৯৭৬), আদালত (১৯৭৭), যাদুর বাঁশি (১৯৭৭), আগুনের আলো, পাগলা রাজা, শীষ নাগ, চন্দ্রলেখা, লুটেরা, কুয়াশা (১৯৭৭), শ্রীমতী ৪২০ (১৯৭৮), একালের নায়ক (১৯৭৮), বেদ্বীন (১৯৮০), ডার্লিং (১৯৮২), টক্কর (১৯৮৩), হিম্মতওয়ালী (১৯৮৪), লাল মেমসাহেব (১৯৮৪), কালা খুন, আগুন পানি, রাস্তার রাজা, শাহজাদী গুলবাহার, বন্ধু, তকদিরের খেলা, বুলবুল এ বাগদাদ, লাখে একটা, হাতকড়া (১৯৯৪), দুশমনি (১৯৯৫), শপথ নিলাম, সতীনাথ কন্যা, নাগ-নাগিনী, জংলি রানী ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার মুক্তি না পাওয়া দুটি সিনেমা হলো ‘মেলট্রেন’ এবং ‘প্রেম তুই সর্বনাশী’।

উত্তম কুমারের সঙ্গে অভিনয়
ববিতার পর অলিভিয়া ছিলেন একমাত্র নায়িকা যিনি তখন কলকাতার ছবিতে অভিনয় করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। ছবির নাম ‘বহ্নিশিখা’। এ ছবির নায়ক ছিলেন উত্তম কুমার। ১৯৭৬ সালের সিনেমা ‘বহ্নিশিখা’। নীহাররঞ্জন গুপ্তের গল্প অবলম্বনে নির্মিত সেই সিনেমায় উত্তম কুমারের সঙ্গে আরও ছিলেন সুপ্রিয়া দেবী ও রঞ্জিত মল্লিক। সিনেমায় উত্তমের নায়িকা ছিলেন অলিভিয়া, বাংলাদেশের মেয়ে। সেবারই প্রথম ও শেষবারের মতো কোনো বাংলাদেশি নায়িকার বিপরীতে কাজ করেন মহানায়ক উত্তম কুমার।

যেমন আছেন এখন
প্রথম স্বামী এস এম শফির মৃত্যুর পর তিনি শোকাহত হয়ে চলচ্চিত্র জগৎ থেকে বেরিয়ে আসেন। ১৯৯৫ সালে ‘দুশমনি’ ছবিতেই তাকে শেষবারের মতো দেখা যায়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গেছেন, কাছের মানুষদের সঙ্গেই আনাগোনা চলে শুধু। পরে তিনি বিয়ে করেন ফতুল্লা মুনলাইট টেক্সটাইল মিলের কর্ণধার হাসানকে। বর্তমানে বনানীর ডিওএইচএসে বাস করছেন অলিভিয়া। পরিবার নিয়ে সুখে জীবনযাপন করছেন সেখানে। তার ঘনিষ্ঠদের মধ্যে অন্যতম অভিনেত্রী ববিতা বলেন, ‘আমার সঙ্গে প্রায়ই দেখা হয় তার। এখনো আগের মতোই হাসিখুশি আছে সে। স্বামী-সংসার নিয়ে সুখেই কাটছে তার জীবন। অভিনেত্রী হিসেবে যেমন অসাধারণ, বাস্তবেও তেমনি অসাধারণ ভালো মনের মেয়ে অলিভিয়া।’ কোনো কিছুরই অভাব নেই। হয়তো আক্ষেপ আছে, চলচ্চিত্রাঙ্গনের কেউই যে তার খবর নেয় না!

মাসুদ রানা চলচ্চিত্র
মাসুদ রানা ১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত গোয়েন্দা অপরাধ, মারপিটধর্মী রহস্য চলচ্চিত্র। মাসুদ রানা মূলত কাজী আনোয়ার হোসেনের সৃষ্টি করা একটি কাল্পনিক চরিত্র। ১৯৬৬ সাল থেকে শুরু করে সেবা প্রকাশনীর ব্যানারে প্রকাশিত মাসুদ রানা সিরিজে এই চরিত্রকে নিয়ে চার শতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে। মাসুদ রানা সিরিজের বিস্মরণ বইয়ের কাহিনি অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন অভিনেতা মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানা। এটিই সোহেল রানা অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। কাজী আনোয়ার হোসেন এ চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৭৪ সালে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতা হিসেবে বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন। চলচ্চিত্রে মাসুদ রানা অভিনয় করেন সোহেল রানা নিজেই। তার বিপরীতে ছিলেন অলিভিয়া ও কবরী। এছাড়াও অভিনয় করেন গোলাম মোস্তফা, খলিল, ফতেহ লোহানী এবং রাজ্জাক ছিলেন অতিথি শিল্পী।

চলচ্চিত্রের কাহিনি ছিল এমন- শ্রীলংকার ক্যান্ডিতে বেড়াতে যান মাসুদ রানা। সেখানে হোটেল মালিক থিরুর সঙ্গে হয় বন্ধুত্ব। তার হোটেলের বারে বেয়াড়া এক খদ্দেরের সঙ্গে হাতাহাতি হওয়ার পর সেই খদ্দের আহত হয়। ফলে তার বদলে ফাইটার হিসাবে নামতে হয় মাসুদ রানাকে।
মাসুদ রানা চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা ও সুরারোপ করেন আজাদ রহমান। গানে কণ্ঠ দেন সাবিনা ইয়াসমিন, আঞ্জুমান আরা বেগম, খুরশিদ আলম, সেলিনা আজাদ। ‘মনেরও রঙে রাঙাব, বনেরও ঘুম ভাঙাব, সাগর, পাহাড়, সবাই যে কইবে কথা’ গানটি দর্শকদের মনে খুব দ্রুত জায়গা করে নেয়।

চলচ্চিত্র ছাড়ার কারণ
১৯৯৫ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এস এম শফি মারা গেলে অলিভিয়া শোকাহত হয়ে চলচ্চিত্রের জগৎ ত্যাগ করেন। এরপর আর তাকে পর্দার সামনে আসতে দেখা যায়নি। একবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘ফিল্মে যোগ দিয়েছিলাম নেহায়েত শখের বশে। প্রায় ৫৩টির মতো ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছি। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম এস এম শফিকে। যদিও আমাদের সন্তানাদি ছিল না, তবুও সুখী হতে পেরেছিলাম। স্বামীর মৃত্যুতে আমি ভেঙে পড়ি, এরপর শোকে একদিন ফিল্ম জগৎ ছেড়ে দিলাম। অলিভিয়াই ছিলেন ববিতার পর একমাত্র নায়িকা, যিনি সে সময়ে কলকাতায় অভিনয়ের সৌভাগ্য অর্জন করেন। কিন্তু রোজিনা ও অঞ্জু ঘোষের চলচ্চিত্রে আগমন অলিভিয়ার সাম্রাজ্যে যেন পতন নিয়ে আসে। খুব দ্রুতই ‘রাজমহল’ (১৯৭৯) দিয়ে রোজিনা এবং ‘সওদাগর’ (১৯৮২) দিয়ে অঞ্জু ঘোষ চলচ্চিত্রের বাজার দখল করে নেন। সেখানে অলিভিয়া ক্রমেই তার শক্ত অবস্থান হারাতে শুরু করেন। একসময় জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা এই অভিনেত্রী চাইলেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের একজন কিংবদন্তি হয়ে উঠতে পারতেন। কিন্তু তিনি ক্যারিয়ারের প্রতি কিছুটা খামখেয়ালি গোছের ছিলেন। সত্তরের দশকের উজ্জ্বল নক্ষত্র হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই হয়তো তাকে চেনেন না।

 
Electronic Paper